অর্থ-বাণিজ্য
৪ ব্যাংকের মাধ্যমে চালু হচ্ছে টাকা-রুপিতে লেনদেন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২১ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার
মার্কিন ডলারের সংকটের কারণে ৪ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ও রুপিতে লেনদেন চালু করতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে এ বিষয়ে প্রক্রিয়াগত কাজ চলছে। সেটা শেষ হলেই লেনদেন শুরু হবে। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি যত বাড়বে, রুপিতে বাণিজ্যের সম্ভাবনা ততই বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, ডলারের ওপর চাপ কমাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক লেনদেনের একটি অংশ নিজ নিজ মুদ্রায় লেনদেনে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। তৃতীয় কোনো মুদ্রার সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই সরাসরি টাকা ও রুপির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির মূল্যবিনিময় করবে দুই দেশ। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ভারতীয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে লেনদেন হিসাব বা অ্যাকাউন্ট খুলবে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক।
একইভাবে বাংলাদেশের এ দু’টি ব্যাংকে হিসাব খুলবে ভারতীয় দুই ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়েই ডলারের দামে অস্থিরতা চলছে।
ইতিমধ্যে চীন ও রাশিয়া অনেক দেশের সঙ্গে নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, টাকা-রুপিতে লেনদেনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন এই বিষয়ে প্রক্রিয়াগত কাজ চলছে। সেটা শেষ হলেই লেনদেন শুরু হবে। এর আগে ভারত-বাংলাদেশ পারস্পরিক লেনদেনের বিষয়ে গত বছর ভারত একটা সার্কুলার ইস্যু করে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখেছে, এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৪টি ব্যাংকের মাধ্যমে এই লেনদেন চালু করা হবে। পরে এটি আরও বিস্তৃত হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমপ্রতি একটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে লেনদেনের ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রা ডলারে রূপান্তর করতে হবে না।
বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাবেন, তাদের কাছে একটি দ্বৈত মুদ্রার কার্ড থাকবে, যেখানে তারা ভ্রমণের আগে ভারতীয় রুপি যোগ করতে পারবেন। একইভাবে কোনো ভারতীয় বাংলাদেশে ভ্রমণের সময় কার্ডে টাকা যোগ করে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বিনিময় হার হবে সরাসরি টাকা থেকে রুপি বা রুপি থেকে টাকায়। ভারতের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে ব্যবসায়ীরাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে লেনদেন করতে পারবেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্টেট ব্যাংক ইন্ডিয়া (এসবিআই) সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে ডলারের পরিবর্তে রুপি ও টাকায় লেনদেন করার।
বাংলাদেশ ব্যাংকও চায় ভারতের সঙ্গে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করতে। দুই দেশের নিজস্ব মুদ্রার মধ্যে লেনদেন প্রক্রিয়া কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকা সফর করে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিনিধিদল। তারা গত ১১ই এপ্রিল বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকে (ইবিএল) বৈঠক করে। সেখানে ইবিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সফরকারীরা টাকা ও রুপিতে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন পরিশোধ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, এই মুহূর্তে ডলারের ওপর চাপ কমাতে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করতে পারলে ভালো কাজ দেবে। টাকা ও রুপিতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। পর্যায়ক্রমে দুই দেশের আরও ব্যাংক এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলার। ফলে দুই দেশের মধ্যে টাকা ও রুপিতে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বাণিজ্যিক লেনদেন করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশকে আমদানি মূল্যের বাকি অংশ আগের মতোই ডলারে পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে সরকারি হিসাবে প্রতিবছর বাংলাদেশি নাগরিকরা ভারতে চিকিৎসা, পর্যটন ও শিক্ষা খাতে প্রায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয় করেন। কিন্তু দু’বার মুদ্রা বিনিময়ের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে মানুষ। বর্তমানে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ভারতে যাওয়ার সময় পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স করে নিতে হয়। তারপর সেই ডলার রুপিতে ভাঙাতে হয়। কিন্তু এভাবে দু’বার মুদ্রা বিনিময়ের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ভ্রমণকারীরা। কেউ এখন ১০৮ টাকা দরে ঢাকা থেকে ৫০০ ডলার কিনে কলকাতায় ভাঙালে পাবেন ৪১ হাজার রুপির মতো, এই ডলার কিনতে তার ব্যয় হবে ৫৪ হাজার টাকা। অথচ ৫৪ হাজার টাকা সরাসরি রুপিতে ভাঙালে পাওয়া যেত প্রায় ৪২ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ক্ষতি হচ্ছে এক হাজার টাকার মতো।
আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের ওপর চাপ কমাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে এলসি খোলার অনুমিত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ ইউয়ানে পরিশোধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়া সম্মত হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মোট আমদানির ৪০ শতাংশই হয় চীন ও ভারত থেকে। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ চীন এবং ১৪ শতাংশ ভারত থেকে আসে। এ ছাড়া মোট রপ্তানির ২৬ শতাংশ এবং আমদানির সাড়ে ৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। মোট রপ্তানির ৫৬ শতাংশ এবং আমদানির ৮ শতাংশ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে।
পাঠকের মতামত
বাংলাদেশের জন্য ইহা অত্যন্ত সুবিধাজনক পদক্ষেপ হিসাবে পরিগণিত হবে এই জন্য যে পণ্য আমদানি ও নানাবিধ পর্যটনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা ভারতে চলে যায়। অপরদিকে ভারত বাংলাদেশ থেকে খুব একটা পণ্য আমদানি করে না বলে স্বল্পমাত্রায় ভারতীয় বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আসে। খবরের প্রতিপাদ্য বিশ্লেষণ করে একমত হওয়া যায় যে এই পদক্ষেপে বাংলাদেশী যথেষ্ট উপকৃত হবে এবং ডলার পাউন্ডের মত বৈদেশিক মুদ্রার উপর নির্ভরতার দিন শেষ হয়ে যাবে, আর এতে করে বাংলাদেশের নিজস্ব মুদ্রা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, যারা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছে তারা অর্থনীতির অ ও জানে না শুধুমাত্র তারা রাজনৈতিক হিংসার বশীভূত হয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের সমালোচনা করছে অর্থাৎ তারা সমালোচনার জন্যই সমালোচনা করছে। দোয়া করি মহান আল্লাহতালা এদের বুঝার শক্তি দান করুন।
দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত এটা l কারন ১. দুই দেশের আমদানি এবং রপ্তানির মধ্যে ব্যাপক ফারাক l ২. একটা পর্যায়ে ভারত ব্যাতিত অন্য কোন দেশ থেকে পণ্য কেনা যাবেনা l
স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের পরে এবার মনিব দাসীর সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছে।
This is a very bad decision because the end of the day India will win the game. Govt should cancel this decision as soon as possible.
সাময়িক সংকট উত্তরণে ভাল পদক্ষেপ। তবে বৃহৎ পক্ষের একতরফা প্রত্যাহারে অন্য পক্ষ বেকায়দায় পড়তে পারে।
এভাবে বিশ্বের সব দেশ দ্বিপক্ষীয় মুদ্রা বিনিময় চালু করলে ডলারের দৌরাত্য শেষ হবে । আমেরিকার আধিপত্য শেষ হবে । আসলে মেকি ব্যবস্থায় চলছে আমেরিকা । তাদেরই এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ।
বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন।---ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও কি এরকম বাংলাদেশি টাকায় এল সি খুলতে পারবে?
শেষ কথা কী দাঁড়াল। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ২০০ কোটি ডলার এবং ভারত রপ্তানি ( বাংলাদেশ আমদানি করেছে) করেছ প্রায় ১৩০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের ঘাটতি ১১০০ কোটি ডলার। ফলাফল পুরোটাই চরম প্রতিকূল অবস্থা বাংলাদেশের। তদুপরি টাকা রুপির বিনিময় মূল্য নির্ধারণ হবে সেই পুরোনো পদ্ধতিতে (ডলার)। যদিও বলা হচ্ছে সরাসরি রুপি-টাকায় সরাসরি বাণিজ্য হবে। বাংলাদেশের লাভ সামান্য অথবা প্রকৃত অর্থে কোনো লাভই হওয়ার নেই এ প্রক্রিয়ায়। আমরা যদি নেপাল ও ভূটানের অর্থনৈতেক অবস্থা যাচাই-বাছাই করি বিগত দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষাপটে তবে বুঝতে সুবিধা হবে এই টাকা-রুপির সরাসরি বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রকৃত কী লাভ হবে। এর সাথে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও বিবেচনায় রাখতে হবে।
Er chaitey aro bhalo hoyna jodi aamra Bangladeshi taka uthiye edeshey bharotiyo ruppee chalu kori? Bharotiyo reserve bank chalabey amader fiscal o monetary policy. Bangladesh bank shudhu local bank gulir upor khobordari korlei cholbey. Shadhin deshtakey kothai niye jacchey aamra, kon kumirer mukhey dicchi?
It means Bangladesh will lose two billion us dollars a year. With us currency we can buy goods from any county. But Indian rupee will limit that opportunity.
আমরা কি এখন বাংলাদশী টাকা নিয়ে ভারত যেতে পারবো?
ভালই হবে,আর টাকা টানার ঝামেলা থাকবে না.......