ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খেলা

মায়ামিতে বিলাসবহুল জীবন মেসির

পুলক বিশ্বাস পার্থ
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবারmzamin

লিওনেল মেসি ইউরোপের ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন প্রায় তিন মাস। প্রথমবারের মতো ইউরোপের বাইরে কোথাও পাকাপোক্তভাবে বসত গড়লো মেসি-পরিবার। ইন্টার মায়ামি কর্তৃপক্ষ মেসির সঙ্গে আলোচনা করেই তার থাকার পাকা ব্যবস্থা করেছে ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলে, যার মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১৮ কোটি টাকা। যদিও ইন্টার মায়ামিতে যোগদান করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের এই দক্ষিণ অঙ্গরাজ্যে প্রায়শই পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে যেতেন আর্জেন্টাইন তারকা। তাই সেখানকার অভিজাত বিলাসবহুল পোর্শে ডিজাইন টাওয়ার ভবনের ৬০ তলায় ৪,৪০০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট আগেই তিনি কিনে রেখেছিলেন, যার দাম (প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার) বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকারও বেশি। সেখান থেকে সড়ক পথে মায়ামির হোমগ্রাউন্ড ডিআরভি পিএন-এর দূরত্ব প্রায় ২৫ মিনিটের। বাসা থেকে মাঠে যেতে প্রায়ই ট্রাফিক জ্যামের সম্মুখীন হতেন মেসি। এ কারণেই মূলত নতুন বাড়ি খুঁজে নিলেন বিশ্বসেরা এই ফুটবলার।

ইন্টার মায়ামি সভাপতি ডেভিড বেকহ্যাম যে মেসিকে দলে ভিড়াতে চান সে ব্যাপারে অনেকদিন ধরেই খোলামেলা ভাবে কথা বলে আসছিলেন মিডিয়াতে। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে চলতি বছর জুলাইয়ের ২১ তারিখে সব জল্পনা-কল্পনা কাটিয়ে আমেরিকান ক্লাবটিতে যোগদান করেন লিওনেল মেসি। তবে রাজাকে রাখতে হলে রাজমহলের দরকার তো পরবেই।

বিজ্ঞাপন
তাই সবধরনের প্রস্তুতিই হাতে রেখেছিল সাবেক ইংলিশ ফুটবলার ও মায়ামি ম্যানেজার ডেভিড বেকহ্যাম। ফ্লোরিডায় মেসির নতুন শতকোটি টাকা মূল্যের বাড়িটির আয়তন ১০,৫০০ বর্গফুট, যা কিনা ফোর্ট লডারডেলের অভিজাত এলাকা বে কলোনির গেটেড কমিউনিটিতে অবস্থিত। ফোর্বসের তথ্যমতে চারপাশে লেকে ঘেরা বাড়িটির ভেতরে রয়েছে আটটি শয়নকক্ষ, সাড়ে ৯টি বাথরুম, খোলামেলা এক রান্নাঘর, বিলাসবহুল সুইমিংপুল এবং তিনটি গাড়ির গ্যারেজ। বাড়িটিতে আরো রয়েছে একটি স্পা, জিম এবং দুটি বোট ডক। বাড়িটির জন্যে বছরে তার কর গুনতে হবে ৬৭,০০০ পাউন্ড (প্রায় ৯০ লাখ টাকা)।  বাইরের মতো  অনন্য সজ্জায় সজ্জিত বাড়ির ভেতরটাও। রয়েছে ভেড়ার আদলে বানানো রুম। ঝকঝকে রঙিন আলোর মধ্যে প্রকৃতির আলোতে যেনো ভাটা না পরে সেজন্যে রয়েছে বিশাল বিশাল জানালা, যেখান থেকে সমুদ্রপাড় সহ উপভোগ করা যায় সমুদ্রটাও। কলিন্স এভিনিউয়ের পুরো নয় তলার রেগালিয়া টাওয়ার এবং কাছের ট্র্যাম্প রয়্যাল টাওয়ারের দুটি বিলাসবহুল ইউনিটও রয়েছে মেসির ব্যক্তিগত সম্পত্তির তালিকায়। 

