খেলা
স্বর্ণাকে দিয়ে প্রোটিয়া ব্যাটারদের জন্য যে ফাঁদ পাতেন জ্যোতি
স্পোর্টস ডেস্ক
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার
এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটা দারুণ এক জয় দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। রোববার টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়া নারী দলকে ১৩ রানে হারায় নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। এটা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যেকোনো সংস্করণে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের প্রথম জয়। আর টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টাইগ্রেসরা জয় দেখলো ১১ বছর পর। এই ঐতিহাসিক জয়ের দিনে বল হাতে আলাদা করে নজর কেড়েছেন লেগ স্পিনার স্বর্ণা খাতুন। ১৮তম ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি।
তবে স্বর্ণা টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির মূল অস্ত্র নন। বরং দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটারদের স্বর্ণাকে দিয়ে ফাঁদ পেতেছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জ্যোতি বলেন, ‘স্বর্ণা কিন্তু নিয়মিত এত বোলিং করে না, ও আমার অপশন হিসেবেই থাকে। সো, ও কিন্তু মেইন বোলার না। রাবেয়ার ১ ওভার বাকি ছিল, প্রথম ৩ ওভার দুর্দান্ত করে ফাহিমা শেষ ওভারে একটু বাজে করে ফেলে। আমার জন্য রাবেয়াকে রেখে ওই ওভারে স্বর্ণাকে আনা ডিফিকাল্ট ছিল। তবে স্বর্ণা জোরে আর এক জায়গায় বল করতে পারে, দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটারদের জন্য আমি এই ফাঁদটাই পাতি। শেষ পর্যন্ত সেটা কাজে লেগেছে।’
জয়ের পুরো কৃতিত্ব বোলারদেরকে দেন জ্যোতি। তিনি বলেন, ‘সবকিছু হয়েছে টিম অ্যাফোর্টের জন্য। আমাদের প্ল্যান ছিল ১৪০ এর বেশি করার, সেটা করেছি। বোলিংয়ে একটু ল্যাকিংস ছিল, তবে ওরা ভালো ব্যাটিং করেছে যদিও এটা তো হয়েই থাকে। তবে সবমিলিয়ে বোলাররা ভালো করেছে, ফিল্ডিংয়ে আমরা প্রত্যেকটা সুযোগ নিতে পেরেছি। তবে এমন কন্ডিশনে ১৫০ রান না করতে পারলে ডিফেন্ড করা কঠিন। ওদের ব্যাটিং অনেক বেশি শক্তিশালী, সে হিসেবে আমি বোলারদের পুরো কৃতিত্ব দিবো। আমরা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, একবারের জন্যও মনে হয়নি ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছি, সবসময়ই বিশ্বাস করেছি ম্যাচ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’
পরের ম্যাচে আরও ভালো খেলার দিকে চোখ জ্যোতির। টাইগ্রেস অধিনায়ক বলেন, ‘আমাদের শেষ কিছু সিরিজ ভালো গেছে, দল হিসেবে ভালো খেলেছি। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকবে পরের ম্যাচে যেন আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। এই ম্যাচে খুব ভালো খেলেছি তা নয়, অনেকগুলো ভুল ছিল সেগুলো শুধরাতে পারলে আরও ভালো খেলতে পারবো। আমরা পাওয়ার প্লেতে অনেক রান দিয়েছি, আমার কাছে পরবর্তী একটি দিন নিয়ে চিন্তা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ এদিন ৪ ওভারে মাত্র ২৮ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন স্বর্ণা। চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফাইফার নেওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। সর্বপ্রথম ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবলিনে প্রথম বাংলাদেশি নারী বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নেন জাহানারা আলম। সেদিন তার ফিগার ছিল স্বর্ণার মতোই ২৮ রানে ৫ উইকেট। এছাড়া একই দলের বিপক্ষে পেসার পান্না ঘোষেরও ৫ উইকেট রয়েছে। এই তালিকায় একমাত্র বোলার হিসেবে দুইবার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে শুধু বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তারের। গত বছর কেনিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার পর চলতি বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৫ উইকেট নেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে নাহিদার ৮ রানে ৫ উইকেট টি-টোয়েন্টিতে কোনো বাংলাদেশী বোলারের সেরা ফিগার।
বেনোনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪৯ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। যেখানে মুর্শিদা খাতুন ৫৯ বলে ৬২ আর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ২১ বলে ৩৪ রানের ক্যামিও খেলে দারুণ অবদান রাখেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ২০১৯ সালে পোখারায় মালদ্বীপের বিপক্ষে ২৫৫ রান টাইগ্রেসদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। সেটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মেয়েদের ২০০ বা তার বেশি রানের একমাত্র সংগ্রহ।
গতকাল বিসিবি’র এক ভিডিও বার্তায় স্বর্ণা আক্তার বলেন, ‘বাইরের দেশে এসে এমন নৈপুণ্য দেখাতে পেরে ভালো লাগছে। আমাদের ওভার অল প্রিপারেশনটা ভালো ছিল বলেই ভালো শুরু করতে পেরেছি। বল করার সময় খুব বেশি ভাবিনি আমি। চেষ্টা ছিল উইকেট টু উইকেট বল করা, ডটবল দেয়া, কিভাবে ম্যাচটা নিজেদের দিকে আনা যায়।’ পরের ম্যাচ নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা আছে স্বর্ণার। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাইনি ঠিকই তবে যেহেতু আমি একজন অলরাউন্ডার আজ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি, সামনেও সুযোগ পেলে দলের জন্য ভালো কিছু করতে চাইবো।’
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামবে টাইগ্রেসরা। এই ম্যাচ জিততে পারলেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার সিরিজ জয়ের মাইলফলক গড়বে জ্যোতির দল।