দেশ বিদেশ
‘মুড়ি আর ঘুমনি দিয়ে ইফতারি করবো, অন্যকিছু কেনার সামর্থ্য নেই’
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাই নবাবঞ্জ থেকে
২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবাররমজানের প্রথমদিন চাঁপাই নবাবগঞ্জ কোর্ট মসজিদে জুমার নামাজ শেষে কথা হয় ৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক এন্তাজুলের সঙ্গে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ইফতারিতে কি কিনবেন? তিনি বলেন, ‘মুড়ি আর ঘুমনি (ছোলা) দিয়ে ইফতারি করবো। অন্যকিছু কেনার সামর্থ্য নেই। প্রতিবছর ইফতারিতে খেজুর খেয়েছি কিন্তু এবার কিনতে পারবো না।’ মুড়ি-ছোলা দিয়ে ইফতারির পর ভাত বা কালাইয়ের রুটি খাবেন এই রিকশাচালক। তিনি বলেন, রিকশা চালিয়েও আগে কিছুটা ভালো চলতে পারতাম। এখন জীবন কোনো রকম যাচ্ছে। সব দিকের খরচ যোগান দিয়ে সংসার চালনো কঠিন। এই রিকশাচালক বলেন, গত কুরবানির ঈদের পর গরুর মাংস খেয়েছি কি-না মনে নেই। প্রথম রোজায় পোল্ট্রি মুরগি কেনার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সম্ভব হয়নি। সিলভার কার্প মাছ দিয়ে সেহরি খেয়েছি। চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা একটি বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতি বছর রমজান শুরুর আগেই পুরো মাসের বাজার একবারে করলেও এবার এখনো পর্যন্ত করা হয়নি। তিনি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে নির্ধারিত বেতনের টাকায় সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিদিন ইফতারের জন্য যেটুকু না হলেই নয় সেই পরিমাণ আইটেম কিনে ইফতার করবো। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সংসার খরচ চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ইফতারি বিলাসিতা এবার একেবারে অসম্ভব। চাঁপাই নবাবঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মেরাজুল ইসলাম। বাইসাইকেলে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেশি। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কাউকে বলতেও পারছি না কোন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে আমার পরিবার যাচ্ছে। এর মধ্যে রোজা থেকে ভালো ইফতারি খেতে চাইলেও সেটা সম্ভব না। ফুটপাথ থেকে সামান্য কিছু ইফতাররি আর কালায়ের রুটি দিয়ে ইফতার করতে হবে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ শহরের বাতেন খাঁর মোড়ে ফুটপাথে ইফতারি কিনতে আসা আখতার হোসেন বলেন, আমার একটি ছোট ছেলে রোজা রেখেছে। তার জন্যই সামান্য কিছু ইফতারি কিনতে হলো। সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে ভালো দোকান থেকে ইফতারি কেনার অবস্থা নেই। ইফতারি কিনতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে যে টাকা বেতন পান, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। তাই গতবারের তুলনায় কম ইফতারি কিনেছেন। মানের প্রশ্নেও আপস করতে হচ্ছে তাকে। ভালো হোটেল থেকে ইফতারি কিনলে তো বেশি টাকা লাগবে। যেভাবেই হোক যে টাকা বেতন পান তা দিয়েই সংসার চালাতে হবে।
চাঁপাই নবাবগঞ্জের অভিজাত রেস্তরাঁ আলাউদ্দীন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক জামাল উদ্দীন নাসের বলেন, বাজারে পণ্যমূল্য বেশি থাকায় ইফতারি পণ্যের চাহিদা আগের বছরের তুলনায় কম।