বিশ্বজমিন
কৌশলগত স্বার্থকে প্রাধান্য, ভিয়েতনাম ও ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি পাশ কাটিয়ে গেলেন বাইডেন
মানবজমিন ডেস্ক
(৩ সপ্তাহ আগে) ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৯:০৯ অপরাহ্ন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভিয়েতনাম সফরের সময় হোয়াইট হাউসের ফ্যাক্ট শিটে ২ হাজার ৬০০ টিরও বেশি শব্দ ছিল। কিন্তু এরমধ্যে মানবাধিকার অংশে ছিল মাত্র ১১২টি শব্দ! ব্যবসায়িক এবং কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে বাইডেনের সাম্প্রতিক ভারত ও ভিয়েতনাম সফরকে বেশ সফল বলেই মনে হবে। কারণ, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াশিংটনকে সহায়তা করবে বাইডেনের এই সফর। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাইডেনের এই সফর নিয়ে বেশ হতাশ। কারণ ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় বাইডেন মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
হ্যানয়ে জো বাইডেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের সঙ্গে থাকা সম্পর্ককে এখন বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করতে চায়। এছাড়া ক্লাউড কম্পিউটিং, সেমিকন্ডাক্টর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যেকার সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে চায় তারা। হোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে, ভিয়েতনাম এয়ারলাইনস ৫০টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স জেট কিনতে যাচ্ছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ৭.৮ বিলিয়ন ডলারের বড় চুক্তিও হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে যে, মানবাধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের এমন অভাব ভিয়েতনাম এবং ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বাঁধা হতে পারে। পাশাপাশি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপও করতে পারে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ক্যারোলিন ন্যাশ বলেন, বাইডেন প্রশাসন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা সরকারগুলোর সাথে সম্পর্কের অগ্রগতির স্বার্থে মানবাধিকারকে স্পষ্টভাবে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি অভিযোগ করেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থকরা সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করছে।
এদিকে একই ধরনের অভিযোগ আছে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধেও। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ভিয়েতনামে অন্তত ১৫৯ জন রাজনৈতিক বন্দী রয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার জন্য মানুষদের বন্দি করা হচ্ছে। ভিয়েতনামে সাংবাদিকরা বাইডেনকে প্রশ্ন করেছে যে, তিনি মার্কিন স্বার্থকে মানবাধিকারের উপরে স্থান দিয়েছেন কিনা। এর উত্তরে বাইডেন বলেন, আমি যত জনের সঙ্গেই দেখা করেছি, মানবাধিকার প্রসঙ্গ তুলেছি।
কিন্তু ন্যাশ ও জন সিফটন মনে করেন গোপন আলোচনায় মানবাধিকার প্রসঙ্গ তোলা যথেষ্ট নয়। সিফটন বলেন, মানবাধিকার নিশ্চিতের চাপ দেয়ার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নত করা অত্যন্ত কঠিন। সরকারগুলোর জানা প্রয়োজন যে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে তার একটি পরিণতি আছে। উল্লেখ্য, জুন মাসে বাইডেনের সাথে একটি সংবাদ সম্মেলনের সময় মোদি তার সরকারের অধীনে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের কথা অস্বীকার করেন। ভিয়েতনামের সরকারও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বাইডেন ভারতে থাকাকালীন মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলি প্রকাশ্যে উত্থাপন করেননি। যদিও তিনি হ্যানয়ে প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন যে, তিনি মোদির সাথে তার আলোচনায় মানবাধিকার এবং মুক্ত সংবাদমাধ্যমকে সম্মান করার গুরুত্ব উত্থাপন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কো-অর্ডিনেটর কার্ট ক্যাম্পবেল বলেন, বাইডেন এ জাতীয় বিষয়গুলি একান্ত আলোচনাতেই উত্থাপন করতে পছন্দ করেন। ক্যাম্পবেল বলেন, ভারত মানবাধিকার নিয়ে অগ্রগতিতে কাজ করছে। এখানে আমাদের জন্য মূল বিষয় হল তার সঙ্গে একটি সম্মানজনক সংলাপ বজায় রাখা।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন-ভিয়েতনাম আলোচনায় মানবাধিকার প্রসঙ্গে ‘অর্থপূর্ণ সংলাপ’ হয়েছে। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মারে হাইবার্ট বলেছেন, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এনগুয়েন ফু ট্রং যখন বাইডেনের সাথে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছিলেন, তখন সঙ্গে ছিলেন তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ভিয়েতনামের নিরাপত্তামন্ত্রী টো লাম। এই টো লাম ভিয়েতনামের ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর দমন-পীড়নের জন্য দায়ী।
র্যান্ড কর্পোরেশনের আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ ডেরেক গ্রসম্যান বলেন, চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারত এবং ভিয়েতনামকে যুক্ত করতে বাইডেন এই দেশ দুটিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে মানবাধিকারের আলোচনাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে করে সৌদি আরবের মতো দেশগুলো কোনো আশঙ্কা ছাড়াই আগের মতো ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে।
মন্তব্য করুন
বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন
বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত
পিটার হাসের নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/ কূটনীতিকদের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, প্রয়োজনে আরো নিষেধাজ্ঞা
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি/ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান
ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলার/ আমরা চাই বাংলাদেশে নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]