খেলা
মিরপুরে ইতিহাস বদলের সুযোগ
স্পোর্টস রিপোর্টার
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার
দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়! সামনে ছিল সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। কিন্তু পরের ম্যাচে হেরে সেই সুযোগ হয় হাতছাড়া। এবার ঘরের মাঠে আরো একটি সুযোগ টাইগারদের। টেস্ট ক্রিকেটের আরেক পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডকে মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে হারাতে পারলে বদলে যাবে ইতিহাস। যদিও দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও আফগাস্তিানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু কিউদের বিপক্ষে জিতলে সেটি সত্যি সত্যি ইতিহাসে জায়গা করে নিবে। গেল বছর কিউইদের মাটিতেই সুযোগ এসেছিল এমন ইতিহাস গড়ার। মাউন্ট মঙ্গানুইতে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতলেও পরেরটিতে হেরে যায় দল। এবার নিজেদের দেশ বলে হয়তো আত্মবিশ্বাসটা প্রবল।
তবে দুই ম্যাচের সিরিজে একটিতে জয় আত্মবিশ্বাস বাড়ালেও লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয় । এই বাস্তবতা খুব ভালো করেই জানেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। যে কারণে প্রথম ম্যাচে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাকি কাজটা মিরপুরে সারতে চান টাইগার অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘একটি ম্যাচ এখনও বাকি। অর্ধেক কাজ হয়েছে মাত্র। এমন নয় যে ওখানে (মিরপুরে) যাবো আর জিতে যাবো। আবারও ৫টি দিন কষ্ট করা লাগবে। চেষ্টা করবো, পরের ম্যাচে এখান থেকে আরও উন্নতি করে কীভাবে জিততে পারি।’
গতকাল সকালে মিরপুর মাঠে অনুশীলন করে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড দল। সকালে কিউইদের গোটা দলই হাজির হয় অনুশীলনে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা ঘাম ঝরায় অনুশীলনে। প্রথম ম্যাচে হার তাদের জন্য যে মেনে নেয়া ভীষণ কষ্টকর। অন্যদিকে ফুরফুরে মেজাজে টাইগাররা নিজেদের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে। শেষ বিকালে ফিল্ডিং অনুশীলনে জোর দেয় বাংলাদেশ দল। কারণ সিলেটে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং ছিল গড়পতা। ম্যাচের দুই ইনিংসেই ক্যাচ ফেলেছে শান্তর দল। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়াসনের তুলে দেয়া দুটি ক্যাচ না ছাড়লে তিনি সেঞ্চুরি করতে পারতেন না।
টেস্টে বাংলাদেশ দুই যুগেও নিজেদের দাপট দেখাতে পারেনি। ধরে রাখতে পারেনি জয়ের ধারাবাহিকতাও। দেশের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের মুহূর্ত আসে ২০০৫ এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপর ৪ বছরের অপেক্ষা। ২০০৯ এ ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। সেবার দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হারিয়ে প্রথমবার দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা। বিদেশের মাটিতে সব মিলিয়ে ৩২ সিরিজের মধ্যে জয় এসেছে দুটিতে। যার সবশেষটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২১ এ এক ম্যাচের সিরিজে। অন্যদিকে দেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৩৯ সিরিজে জয়ের সংখ্যা ৬টি। সবশেষ দেশে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জয় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮তে। এরপর অবশ্য দেশের মাটিতে শেষ দুটি সিরিজ জয় আসে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে সেখানে ছিল একটি করে ম্যাচ।
টেস্টেও বাংলাদেশের প্রধান দুর্বলতার নাম ব্যাটিং। যেখানে বাংলাদেশ কখনোই ধারাবাহিকতার পরিচয় দিতে পারেনি। এসনকি সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জিতলেও ব্যাটিং নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে মাহমুদুল হাসান জয়ের ৮৬ রান ছিল দলের একমাত্র ফিফটি। বাকিরা সেট হয়ে আউট হয়ে যান ফিফটির আগেই। ৩১০ রান তুলতে তারা হারায় সবকটি উইকেট। অন্যদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে আসে দলের পক্ষে একমাত্র সেঞ্চুরি। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম ও মেহেদী হাসান মিরাজ ফিফটি না হাঁকালে হয়তো বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেয়া সম্ভব হতো না। ব্যাটিংয়ে দলীয় অবদান একেবারেই কম। দুই একজনের ওপর নির্ভর করে আর বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের অসাধারণ বোলিংয়ে জয়ের দেখা মিলেছে সিলেটে। মিরপুরেও থাকছে ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যা উৎরাতে পারলে আর নিজেদের সেরা ব্যাটিংটা করা গেলে হয়তো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে জিতে ইতিহাস বদলানো সম্ভব।
এই সিরিজ দিয়েই টেস্টে চ্যাম্পিয়ানশিপের তৃতীয় চক্রে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম দুটি চক্রে টাইগারদের টেস্টে যে ফলাফল ছিল তা নিয়ে হয়েছে কঠোর আলোচনা-সমালোচনা। তবে এবার শুরুতেই নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে নতুন কিছুর আশায় দল।