প্রথম পাতা
ইসি’র নির্দেশনা অসাংবিধানিক
শহীদুল্লাহ ফরায়জী
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবারদ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন- সংবিধান, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ববহির্ভূত নির্দেশ দিয়েছেন যা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ ও বেআইনি নির্বাচন কমিশন মৌলিক অধিকার হরণের কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। এই ধরনের নির্দেশ বিস্ফোরক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়ে সংবিধানের অন্তর্নিহিত দর্শন উপেক্ষা করতে পারে না। অথচ নির্বাচন কমিশন শপথ গ্রহণ করেছে সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য। শুধু জরুরি অবস্থা জারির সময় সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২ ধারা সমূহের কতিপয় বিধান অর্থাৎ মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যায়। এটা সংবিধানের অগণতান্ত্রিক বিধান, যা ৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ছিল না। পরবর্তীতে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ১৪১-এর ক অনুচ্ছেদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় নাই। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই মৌলিক অধিকার স্থগিতকরণের কোনো কর্তৃপক্ষ প্রজাতন্ত্রের নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে পারে এমন কোনো সভা-সমাবেশ বা রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার ইসি’র উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান নির্দেশনাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন- মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সভা- সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের কোনো অধিকার সংরক্ষণ করেন না।
‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। যদি-
ক) নাগরিকদের মতো ধর্মীয়, সামাজিক এবং সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়,
খ) উহা ধর্ম-গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য গঠিত হয়,
গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়, তাহলে সংগঠন বা সংঘ করার অধিকার থাকিবে না’। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করা দু’টোই সাংবিধানিক অধিকার। কোনো সাংবিধানিক অধিকারকে নির্বাচন কমিশন বাধাগ্রস্ত করতে পারে না, স্থগিত করতে পারে না বা বাতিল করতে পারে না। সংবিধানের নির্দেশনা নিরাপদ করতে হবে, সংরক্ষিত করতে হবে।
চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা প্রশ্নে সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ১) ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চয়তাদান করা হলো,
(২) রাষ্ট্রে নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা এবং নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি, অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের ধারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে
ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার,
খ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইলো’।
সুতরাং গণতান্ত্রিক মতাদর্শ প্রচারে রাষ্ট্রের কোনো যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ নেই। এসব সাংবিধানিক অধিকার যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার প্রয়োগ করবে। এতে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের সময় চিন্তার অভিব্যক্তি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা স্থগিত থাকবে, এটা আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কল্পনাও করা যায় না। তা ছাড়া বিদ্যমান সংবিধান তা অনুমোদনও দেয় না।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন ৭ই জানুয়ারি ধার্য করা রয়েছে। ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। ১৮ই ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত নির্বাচনী কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটারগণ ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে এরূপ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সকলকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়। এমতাবস্থায় ১৮ই ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সকলকে বিরত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো’।
প্রশ্ন হলো- নির্বাচনের সময় নাগরিকের সভা-সমাবেশ বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা স্থগিত রাখার কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ থেকে বিরত রাখার অনুরোধ নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব নয়।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় এবং ১১৯ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের অধীন, নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন ছাড়া অন্য কোনো এখতিয়ার কমিশনের নেই। এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়, ১% ভোট হলেও নির্বাচন হবে, নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের অতিকথনে ভোটারগণ আরও নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
প্রতিযোগিতাবিহীন নির্বাচন, জনগণের সম্মতি প্রদানের অনুপযোগী নির্বাচন, একতরফা নির্বাচন বা নির্বাচনী নাটকের বিরুদ্ধে সমাবেশ বা বক্তব্য প্রদান নাগরিকদের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক কর্তব্য। গণতন্ত্র বা ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই কেউ স্তব্ধ করতে পারে না। অন্তহীন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রেখে নাগরিকদের সমাবেশ বন্ধ করার নির্দেশনা কোনোক্রমে গ্রহণীয় নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা অংশগ্রহণ না করার প্রশ্নে দু’জনের সমান অবস্থান ও সুযোগ সংবিধান নিশ্চিত করেছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার অর্থহীন হয়ে যাবে যদি মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখা হয়।
নির্বাচন কমিশন সংবিধানের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান, কোনোক্রমেই
প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতা বা কর্তৃত্বকে খর্ব করতে পারবে না। আরও মনে রাখা প্রয়োজন, নির্বাচনের সময়ে নির্বাচন কমিশন সরকারের বিকল্প নয়, এই সময়ে প্রজাতন্ত্রের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ বিলুপ্ত হয়ে যায় না।
মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সংবিধানে যে সব ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে, তা যদি কোনো বিধি লঙ্ঘন করে তাহলে তা বাতিল করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে। সুতরাং অবিবেচনাপ্রসূত ও সংবিধান বহির্ভূত নির্দেশ ইসিকে দ্রুত প্রত্যাহার করে সংবিধানের প্রতি আনুগত্যকে নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: গীতিকবি ও সংবিধান বিশ্লেষক
[email protected]
এবারে যা হচ্ছে তাকে নির্বাচন বলে কে ? দুনিয়ার কেউই এই ডামি নির্বাচনকে নির্বাচন বলবে না। পুলিশ আর আদালত ব্যাবহার করে বিরোধীদলের নেতা কর্মীদের শারীরিক মানসিক অত্যাচার করে, সবাইকে জেলে ঢুকিয়ে আওয়ামীলীগ নিজেরা নিজেরা সিট ভাগ করে নিচ্ছে। এই নির্বাচনের ফল দুনিয়ার কেওই মানবে না। আবার ৫ বছরের জন্যে তাদেরকে গুম, খুনের লাইসেন্স দুনিয়ার কেওই দিবে না।
সরকার ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের কথা বার্তা আর ভাড়ায় ওয়াজ মাহফিল করতে যাওয়া আলেমদের কথাবার্তা একই।অর্থাৎ তাদের সুবিধা গুলো বলা।
জ্বালাও পোড়াও সহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের। কিন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না তারা দেশের সম্পদ ধ্বংস করছেন কোন অবস্থাতেই কোন দল বা ব্যক্তির অন্যের সম্পদ ধ্বংস করার অধিকার নাই। শুধু সংবিধানের এক দিক ব্যাখ্যার চেয়ে সব দিক আলোচনা করে সমালোচনা করা উচিত আমাদের দেশের জ্ঞানী গুণীজনের।