বিবিধ
গ্রামীণ ব্যাংকের আলোয় শামসুন্নাহার
অনলাইন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:১৭ অপরাহ্ন

গাইবান্ধা জেলার দাড়িয়াপুর এলাকার বাসিন্দা শামসুন্নাহার। পিতার সংসারে আর্থিক টানাপোড়নে অপ্রাপ্ত বয়সেই বসেছিলেন বিয়ের পিঁড়িতে। দিনমজুর স্বামীর সংসারে অভাবের তাড়নায় অন্ধকারচ্ছন্ন ভবিষ্যতের হাতছানি শামসুন্নাহারের জীবনকে করে তুলেছিলো দুর্বিসহ। অনেকের কাছেই পেতেছেন সাহায্যর হাত। কিন্তু অবজ্ঞা ছাড়া মেলেনি কিছুই। এসময় স্থবির প্রায় শামসুন্নাহারের সংসারে আশার আলো হিসেবে দেখা দেয় গ্রামীণ ব্যাংক। যৌতুক প্রদান করে স্বামীর সন্তুষ্টি নয়, ঋণ সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে পান তিনি। ২০০৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের দাড়িয়াপুর গাইবান্ধা শাখার একটি কেন্দ্রের সদস্য হয়ে প্রথমে সহজ ঋণের আওতায় ২০,০০০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন শামসুন্নাহার। এরপর গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীদের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শের আলোকে বাড়তে থাকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ, ফলে বাড়তে থাকে তার ব্যবসার পরিধি। ছোট চায়ের দোকান থেকে শামসুন্নাহার গড়ে তোলেন বিউটি হোটেল। ঘর সামলে, স্বামীর সাথে কাজ করছেন নিজ হোটেলে। যার খাবারের সুখ্যাতি আজ পুরো জেলা জুড়ে।
শামসুন্নাহার জানান,‘গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হওয়ার পরে, স্যারেরা আমাকে লোন নেয়া এবং এটি কাজে লাগানো নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। সব সময়ই বলেছেন, আমরা আপনার পাশে আছি। লোন তুলে বিউটি হোটেল করেছি। এখানে গরুর মাংসের আইটেম অনেক ভালো চলে। প্রতিদিন সর্বনিম্ন বিক্রি হয় পঁচিশ হাজার টাকা। আমার এই ব্যবসা এখন অনেক বড় হয়েছে। আর্থিক অবস্থাও আগে থেকে অনেক ভালো।
ঋণগ্রহীতা শামসুন্নাহারের স্বামী জানান, আমার ব্যবসার অবস্থা ভালো ছিলোনা। পুঁজি না থাকাতে আমার স্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসার কাজে লাগায়। এরপর হোটেলের পাশে আরেকটি দোকান নেই। গ্রামীণ ব্যাংকে অনেক সুবিধা আছে। সঞ্চয় জমিয়ে যখন খুশি তখন তোলা যায়। প্রয়োজন মতো ঋণ নেয়া যায়।
শামসুন্নাহার জানান, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে জায়গা কিনেছি, বাড়ি করেছি। ব্যাংকে এখন আমার ১ লক্ষ টাকা ঋণ আছে। সামনে লোন নিয়ে ব্যবসাটাকে আরোও বড় করার ইচ্ছা আছে। আমার তিনটি সন্তান আছে, লেখাপড়া করছে। আগের অবস্থা চিন্তা করলে এখনোও আমার চোখে পানি চলে আসে। গ্রামীণ ব্যাংক না থাকলে ঘর-বাড়ি তৈরি, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতাম না।
গ্রামীণ ব্যাংকের দাড়িয়াপুর গাইবান্ধা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আছাদুজ্জামান জানান, কোন সদস্যকে ঋণ দেয়ার পর আমরা মনিটরিং-এ রাখি ঋণের টাকা সঠিক কাজে সে ব্যয় করছে কিনা। আমরা ঋণ সহায়তার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক বিভিন্ন পরামর্শও তাদের দিয়ে থাকি। শামসুন্নাহারকে সহজ ঋণ হিসেবে প্রথমে আমরা বিশ হাজার টাকা দেই। এ পর্যন্ত তিনি মোট ৮ লক্ষ টাকা ঋণের সুবিধা ব্যাংক থেকে পেয়েছেন।
এমন আরোও অনেক শামসুন্নাহারই দারিদ্র বিমোচনে নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় বদলেছেন নিজেদের ভাগ্য। অগ্রসর হচ্ছেন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে।