বিশ্বজমিন
খালিস্তান আন্দোলন কী!
মানবজমিন ডেস্ক
(২ মাস আগে) ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১১:২০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে। কানাডার অভিযোগ এই হত্যায় ভারত সরকার সরাসরি জড়িত থাকতে পারে। জড়িত আছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আছে তাদের কাছে। ভারত এ দাবিকে উদ্ভট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জবাব দিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে দুই দেশের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে। হরদিপ সিং নিজার ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে শিখদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত। তাদের কাছে এটা স্বাধীনতা আন্দোলন। কিন্তু ভারত সরকারের কাছে তা হলো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সন্ত্রাস। এ কারণে দেশের ভিতরে সরকার তাদেরকে দমন করবে এটাই স্বাভাবিক।
খালিস্তানপন্থি আন্দোলন কী: শিখরা চায় ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সম্পূর্ণ একটি নতুন শিখ রাষ্ট্র। তার নাম হবে খালিস্তান। এই স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে হবে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতার সময় থেকে। তখন পাঞ্জাব প্রদেশকে নিয়ে এমন ধারনা উঠেছিল আলোচনার টেবিলে। পঞ্চদশ শতকে পাঞ্জাবে প্রতিষ্ঠিত হয় শিখ ধর্ম। এখন বিশ্বজুড়ে এর অনুসারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। পাঞ্জাবে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু পুরো ভারতে সংখ্যালঘু। ভারতের মোট ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে তাদের শতকরা হার মাত্র দুই ভাগ। তাদের দাবি, খালিস্তান নামে নিজেদের একটি দেশ থাকবে, যা সৃষ্টি করা হবে পাঞ্জাব থেকে। এই দাবি অনেক বছর ধরে উঠেছে। বিশেষ করে ১৯৭০ এর দশক এবং ১৯৮০ এর দশকে সহিংস বিদ্রোহ হয় এ দাবিতে। তা স্থায়ী হয় কমপক্ষে এক দশক।
ভারত কি প্রতিক্রিয়া দেখায়: ভারত সরকারের দৃষ্টিতে খালিস্তান আন্দোলন হলো নিরাপত্তা হুমকি। ১৯৮৪ সালে সরকার ও শিখদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াই হয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনি শিখদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান গোল্ডেন টেম্পলে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য, এর ভিতরে অবস্থানকারী শিখ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেতা জারনাইল সিং ভিনদ্রানওয়ালে এবং তার সমর্থকদের বের করে দেয়া। এতে বিশ্বজুড়ে শিখদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর কয়েক মাস পরেই নয়া দিল্লিতে শিখ দেহরক্ষীদের হাতে প্রাণ হারান ইন্দিরা গান্ধী। পাঞ্জাব থেকে শিখ ‘উগ্রপন্থিদের’ মুছে দিতে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে অপারেশন চালায় সেনাবাহিনী। কানাডা থেকে ভারতে আসা এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ৭৪৭তে ১৯৮৫ সালে বোমা হামলার জন্য শিখ ‘জঙ্গি’দের দায়ী করা হয়। ওই হামলায় আইরিশ উপকূলে আরোহী ৩২৯ জনের সবাই নিহত হন। এমন বিদ্রোহে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এখনও পাঞ্জাব সেই সহিংসতায় আতঙ্কিত। যদিও খালিস্তান আন্দোলনে ভারতের ভিতরে এখন খুব কমই সমর্থন আছে, তবে কানাডায় অবস্থানকারী শিখদের মধ্যে তা কঠোরভাবে বিরাজমান। পাঞ্জাব, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কানাডায় সবচেয়ে বেশি শিখ বসবাস করেন।
ভারত কি ভীত: এ বছর এপ্রিলে স্বঘোষিত ধর্মীয় নেতা এবং শিখদের খালিস্তান আন্দোলনকর্মী অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তার করে ভারত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি খালিস্তান আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করছেন। এতে পাঞ্জাবে নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দেয়। বছরের শুরুর দিকে কানাডায় একটি প্যারেডে ইন্দিরা গান্ধী হত্যার দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়। এর মাধ্যমে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ শিখদের সহিংসতাকে গৌরবান্বিত করা হচ্ছে বলে মনে করা হয়। ফলে এ নিয়ে কানাডার বিরুদ্ধে কড়া জবাব দেয় ভারত। একই সঙ্গে কানাডা, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে শিখ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও তাদের সমর্থকদের বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ভাঙচুরের ঘটনায় হতাশ হয় ভারত। স্থানীয় সরকারের কাছে এ জন্য উন্নত নিরাপত্তা চায় তারা।
সূত্র: রয়টার্স
পাঠকের মতামত
যে সাংবাদিক মহাশয় এই সংবাদ পরিবেশন করেছেন তিনি একটি সত্য গোপন করেছেন। জ্ঞানত বা অজ্ঞানত। খালিস্তান আন্দোলন শুধু ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ নিয়ে। তারা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ নিয়ে কোন কথা বলে না। উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। ভারতকে দুর্বল করা আর যাবে না। চল্লিশ বছর তো হলো!!! এখন রবিন্দ্রনাথের কথায় - '..নিদ্রিত ভারত জাগে.. '।
মন্তব্য করুন
বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন
বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ দূতাবাসের সতর্কবার্তা/ মার্কিন শ্রমবিষয়ক মেমোরেন্ডামের টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশ
ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্ট/ বাংলাদেশে ‘অন্যায্য’ নির্বাচনের প্রস্তুতি
মহাসচিবের মুখপাত্রের ব্রিফিং/ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না জাতিসংঘ
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট/ বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে চলছে সহিংস দমন–পীড়ন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]