বিশ্বজমিন
সেই বিচারকদের বিচার দাবি পাকিস্তানে
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ২৯ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:২০ অপরাহ্ন
পাকিস্তানের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশাররফ। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন। চলতে থাকে সামরিক শাসন। ২০০৭ সালের ৩রা নভেম্বর দেশজুড়ে জারি করেন জরুরি অবস্থা। বেশ কিছু বিচারককে গৃহবন্দি করেন। তার সেই সামরিক শাসনকে যেসব বিচারক বৈধতা দিয়েছিলেন এবার তাদের বিচার করার দাবি উঠেছে। কোন রাজনীতিক নন, এ দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আতহার মিনাল্লাহ। মঙ্গলবার তিনি বলেন, যেসব বিচারক সাবেক সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল পারভেজ মুশাররফের সামরিক শাসনের বৈধতা দিয়েছিলেন তাদের এখন আদালতে বিচার হওয়া উচিত। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
২০১৯ সালের ১৭ই ডিসেম্বর উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় পারভেজ মোশাররফকে তার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয় লাহোর হাইকোর্টের স্পেশাল কোর্ট। ওই রায়কে অসাংবিধানিক ঘোষণার দাবি জানিয়ে ২০২০ সালের ১৩ই জানুয়ারি আপিল আবেদন করা হয় মুশাররফের পক্ষে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই আপিলের শুনানি হচ্ছিল। বেঞ্চের অন্য বিচারকরা হলেন প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ইসা, সৈয়দ মনসুর আলি শাহ, আমিনুদ্দিন খান। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১২ই অক্টোবর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরীফের সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেন মুশাররফ। এরপর বিচারকরা বিভিন্ন রকম প্রতিবাদ করতে থাকেন। এরই মধ্যে ২০০৭ সালের ৩রা নভেম্বর এক কুখ্যাত ঘটনা ঘটান মুশাররফ। এদিন তিনি দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এ সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিচারপতিকে রাজধানী ইসলামাবাদ ও অন্যান্য স্থানে গৃহবন্দি করেন।
মঙ্গলবার আপিলের শুনানিতে পারভেজ মুশাররফের সামরিক শাসনের কথা আদালতের সামনে তুলে ধরেন সিন্ধু হাইকোর্ট বার-এর আইনজীবী রশিদ এ. রিজভী। জবাবে বিচারক মিনাল্লাহ অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। এ সময় প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ইসা বলেন, তিনি তার সহকর্মী বিচারকদের সম্মান করেন। কিন্তু ‘এখনই অতীতকে সামনে আনার সময়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। যখন পারভেজ মোশাররফ জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত করেছিলেন সেদিনই তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছিলেন, এ কথা উল্লেখ করে বিচারক মিনাল্লাহ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং বলেন, পারভেজ মোশাররফকে তখন ওই ব্যবস্থা নিতে অনুমোদন দিয়েছিল আদালত। এর ফলে এটা বলা যায় যে, যেসব বিচারপতি পারভেজ মোশাররফের সামরিক শাসনকে বৈধতা দিয়েছিলেন, তাদের বিচার হওয়া উচিত। তিনি প্রশ্ন তোলেন যখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের গ্রেপ্তার করেছিল সেনাবাহিনী কেবল তখন ২০০৭ সালের ৩রা নভেম্বরেই কেন জরুরি ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, যদি শুধু ৩রা নভেম্বর বিচারকদের ওপর হামলার বিষয়টিই আমলে নেয়া হয়, তাহলে সুষ্ঠু বিচার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
রিজভীকে বিচারক মিনাল্লাহ বলেন, সময়ই সব সত্য বলে দেবে। যদি সেই সিদ্ধান্তকে উল্টে দিতে হয়, তাহলে সামরিক শাসনের বিষয়কে সামনে আনতে হবে। ওই বিচারকদের জবাবদিহিতায় আনা উচিত। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, অতীতে যা ঘটে গেছে তাকে তিনি আর আগের অবস্থায় নিতে পারেন না। তিনি বলেন, যদি আমরা একটি জাতি হতে চাই, আমাদেরকে অতীতের দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যতকে নির্মাণ করতে হবে।