রাজনীতি
শ্রমিক কনভেনশনে নেতারা
পদত্যাগ না করলে জনগণ টেনে-হিঁচড়ে নামাবে
স্টাফ রিপোর্টার
(১ বছর আগে) ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৭:৩৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
১৫টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রমিক কনভেনশন করেছে বিএনপি। শনিবার রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও টিএন্ডটি স্কুলের সামনে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সমমনা শরিক দলের সিনিয়র নেতারা। তারা বলেছেন, বর্তমান সরকারকে দেশের মানুষ এক মুহূর্তও দেখতে চায় না। সরকার যদি পদত্যাগ না করে তাহলে মানুষ টেনে-হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাবে। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও দেশের মানুষ দেখতে চায় না। দেখতে চান আপনারা? শেখ হাসিনা সরকারকে দেখতে চান? ওরা আমাদের ভাতে মারছে, ওরা আমাদের পেটে মারছে। ওরা আমাদের সবখানে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের (এসএসপি ) উদ্যোগে জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশনে ১৫টি শ্রমিক সংগঠনের প্রায় দশ হাজার প্রতিনিধি ছাড়াও দেশের প্রখ্যাত শ্রমিক নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টা থেকে কনভেনশনে গান পরিবেশন শুরু হয়। বিকাল ৩টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কনভেনশন শুরু হয়। এসময় ২০টি পতাকা উত্তোলন ও ৩০টি কবুতর উড়ানো হয়। 'দ্রব্যমূল্য, মজুরি কমিশন, জাতীয় বেতন স্কেল ও ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমপরিস্থিতি ও চলমান একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সমস্ত জাতি একটা লুটেরা, ফ্যাসিস্ট এবং দানবের শাসনের মধ্যে পড়েছে। এই সরকার জনগণের দ্বারা কখনো নির্বাচিত হয়ে আসেনি। পরপর দুটি নির্বাচনে চুরি ও ডাকাতি করে তারা ক্ষমতা দখল করেছে। সেই কারণে একটামাত্র দাবি নিয়ে আজকে সমস্ত দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। সেই দাবি হচ্ছে, এই মুহূর্তে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং নতুন ইসি গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি ও দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। অন্যদিকে আমাদের মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে। নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, আজকে ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু কথা বলেছেন। তিনি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির মামলা নেই। যে টাকা (২ কোটি ৩৩ লক্ষ) এখন ৮ কোটির উপরে চলে গেছে। ব্যাংকে জমা আছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে, বেগম জিয়া যাতে রাজনীতিতে থাকতে না পারেন- সেজন্য আজকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে।
বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার তথ্য তুলে ধরে ফখরুল বলেন, এই রকম একটা ভয়াবহ রাষ্ট্র তৈরি করেছে। এটাকে রাষ্ট্র বলা যায় না। এটা মানুষের রাষ্ট্র বলা যাবে না। এটা আওয়ামী লীগের নির্যাতনকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
আন্দোলন প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই লড়াইয়ে বিজয় সুনিশ্চিত। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে আমরা বাধ্য করবো।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সরকার আল্টিমেটাম দিচ্ছে রাস্তায় নামতে দিবে না। আমরা যেদিন আল্টিমেটাম দিয়ে বলবো এদের ধরেন। তখন কিন্তু আমরা রক্ষা করতে পারবো না। আর এদের (সরকার) বিদায় করার সময় এসেছে। এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। কেন ক্ষমতা ছাড়বেন? কারণ আপনারা রাতের অন্ধকারে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছেন। তাই আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই। কারণ শ্রমিকদের এই সরকার গুরুত্ব দেয় না। কারণ তাদের ভোটের দরকার নেই। তারা জোর করে ক্ষমতায় আছে। তাই শ্রমিকরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ের ময়দানে অবস্থান নিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে এই কনভেনশন। আর এই সরকার নড়বড় করছে। দেশে বিদেশে তারা কোন জায়গা পাচ্ছে না। একটা ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, এই সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সময়ের ব্যাপারে মাত্র। তাই বিদেশ থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগের ঘোষণা না দেন তাহলে জনগণ তাকে টেনে হিঁচড়ে নামাবে।
সরকারের লুটপাটের কথা উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা যদি ক্ষমতায় যাই এই লুটেরাদের ছাড়বো না। এরা লুটেরা ও মিথ্যাবাদী। আমরা দেশকে বদলাতে চাই। সেই কারণে আমরা কর্মসূচি দিতে চাই। আমরা সবাই আসবো। কারণ এই লড়াই আমাদের বাঁচার লড়াই।
শ্রমিকদের উদ্দেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, শ্রমিকরা যদি সংগঠিত না থাকে তাহলে আগামী দিনের বাংলাদেশে আপনার দাবি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। তাই ঐক্যবদ্ধ হোন। কারণ রাজপথে নামলে এই সরকার একদিনও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারণ তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাই আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। এই সরকারকে ধাক্কা মেরে ফেলি।
আন্দোলনে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে বলে মন্তব্য করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু।
ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে করতে পারলে এই সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার বলে কনভেনশনে মন্তব্য করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
কনভেনশনে দ্রব্যমূল্য, মজুরি কমিশন, জাতীয় বেতন স্কেল, নূন্যতম মজুরি, শ্রম পরিস্থিতি এবং চলমান এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ আয়োজিত জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী কনভেনশনে ৩২টি প্রস্তাবনা ঘোষণা করেন শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শ্রমবিয়ষক সহ সম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লা, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।