খেলা
ভারতকে হারিয়ে শেষটা রাঙালো বাংলাদেশ
সামন হোসেন
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবারসুপার ফোরে পাকিস্তানের পর শ্রীলঙ্কার কাছে হারে আগেই বিদায় নিশ্চিত হয় যায় বাংলাদেশের। আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে দুই ফাইনালিষ্টও। আগামীকাল কলোম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ট্রফি জয়ের মিশনে নামবে ভারত-শ্রীলঙ্কা। তবে ফাইনালের আগে এশিয়া কাপের মঞ্চে রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচ দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে বসল বাংলাদেশ-ভারতের লড়াই। ভারতের কাছে ম্যাচটির গুরুত্ব না থাকলেও এশিয়া কাপের মঞ্চে বাজে পারফর্ম করা বাংলাদেশের জন্য একটা জয় খুব প্রয়োজন ছিলো। ভারতকে ৬ রানে হারিয়ে সেই আরাধ্য জয়টাই তুলে নিল সাকিব আল হাসানের দল। যা এশিয়া কাপের মঞ্চে বাংলাদেশ পেল ১১ বছর পর। সবশেষ এশিয়া কাপের ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ২০১২ সালে।
এদিন শুভমান গিলের সেঞ্চুরিতে জয়ের পথেই ছিল ভারত। তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা জাগান শেখ মেহেদী। তবে অক্ষর প্যাটেলের দারুণ ব্যাটিংয়ের কাছে যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছিল জয়ের স্বপ্ন। ম্যাচ জিততে শেষ দুই ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয় প্রথম বলেই শার্দুল ঠাকুরকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। এক বল পর চার হজম করলেও পরের বলেই অক্ষরকে ফিরিয়েছেন এই পেসার। ইনিংসের ৪৯তম ওভারে দুই উইকেট নিতে মোস্তাফিজ খরচ করেন ৫ রান। তাতে করে শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন হয় ১২ রানের। শেষ ওভারে সাকিব আল হাসান আস্থা রাখেন তানজিদ হাসান তামিমের উপর। এদিন অভিষেক হওয়া তরুণ এই পেসার দিয়েছেন ৫ রান। বাংলাদেশ জয় পায় ৬ রানে। কলম্বোতে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক, স্ট্রাইক প্রান্তে রোহিত শর্মা। চাপটা হয়ত একটু বেশিই অনুভব করছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। ওয়াইড দিয়ে শুরু করা তরুণ এই পেসার পরের দুই বলের মাঝে দিয়েছেন আরও একটি ওয়াইড। তবে নিজের দ্বিতীয় বৈধ বল করেই উইকেটের দেখা পান তানজিম সাকিব। কভারে থাকা এনামুল হক বিজয় সহজ ক্যাচ লুফে নিলে শূন্য রানে ফিরে যেতে হয় রোহিতকে। তিনে নামা তিলকেও টিকতে দেননি তানজিম সাকিব। বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান অভিষিক্ত এই পেসার। ১৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দারুণভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন লোকেশ রাহুল ও শুভমান গিল।
শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তারা দুজন। বাংলাদেশ যখন উইকেটের খোঁজে মরিয়া তখন ব্রেক থ্রু এনে দেন শেখ মেহেদী। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বলে মিড উইকেটে থাকা শামীম হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাহুল। ভারতের এই উইকেটকিপার ব্যাটার করেছেন ১৯ রান। ডানহাতি এই ব্যাটার ফেরার পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন গিল। এদিকে রাহুল ফেরার পর ইশান কিশানকে থিতু হতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন ৫ রান করা ইশান। তবে সূর্যকুমার যাদবকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন গিল। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৪৫ রান। তাদের জমে উঠা জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। ডানহাতি এই ব্যাটার করেছেন ২৬ রান। রান তাড়ায় দারুণ এক সেঞ্চুরি তুলে নেন গিল। সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন তরুণ এই ওপেনার। বাংলাদেশের বিপদ বাড়ানোর আগে গিলকে ফেরান মেহেদী। ডানহাতি এই স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে টেনে মারতে গিয়ে লং অফে থাকা হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১২১ রানের ইনিংস খেলা গিল। শার্দুলকে জ্বলে উঠার আগে ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজ। দ্রুত রান তুলতে থাকা অক্ষরকেও নিজের শিকার বানিয়েছেন তিনি। এরপর কেউই ব্যাট হাতে দায়িত্ব নিয়ে ভারতকে জেতাতে পারেননি। শেষ ওভারে মোহাম্মদ শামিকে রান আউট করে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে মুস্তাফিজ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া তানজিম সাকিব ও মেহেদি দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি বাংলাদেশের ওপেনাররা। রানের খাতা খোলার আগেই মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হন লিটন দাস। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। তিনি ১২ বলে ১৩ রান করে শার্দুল ঠাকুরের বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে ১১ বলে ৪ রান করে আউট হয়েছেন বিজয়। ফলে ২৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদেই পড়েছে টাইগাররা। এদিন প্রমোশন দিয়ে পাঁচ নম্বরে নামানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। শুরুতে দেখে শুনে খেললেও ভারতের ফিল্ডারদের হাতে একই ওভারে দুইবার জীবন পেয়েছেন এই অলরাউন্ডার। অক্ষর প্যাটেলের বলে সেকেন্ড স্লিপেই ২৮ বলে ১৩ রান করে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মিরাজ। সাকিব অবশ্য একপ্রান্ত আগলে রেখে ধীরস্থির ইনিংস খেলেন। ৬৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তরুণ ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়। ১১১ বলে হৃদয়কে নিয়ে সাকিব পঞ্চম উইকেটে যোগ করেছেন ১০০ রান। এরপর নিজের ইনিংস বেশিদূর এগোতে পারেননি সাকিব। ব্যক্তিগত ৮০ রানে শার্দুলের বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ৩টি ছক্কা ও ৬টি চারে সাজানো ছিল সাকিবের ৮৫ বলের ইনিংসটি। সাকিবের বিদায়ের পর শামীম পাটোয়ারির দায়িত্ব ছিল উইকেটে থিতু তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গ দেয়া। তিনি সেই দায়িত্ব পালন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। এই বাঁহাতি ব্যাটার ফিরে গেছেন মাত্র ১ রান করে। শামীম ফিরলে নাসুম আহমেদকে নিয়ে ৭৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন হৃদয়। অবশ্য এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ৮১ বলে ৫৪ রান করেন হৃদয়। শেষদিকে নাসুম ও শেখ মেহেদী বাংলাদেশের রান বাড়িয়েছেন। তুলনামূলক আগ্রাসী ছিলেন নাসুম। তিনি ৪৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন। তার ইনিংস জুড়ে ছিল ১টি ছক্কা ও ৬টি চারের মার। এরপর মেহেদী ও তানজিম হাসান সাকিব মিলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬৫ পর্যন্ত নিয়ে যান। মেহেদী ২৯ ও সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে।