অর্থ-বাণিজ্য
বাড়তি দামে স্থির নিত্যপণ্যের বাজার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার
রমজানের শুরুতে নিত্যপণ্যের বাজার যেভাবে অস্থিতিশীল হয়েছিল, তার তুলনায় এখন কিছুটা স্থিতিশীল। এর মধ্যে দু’একটি পণ্যের দাম কমলেও বাকি পণ্যগুলো আগের বাড়তি দামেই বেচাকেনা হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। বাজার ভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচা, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
এদিকে মুরগির ক্রয়মূল্য এবং বিক্রয়মূল্যের মধ্যে যদি বেশি গরমিল থাকে, তাহলে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছন ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
শবেবরাত ও রমজান মাসকে কেন্দ্র করে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল। এরপর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে এক সভায় ২৩শে মার্চ দেশের মুরগি উৎপাদনকারী বড় ৪টি প্রতিষ্ঠান ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় খামার থেকে বিক্রি করার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই দাম কমতে শুরু করে।
বাজারে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। পাশাপাশি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৩০ টাকায়। তবে সাইজে বড় সোনালি মুরগি প্রতি কেজিতে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি বিক্রেতা সাজু বলেন, রমজানের শুরুতে ব্রয়লারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ দামে উঠেছিল।
এদিকে বাজারে কেজি প্রতি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। বড় পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা। ছোট পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়, রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়, কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়, পাবদা ৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৪৫০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৫৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ কিনতে আসা হাবীব ক্ষাভের সঙ্গে বলেন, দাম তো বেড়েছে রোজার আগেই। সব ধরনের মাছে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এই নলা মাছও আগে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরে কিনতাম। এখন এক বেলার জন্য একটি মাছ কিনলাম। সেটির দামও ১১০ টাকা। তাহলে বাজার মনিটরিং কোথায় হচ্ছে?
রমজানের প্রথমদিন বেগুন, লেবু, শসার মতো ইফতারে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এখন সেগুলোর দাম কিছুটা কমলেও বাজারে বেশ চড়া অন্যান্য পদের সবজির দাম। ভালো মানের বেগুন রোজার প্রথমদিকে ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন সেটা ৭০ টাকা। আবার ৮০ টাকার শসা এখন ৫০ টাকা হয়েছে। ৬০ টাকা লেবুর হালি এখন ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, লেবু রয়েছে তিন ধরনের প্রতি হালি ৩০, ৪০ ও ৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচাকলা ৩০ টাকা হালি, বেগুন প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০-১০০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, আম (কাঁচা) ১২০, গাজর ৫০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা ও সাজনা প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই চিত্র ধানমণ্ডির প্রায় সব বাজারেই। প্রতিটি বাজারেই ৫ টাকা কম বেশি রয়েছে।
সবজি কিনতে আসা খায়রুল বলেন, এখন তো সবজি পাওয়া যায়, শীতকালীন অনেক সবজিই রয়ে গেছে। তারপরও দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। ৪০ টাকার নিচে কোনো সবজি নাই। একটা লাউ ১০০ টাকা অবাক করা দাম!
গতকাল রাজধানীর কওরান বাজারে ভোক্তা অধিকারের পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রাতে বাজারে যে মুরগিটা আসে, সেটির ক্রয় রশিদে আমরা কিছু অনিয়ম পেয়েছি। ক্রয় রশিদের গরমিলে বাড়ানো হচ্ছে মুরগির দাম। অচিরেই রাতের বেলায় বাজার তদারকির জন্য ভোক্তা অধিকার থেকে টিম কাজ করবে। ব্যবসায়ীদের জন্য সতর্কবাণী থাকবে। মুরগির ক্রয়মূল্য এবং বিক্রয়মূল্যের মধ্যে বেশি গরমিল থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।