ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ৫৫ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৫ মে ২০২৩, সোমবার

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) হিসাব অনুসারে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ৫৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হতে পারে। এ সময় এনবিআরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের রাজস্ব আদায়ের ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করে পিআরআই প্রক্ষেপণ করছে, এনবিআর ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে। অন্যদিকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়েও লক্ষ্য অর্জন হবে না। 

রোববার পিআরআই আয়োজিত প্রি-বাজেট প্রেস ব্রিফিং অ্যান্ড ডিসকাশন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এমন পূর্বাভাস দেন। পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তারের সভাপতিত্বে কী-নোট উপস্থাপন করেন পিআরআই স্টাডি সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক।

প্রসঙ্গত, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের একটি শর্ত হিসেবে, বাংলাদেশকে আগামী অর্থবছর নাগাদ জিডিপিতে করের অবদান ০.৫ শতাংশ বাড়াতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির হিসাব অনুসারে, চলতি অর্থবছরে এনবিআর হয়তো ৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে। 

যদিও পিআরআই’র তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় আইএমএফের হিসাবের চেয়ে ২১.৪০ হাজার কোটি টাকা কম হবে। এই ব্যর্থতার জন্য এনবিআরের সক্ষমতার ঘাটতি এবং দরকারি সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে পিআরআই। একইসঙ্গে প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পড়তি অবস্থা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও নিম্ন রাজস্ব সংগ্রহকে দেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে গবেষণা সংস্থাটি।
পিআরআই জানায়, পিআরআই বলছে, অর্থনীতিতে নেতৃত্ব সংকট আছে। আগামী বাজেটে ৫ দফা সুপারিশ করেছে পিআরআই। বলছে, নির্বাচনের বছরে অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।

বিজ্ঞাপন
সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি হবে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই প্রাক্কলন বাস্তবতানির্ভর নয়। বাস্তবতা হলো, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির পেক্ষিতে ৫ বা ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই অনেক বেশি। সেখানে বলে দেয়া হলো সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, এটা ব্যাস্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা সমর্থন করে না। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে কোনো দেশই এই নিশ্চয়তা দিতে পারে না। বাংলাদেশ সেখানেই অবস্থান করছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে বিশেষ সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছিল। কোনো টাকাই ফেরত আসেনি। স্বার্থান্বেষী মহল কেউ কেউ এ সুবিধা নেবে। কিন্তু নৈতিকভাবে এটা সঠিক নয়। বদনামের ভাগিদার হবে, কিন্তু উপকার আসবে না। সরকারের এটা একটি আন-ওয়াইজ ও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এবার আবার প্রত্যাহার হবে। আমরা সাধুবাদ দেবো, এটা আর দরকার নেই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক টিম গঠন করবে, যেটার মাধ্যমে নীতিগুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। সুপারিশ দিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার যেটা এখন পর্যন্ত করেছে, তা খুবই ক্ষুদ্র, বড় কিছু করেনি। বড় করার মধ্যে করেছিল এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত। সরকার এখনো সুদহার পরিবর্তন করেনি। মূল্যস্ফীতিকে অ্যাড্রেস করার জন্য এখনো পর্যন্ত একটি পলিসি করেনি; মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। রিজার্ভ নিয়ে এখন পর্যন্ত যে পলিসি নিয়েছে, তাতে হ্রাস বন্ধ হয়নি। এটা চলছেই। গত ৯ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। আগামী ৮-৯ মাস যদি আরও ৮-৯ বিলিয়ন হারায়, তাহলে আমরা কোথায় থাকবো? তিনি বলেন, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নীতি কাজ করছে না। যদি কাজ না করে তাহলে নীতির পরিবর্তন করতে হবে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাস্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে জানান ড. এমএ রাজ্জাক। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়, প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন চাপে আছে। এই ঘাটতির ওপর আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলন করা হবে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের কারণে আসন্ন বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপ, অনিশ্চিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক জলবায়ু এবং নির্বাচনী গতিশীলতার মধ্যে আইএমএফের শর্ত বাংলাদেশ কীভাবে পূরণ করে তা দেখার বিষয়।

পিআরআই জানায়, দেশের অর্থনীতি সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি আরও অস্থিরতা তৈরি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীতে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়েনি। এতে রিজার্ভ দ্রুত সময়ের মধ্যে কমে যাচ্ছে। 

আরও জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯.৬ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ব্যাপকহারে কমেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ নাগাদ ২ হাজার ১২৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসতে পারে বলে মনে করছেন পিআরআই।

এদিকে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.৪৬ শতাংশ কম। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে আমদানির পরিমাণও উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। এ ছাড়া চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২.৬ শতাংশ কমতে পারে। অর্থনীতির এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অনুমান করেছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬.০৮ শতাংশ ধরা হয়েছে বলে সংস্থাটি উল্লেখ করে।

পিআরআই জানায়, সম্প্রতি মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বা ১৫ শতাংশ বেশি। যেখানে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা এর আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া নন-এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

 

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status