দেশ বিদেশ
‘আমার মৃত্যুর জন্য দুই থানার ওসি দায়ী’
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
৭ জুন ২০২৩, বুধবার
‘আমি নির্দোষ। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হক আর পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মো. হোসেন। আমি ইন্দুরকানী থানার ওসির টাকা চুরি করি নাই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’ মৃত্যুর আগে এ ধরনের একটি চিরকুট লিখে গেছেন পিরোজপুর সদর থানায় কর্মরত ঝাড়ুদার আল মামুন (৪০)। গত সোমবার সকালে ইন্দুরকানী ভাড়া বাসায় বিষপানের পর রাতে ঢাকা নেয়ার পথে মারা যায় মামুন। মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ছোট কুমারখালী গ্রামের শেখ আবুল কালামের ছেলে মামুন। জন্মের পর থেকে ইন্দুরকানী উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামে মামা বাড়িতে মামা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ. খালেক গাজীর কাছেই বড় হন। মামুন প্রায় ১০ বছর ইন্দুরকানী থানায় ঝাড়ুদারের চাকরি করার পর দুই মাস আগে ইন্দুরকানী থেকে পিরোজপুর সদর থানায় বদলি হয়ে আসেন। তিনি নিয়মিত ইন্দুরকানী থেকে পিরোজপুরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করতেন।
মামুনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামী মামুন রোববার বিকালে বাড়িতে ফেরার পর খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
সেখানে মামুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিকালে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে রওনা হয় স্বজনরা। পথিমধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মামুনের মৃত্যু হয়। মামুনের স্ত্রী মরিয়মের অভিযোগ ইন্দুরকানী থানায় থাকাকালীন ওই থানার ওসি এনামুল হক তার স্বামীর ওপর বিভন্নভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি তারা ওসিকে ২৩ হাজার টাকা দিতেও বাধ্য হয়েছিলেন। এ ছাড়া থানার কোয়ার্টারে থাকাকালীন ইন্দুরকানী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক শাহাদাত তার শ্লীলতাহানিও করেছিলেন বলে অভিযোগ মরিয়মের। এ ঘটনায় তিনি ওসি’র কাছে বিচার দিলেও শাহাদাতের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো মরিয়মকে গালমন্দ করেন। কয়েকদিন পূর্বে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার একটি বিষয় ধরা পড়ার পর শাহাদাতকে ইন্দুরকানী থানা থেকে পিরোজপুর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে।
মরিয়মের অভিযোগ পিরোজপুর সদর থানায় যোগদানের পর ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল সেখানকার ওসির কাছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে, যাতে সেখানে সে ঠিকমতো কাজ করতে না পারে। অভিযোগের বিষয়ে ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ‘মামুন মার্চ মাসে এখান থেকে চলে গেছে, তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নাই, টাকা চুরির ঘটনা ঘটে নাই।’ অন্যদিকে পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘থানায় চুরি কিংবা মামুনকে গালমন্দ ও মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’ মামুনের আত্মহত্যার বিষয়টি জেনেছেন বলে জানান পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান।
তবে তাকে গালমন্দ কিংবা মারধরের কোনো বিষয় তার জানা নেই বলেও জানান এসপি। পুলিশ সুপার জানান, মামুনের লেখা চিরকুটের বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছেন। মামুন এ বিষয়ে আগে কখনো তার কাছে অভিযোগও করেনি। চিরকুটের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার। মামুন ও মরিয়ম দম্পতির আফসানা আক্তার মীম নামের ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং আব্দুল্লাহ আল কাওসার নামে ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। চিরকুটের শেষ অংশে মৃতদেহটির পোস্টমর্টেম না করে মামা বাড়িতে দাফনের দাবি জানিয়েছে মামুন। তবে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহটির ময়নাতদন্ত শেষ হয়।
পাঠকের মতামত
আমি পুলিশ কমিশনার এবং উচ্চ ন্যায়ালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো যেন ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায় বিচার পায় ।