তবে সেই ব্যায়বহুল চোখ ধাঁধানো চারদেয়ালের বাইরে মেসি সবচাইতে বেশি হয়তো উপভোগ করছেন মার্কিন পরিবেশকে। খেতে যাচ্ছেন নামীদামি সব রেঁস্তোরায়, যেখানে ভক্তদের আবদার হাসিমুখে মেনে নিচ্ছেন আর্জেন্টাইন এই ফুটবল কিংবদন্তী। ইতোমধ্যেই মেসিকে বউবাচ্চাসহ ঢু মারতে দেখা গিয়েছে মায়ামির বিখ্যাতসব রেঁস্তোরায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বহুল আলোচিত জাপানিজ স্টেকহাউজ এবং লাউঞ্জ গেকো। সুশি, ১০০০ পাউন্ডের স্টেক এবং নামীদামি সব ককটেলের গ্লাসের ভিড়ে শহরের পুরোটা জাদু মনে হতে পারে এখানেই। তবে কে মেসিকে এই রেঁস্তোরার পথ দেখালো তা অনুমান করার আর বাকি নেই। মায়ামিতে যোগদানের পরপরই সভাপতি বেকহ্যাম মেসিকে নিয়ে গেকো’র দরজায় কড়া নাড়েন, সঙ্গে ছিলেন মেসির দীর্ঘদিনের সতীর্থ এবং বন্ধু সার্জিও বুস্কেটস। হাস্যজ্বল তিনজনকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে ইন্সটাগ্রামের পাতায় যাদের সঙ্গে ছিলেন মেসি ও বেকহ্যামপত্নী আন্তোনেলা এবং ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম। মায়ামিতে লা পুলগার আগমনকে উদযাপন করতেই একসঙ্গে হয়েছিলেন তারা। কী খেয়েছিলেন জানা যায়নি তবে রেঁস্তোরার স্পেশাল মেন্যুতে মুখোরোচক লবস্টার থেকে শুরু করে ঝিনুক, গ্রানিটা সবই রয়েছে। বলা যায় সেলিব্রিটিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এই রেঁস্তোরাটি। কিম কারদিশিয়ান, ইভা লঙ্গরিয়া এবং ব্রায়ান ক্র্যান্সটনের মতো মানুষদের প্রায়শই দেখা যায় এখানে। এক মাস আগে মেসি ও বেকহ্যামপত্নীকেও  আলাদাভাবে গার্লস নাইট আউটে দেখা যায় আরেক স্বনামধন্য রেঁস্তোরা পাপি স্টেকে, যেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বুস্কেটস এবং থিয়েরি অঁরির স্ত্রী এলেনা গালেরা ও এন্ড্রিয়া রাজাসিক। 

পরিবার নিয়ে প্রথম নাইট আউটে মেসি বেছে নেন মায়ামির এক বিচ পাস্তা রেঁস্তোরা ক্যাফে প্রিমা পাস্তাকে। সেখানে পাস্তার দাম শুরু হয় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২১০০ টাকা থেকে এবং দামি খাবারের সবচাইতে উপরে রয়েছে সি ফুড লিঙ্গুইনি যার মূল্য প্রায় তিন হাজার টাকা। মেসির পুত্ররা যে মেন্যুতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট, তিরামেসু থেকে শুরু করে চিজকেক এবং হরেক পদের আইসক্রিম উপভোগ করেছে তা এক প্রকার অনুমেয়ই। রেস্তোরা মালিক জেরার্ড সিয়া নিজে ছবি তুলে রেখেছেন এই ফুটবল জাদুকরের। যেকোনো ধরনের হট্টগোল এড়াতে মেসি যখন রেঁস্তোরার পেছনের দরজা দিয়ে চুপচাপ বেড়িয়ে যেতে চাইলেন ততক্ষন পর্যন্ত তিনি জানতেন না যে সেখানেও অপেক্ষা করছে তার ভক্তদের এক লম্বা ভিড়। নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে বেশ কিছু ভক্তদের সাথে সাক্ষাত করেন মেসি যাদের মধ্যে একজন আবার মেসিকে একটা চুমু খেয়ে নেয়ার সুযোগটা হারাতে চাননি। এমন ঘটনায় মেসিকে সামান্য বিব্রতই দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে সেখান থেকে বেড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাংবাদিকরা পিছু নেয় আন্তোনেলার, যার জবাবে খানিকটা হেসে থিয়াগোদের নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন মেসিপত্নী। 

মার্কিন জীবন মানেই কেনাকাটার স্বর্গরাজ্য। সেই জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যেই হয়তো মেসি পুরোদমে কেনাকাটাও শুরু করে দিয়েছেন। গত জুলাইয়ে দক্ষিন ফ্লোরিডায় পাবলিক্সে মেসিকে তার শপিং ট্রলি ভর্তি করতে দেখা যায়। এতসবের মধ্যে ভক্তদের আবদার মেটাতেও যখন তখন দাঁড়িয়ে পড়ছেন ক্যামেরার সামনে। ভক্তরাও একদৃষ্টে চিনে ফেলছে বিশ্বসেরা ফুটবলারকে। 

এই বৃষ্টিস্নাত অভিজ্ঞতার আগে নতুন জায়গায় সবকিছু থেকে কয়েকদিনের জন্যে ছুটি নিয়েছিলেন মেসি দম্পতি। সাধারন কোনো দম্পতি মধুচন্দ্রিমায় নতুন জায়গায় যেভাবে সময় কাটায় ঠিক সেভাবেই একসাথে উপভোগ করেছেন দুজন। সমুদ্রপাড়ে একসঙ্গে হাত ধরে হেঁটেছেন তারা যার দেখা মেলে আন্তোনেলার ইন্সটাগ্রামে। সুন্দর কিছু মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দী করে তিনি লিখেছেন চধৎধংরড় যার বাংলা অর্থ ‘স্বর্গ’। সত্যিই হয়তো পৃথিবীর স্বর্গসুখ পুরোটাই উপভোগ করছে এই দম্পতি।

 

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status