ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

গাড়িতে পতাকার ব্যবহারও বন্ধ হচ্ছে

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও সৌদি দূতের স্থায়ী এসকর্ট সুবিধা বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার
১৬ মে ২০২৩, মঙ্গলবার
mzamin

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধা তথা সার্বক্ষণিক পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। এখন থেকে তারা আর স্থায়ীভাবে পুলিশ এসকর্ট সুবিধা পাবেন না। রোববার সরকারি এক সিদ্ধান্তে দূতদের বিশেষ এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। একাধিক সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৩০ বছর আগে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন এবং ভারতের দূতদের জন্য ওই বিশেষ এসকর্ট সুবিধা চালু হয়। পরবর্তীতে কোনো এক সময়ে ওই তালিকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে অন্য দূতরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিশেষ সময়ে ওই সুবিধা গ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রদূতদের এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। কেবল এসকর্ট প্রত্যাহারই নয়, রাষ্ট্রদূতদের গাড়িতে ফ্লাগ উড়ানো বন্ধের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক মানবজমিনকে বলেন, এখন কোনো দূতই আর বিশেষ বা স্থায়ী এসকর্ট সুবিধা পাবেন না। সবাইকে এক লেভেলে আনা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহার করা হলেও তাদের নিরাপত্তায় কোনো অসুবিধা হবে না বলে দাবি করেন তিনি। 

ডিএমপি’র ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইয়াসমিন সাইকা পাশা মানবজমিনকে বলেন, রাষ্টদূতদের এসকর্ট বন্ধ করা হয়নি। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের যে স্থায়ী এসকর্ট দেয়া হতো সেটি আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। আগে তাদের জন্য আমাদের কিছু পুলিশ সদস্যকে ফিক্সড করে রাখা হতো। রাষ্ট্রদূতরা যেদিকে মুভ করতেন পুলিশ সদস্যরা তাদের এসকর্ট করে নিয়ে যেতেন। এখন আর সেটা হবে না। যদি তারা মনে করেন তাদের বিশেষ এসকর্টের প্রয়োজন, তবে তারা অন্যান্য রাষ্ট্রদূতের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখবেন। মন্ত্রণালয় পুলিশকে বললে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে, অস্থায়ী এসকর্ট দেবো। তিনি বলেন, মূলত কাজের চাপ বেড়ে যাওয়াতে আমরা তাদেরকে স্থায়ী এসকর্ট দিতে পারছি না। তার মানে এটা নয় যে, দূতাবাসের সিকিউরিটি বন্ধ করা হয়েছে। জাস্ট স্থায়ী এসকর্ট বন্ধ করা হয়েছে। সিকিউরিটি ব্যবস্থা আগের মতোই আছে। সব দূতাবাসেই আমাদের লোকজন কাজ করছে। রাষ্টদূতরা যখনই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবেন এবং আমাদেরকে বলা হবে তখনই আমরা এসকর্ট দেবো। ঢাকায় নিযুক্ত সব দূতকে সমান সুবিধা প্রদান করা হবে। এদিকে, রাষ্ট্রদূতদের এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় কূটনৈতিক পাড়ায় চলছে নানা আলোচনা।

মার্কিন দূতাবাসের প্রতিক্রিয়া: মানবজমিন-এর জিজ্ঞাসার জবাবে পাঠানো এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক কর্মকর্তা শন ম্যাকিনটোশপাবলিক বলেন, ‘আমাদের কূটনৈতিক কর্মীদের এবং সুবিধা সমূহের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী, আমরা মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশদ প্রকাশ করি না। ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে, অবশ্যই সমস্ত কূটনৈতিক মিশন এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বাগতিক দেশের বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে হবে।’

এতোদিনের বাড়তি বাড়তি ঢং বন্ধ হচ্ছে, বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী: ওদিকে নিরাপত্তার নামে ৪/৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত ‘বাড়তি ঢং করছিলেন’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। সন্ধ্যায় মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী বলেন, নিউ ইয়র্কে ১৯৩টি দেশের স্থায়ী মিশন রয়েছে। সেখানে যে সমস্ত মিশন প্রধান দায়িত্ব পালন করেন তাদের অনেকেই নিজ নিজ দেশের কেবিনেট মেম্বার পদমর্যাদার। কিন্তু ওখানে কেউ পুলিশ এসকর্ট নিয়ে চলার চিন্তাও করতে পারে না। ড. মোমেন  বলেন, আমি মন্ত্রী, কিন্তু কোথাও পুলিশ এসকর্ট নেই না। এমনকি মফস্বলে গেলেও না। কারণ আমি মনে করি এটি একটি বাড়তি ঝামেলা। বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে কিংবা শপিং মলে আক্রমণ করে লোক মারে না। সুতরাং চলাফেরায়  কোনো অসুবিধা নাই। তাছাড়া উন্নত দেশগুলোতে এসব ঢং নেই। সবমিলিয়ে আমরা উন্নত হচ্ছি। আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে উন্নত করতে হবে। কলোনিয়াল মেন্টালিটি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ভারত ও সৌদি আরব এই সুবিধা পাচ্ছিল। অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ এই সুবিধা চাইছিল। দিনে দিনে নতুন নতুন চাহিদা বাড়ছিল। আসলে নিরাপত্তা মূল কথা নয়, সামনে পেছনে পুলিশ নিয়ে একটু বাড়তি বাহ্বা নেয়া বা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনেক দূত এই সুবিধাটি চাইছিলেন। কিন্তু আমরা মনে করি আমাদের এখন পদ্মা সেতু নিরাপত্তা, মেট্রোরেলের নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় বাড়তি নজর দেয়া উচিত। তাছাড়া আমরা কৃচ্ছ্র সাধন করছি। যে সব রাষ্ট্রদূত এমন এসকর্ট নিতে চান তাদের আমরা পয়সা দিয়ে তা নেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। অনেকদিন আগে থেকে আমরা তাদের এই অফার করছি। সেই সঙ্গে জানিয়েছি আমরা এই সুবিধাটি প্রত্যাহার করতে যাচ্ছি। কিন্তু একজন রাষ্ট্রদূতও পয়সা দিয়ে এসকর্ট সুবিধা নেয়ার প্রস্তাবে রাজি হননি। কোনো মিশন আমাদের চিঠির জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। বলতে গেলে তারা আমাদের পাত্তাই দেয়নি। এক পয়সার দামও দেয়নি। মন্ত্রী বলেন, একজন রাষ্ট্রদূতকে এসকর্ট করার জন্য পুলিশের কয়েকটি সেট প্রস্তুত রাখতে হয়। তারা পালাক্রমে ডিউটি করে। এতে অনেক খরচ। তবে হ্যাঁ, চাইলে তারা খরচ বহন করে আনসার এসকর্ট নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করবো। মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সবাই সমান। আর কিছু না হোক আমরা কলোনিয়াল প্র্যাকটিস থেকে বের হতে পারলাম।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status