প্রথম পাতা
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
স্টাফ রিপোর্টার
২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে দেশের মূল জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটি ছিল ২০২১ সালে গণতন্ত্রের জন্য প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের অন্যতম প্রধান থিম এবং এখনো এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বার্থের কেন্দ্রে রয়েছে। দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত ও উন্মোচনে প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ এবং মুক্ত গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেই মনে করেন পিটার হাস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতি। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ব্যাপকতা ইঙ্গিত করে তিনি জানান, দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়েই এটি বিদ্যমান। গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতি দমনে এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্নত করতে হবে। ডিজিটালাইজেশন বাড়ানো ও নগদভিত্তিক লেনদেনের পরিবর্তে অনলাইন লেনদেন দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে। সবশেষে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কম দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দুর্নীতি রোধে সহায়তা করবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ আরও বেশি এফডিআই অর্জন করবে বলে মনে করেন তিনি।
দুর্নীতি রোধে এসএমই উদ্যোক্তাদের জাতীয় সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত হাস।
স্বাগত বক্তব্যে সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের (সিআইপিই) নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু উইলসন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সিআইপিই-এর লক্ষ্য তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই), দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এসএমই খাতের ওপর জোর দিতে হবে। তবে, দুর্নীতি এসএমই উদ্যোক্তাদের উদ্যোগকে সীমিত করে দেয়।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও টিআইবি’র মহাসচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “সামাজিক আন্দোলন ছাড়া দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। আমি আশা করি, দুর্নীতি রোধে সিজিএস যেই উদ্যোগটি নিয়েছে, তা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দুর্নীতি রোধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।’ তিনি মনে করেন প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেছন থেকে অদৃশ্য হাত দিয়ে পরিচালনা করা হয়, সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
সিজিএস’র চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর এ. চৌধুরী বলেন, ‘দুর্নীতি একটা দৈত্যের মতো, সবাইকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদেরকে মুক্তি পেতে হবে। সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, সিজিএস ও সিআইপিই গত দুই বছর ধরে এসএমই খাতে দুর্নীতির ওপর গবেষণা করে আসছে। গবেষণা প্রকল্পটি এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
আলোচনা-পর্ব শেষে এসএমই উদ্যোক্তাদের পরামর্শ গ্রহণের পর গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক ড. আলী রীয়াজ চূড়ান্ত যৌথ প্রস্তাবনা ঘোষণা করেন। এ প্রস্তাবনায় সম্মানিত সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ সরকারের সচিব ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) সাবেক সিইও সুলতানা আফরোজ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসী, এসএমই ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও বেঙ্গল প্যাসিফিক (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেদুল ইসলাম হেলাল, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার এসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি ও জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল হক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি উইমেন এন্টারপ্রেনিউর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডব্লিউইএবি) ও মাল্টিমোড গ্রুপের ভাইস চেয়ারপারসন নাসরীন ফাতেমা আউয়াল।
পাঠকের মতামত
যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতি ও বাংলাদেশের দুর্নীতি এক নয়। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সেবার জন্য কোথাও ঘুষ দিতে হয় না। বাংলাদেশ সভ্যরাষ্ট্র নয়। এ দেশে পিওন থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত সবকটা ঘুষখোর।
পৃথিবীর সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলতে বোঝায় বাংলাদেশকে মেশিনে টাকা গুনে ঘুষ নেয়,এমন একটা দেশ একটা দেখান?নৈতিকতা জিনিসটা কি তারা বুঝে না,বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা,বিচার ব্যবস্থা,সিভিল সার্ভিস,পুরাপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে,জোর করে বললে তো হবেনা আমাদের সব প্রতিষ্ঠান শক্ত অবস্থানে আছে,যেদেশের এমপি মহোদয়গণ ঘুষ খায় সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হতে পারে