অর্থ-বাণিজ্য
সার্বিক অর্থনীতিতে আমাদের আত্মতুষ্টি এসে গিয়েছিল: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৬:৫২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৩২ পূর্বাহ্ন

দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আমরা কখনো সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চলিনি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রচুর ডলার থাকায় যখন তখন বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। আমাদের আত্মতুষ্টি এসে গিয়েছিল।
শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটা সময়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তখন আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। রিজার্ভে প্রচুর ডলার ছিল বলে যখন তখন বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। যত ইচ্ছা প্রকল্প নিচ্ছিলাম। তখন কোন চিন্তা করা হয়নি, কারণ অনেক ডলার ছিল। তবে এখন রিজার্ভ থেকে ডলার কমতে থাকায় চিন্তা বাড়ছে। ভবিষ্যতে যে হঠাৎ করে কোনো চাপ আসতে পারে সেটা চিন্তায় ছিল না।
তার মতে, রিজার্ভটা রাখা হয় এ কারণে যাতে বিদেশিদের আস্থা ও বিনিয়োগ বাড়ে। রিজার্ভের ডলার নিজেদের জন্য খরচ করা উচিত না।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সারা দুনিয়াকে জানানো হয় যে আমাদের অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে। যাতে এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। আমরা ভালো করছি বলে আমরা বিনিময় হারগুলো সময় মতো সমন্বয় করি নাই।
আমরা একের পর এক বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প করে যাচ্ছি। এগুলো ঋণের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকগুলো আছে প্রয়োজনীয়। অনেকগুলো আবার এসময় প্রয়োজন ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একটা সময় অবকাঠামো তৈরি এক জায়গায় গিয়ে থামাতে হবে। শুধু অবকাঠামো তৈরি করে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। অবকাঠামো যদি মানবসম্পদের সঙ্গে না মেলে তা হবে কঙ্কাল। অর্থাৎ শুধু বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করলেই হবে না, মানসম্পন্ন শিক্ষা দরকার।
গত ৩ বছরে আমাদের বৈদেশিক ঋণ ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে আমাদের ঋণ ফেরত দিতে হবে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার। আমরা যদি ভবিষ্যতে আরও ঋণ নিতে থাকি তাহলে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। এ জন্য লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে আমাদের বড় অবকাঠামো প্রকল্প নিতে হবে।
সভায় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রশ্ন রাখেন, দেশের মধ্যে ঋণ নিয়ে মানুষ পরিশোধ করে না। তাহলে কোন সাহসে বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেয়া হলো?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার জন্য সুদের হার এক জায়গায় ধরে রাখা হয়। পুঁজি পাচার হচ্ছে, বেগমপাড়া আছে। সিঙ্গাপুরের চেইন হোটেলে বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ করছে। ড্যামি কোম্পানি তৈরি করে অর্থপাচার হচ্ছে। অনিশ্চয়তায়ও পাচার বাড়ে। বৈধ আয় হলেও দেশের ওপর আস্থা না থাকলে অর্থপাচার হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের হয়ে গেছে। কেউ তো এই অর্থ ব্যাগে করে নিয়ে যায়নি। ব্যাংকিং সিস্টেমেই পাচার হয়েছে। কিন্তু সবকিছু ডিজিটাল হলেও তা ধরা যায়নি।
অপ্রিয় সত্য কথা বলা অর্থনীতিবিদদের এ দেশের সরকার পছন্দ করে না উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই সংস্কৃতি এখনও তৈরি হয়নি। আমার মতো অর্থনীতিবিদ একুশে পদক পাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি মানব সম্পদে অনেক দুর্বল। অবকাঠামোর জন্য অর্থনীতি আটকে থাকবে না। আমাদের মেধাবী মানবসম্পদ বিদেশে চলে যাচ্ছে। ভারত থেকেও অনেক মানবসম্পদ বাহিরে চলে গিয়েছিল। তারা পরবর্তীতে ফিরিয়ে এনে কাজে লাগিয়েছে। তবে আমরা সেরকমভাবে ফিরিয়ে এনে কাজে লাগাতে পারছি না। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আমরা কিছুই করছি না। তাই এদিক থেকে আমাদের অর্থনীতি পিছিয়ে যাচ্ছে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, কম খরচের প্রযুক্তি দিয়ে শিক্ষাখাত পরিচালনা করা যাবে না। বিশ্বের বহু দেশ শিক্ষা খাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে গিয়েছে। তাই আমাদের দেশের শিক্ষা খাতে এখন দরকার উন্নত প্রযুক্তি। যদিও অনেক সময় আমরা কম খরচের প্রযুক্তি দিয়ে অনেক কিছু করতে পারি। তারপরেও এগুলো পর্যাপ্ত না। তাই শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এসব কাজ করতে দরকার অনেক বরাদ্দ। এজন্য রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে হবে বলেও জানান এই অর্থনীতিবিদ।
পাঠকের মতামত
প্রকল্প গুলো ঋণের মাধ্যমে করা হচ্ছে / অগ্রয়োজনীয় প্রকল্পও নেয়া হয়েছে / পুঁজি পাচার, বেগমপাড়া তৈরীতে নিরব ভূমিকায় সরকার, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ করছে / ড্যামি কোম্পানি তৈরি করে অর্থপাচার / অনিশ্চয়তায়ও পাচার বাড়ে / সত্য কথা বলা অর্থনীতিবিদ একুশে পদক পাবে না / দক্ষ মানব সম্পদে দেশটি দুর্বল / শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে / নির্মম সত্য কথাগুলি বলেছেন ঢাবির সাবেক অধ্যাপক ডঃ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এক কথায় বোঝা যায় প্রকৃত মেধাবীর মূল্যায়ন ব্যবস্থা বর্তমানে অনুপস্থিত। অর্থ তার সব নীতি হারিয়ে “হামসে বড়া কৌন হায়” নীতিতেই বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
৫২ বিলিয় ডলারের অংহকারে যত্রতত্র খাতে টাকা অপচয় করা হয়েছে এখন তার মাশুল জনগনকেই বহন করতে হবে। সামনে আমাদের জন্য অনেক দুসঃময় অপেক্ষা করছে।
ডিসেম্বরের মধ্যে আট বিলিয়ন ডলার দিতে হবে। তার মানে রিজার্ভ ১০ এ চলে আসবে।মেগা উন্নয়ন গলার কাঁটা হয়ে যাচ্ছে।ইচ্ছেমতো নিজেদের লাভের জন্য বড় প্রকল্প নিয়ে জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে যা এখন সব কিছু বেশি দামে দ্রব্যমুল্য ক্রয় করে।
মন্তব্য করুন
অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন
অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত
বেশি মূল্যে ডলার কেনাবেচা/ ১৩ ব্যাংকের ব্যাখ্যা চাইলো বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই অর্থনীতিবিদ/ ব্যাংক ও রাজস্ব খাত এভাবে চলতে পারে না

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]