দেশ বিদেশ
স্থানীয়দের সঙ্গে ভালুকায় বন বিভাগের দ্বন্দ্ব নিরসন জরুরি
আলহাজ মো. আবদুর রশিদ
২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবারভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী মৌজায় ১৯৯২ সালের পূর্ব পর্যন্ত গেজেটে বন বিভাগের ভূমির পরিমাণ ছিল ১৫০০ একর, ১৯৯২ সালে বৃদ্ধি করে গেজেটে বিভিন্ন দাগ মিলিয়ে আসে ২০৫০ একর যা ৪ ধারা ও ৬ ধারার বন বিজ্ঞপ্তিত ভূমি। এই ২০৫০ একর ভূমির ডিমারগেশন নাই, কোন্ জায়গাটুকু বন বিভাগের, কোন্ জায়গাটুকু রেকর্ডীয় পাবলিকের নামে অথবা কোন্ জায়গাটুকু সরকারি খাস ভূমি। যে সকল পাবলিক বনের জমি জবরদখল করে আছে, তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থাপনা নাই, কারণ তারা বনের লোকজনদের সঙ্গে মিলে মিশে আছে, যাহাদের কাগজপত্র সঠিক আছে, বন থেকে অবমুক্তি নিয়েছে, ডিমারগেশন। করে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ভিন্নরূপ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে বন বিভাগের কর্মকর্তাগণ। সরকারি নকশা আছে, নকশায় বনভূমি এবং পাবলিকের সম্পত্তি একীভূক্ত করা। একই দাগে পাবলিক ও বন আছে কিন্তু কোন্ অংশে পাবলিক, কোন্ অংশে বন চিহ্নিত করা নাই। বন বিভাগ যদি সরকারিভাবে দেয় রেকর্ডপত্র যাচাই করে, পাবলিকের অংশে পাবলিক রেখে বনের অংশটুকু দখল করে বন সৃজন করতো এবং বিশ ধারা করে বন সৃজন করতো তবে পাবলিক হয়রানি হতো না। বন বিভাগ তার জায়গা চিহ্নিত না করে দাগের সমস্ত অংশই বন বিভাগের বলে দাবি করে পাবলিক হয়রানি করছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বন বিভাগের নামে কোন্ পরিমাণ ভূমি নেই, আছে জেলা প্রশাসকের নামে ১নং খতিয়ানের ভূমি। এই ১নং খতিয়ান থেকে কবুলিয়ত দলিলের মাধ্যমে ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ভূমি জরিপেও বন বিভাগের নামে ভূমি রেকর্ড হয়নি। রেকর্ড হয়েছে জেলা প্রশাসকের নামে। একজন পাবলিক জীবনের সবটুকু সম্বল নিয়ে কাগজপত্র অনুযায়ী চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে সামান্য আয় করছে, একসময় বন বিভাগের লোকজন এসে এই রেকর্ডীয় মালিকের নামে ৩-৪টি মামলা ঠুকে দিয়ে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে, কারণ বন মামলা করার সুযোগ নিচ্ছে ওই দাগে বনের অংশ আছে বিধায়। আবার দেখা যায়- এক দাগের সম্পূর্ণ ভূমিই বন বিভাগের নামে গেলে উল্লেখ আছে, অথচ উক্ত দাগে সিএস আরওআর সহ কবুলিয়ত পায়া আছে এবং রেকর্ডীয় মালিক হিসাবে ভোগ দখলে থেকে বাড়িঘর করে চাষাবাদ করে আসছে শতবর্ষ ধরে। আবার গেজেট-এ উল্লেখিত দাগে সরকারিভাবে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে দাগের সম্পূর্ণ ভূমি। এ ক্ষেত্রে রেকর্ডীয় ও বন্দোবস্ত মিলে কোন পরিমাণ ভূমিই বন বিভাগের দখলে কিংবা গেজেটের অংশ হিসাবেও নেই। বন বিভাগ চিহ্নিত করতে পারছে না তার অংশ কোন্দিকে, কোন্ দাগে কতো পরিমাণ জমি দখলে নিবে, অন্যদিকে পাবলিক তার জীবন দিয়ে হলেও তার দখলীয় ভূমি রক্ষা করতে মরিয়া। আবার দেখা যায়- একটি দাগের আংশিক ভূমি বন বিভাগের, আংশিক রেকর্ডীয় ভূমি পাবলিকের নামে, এ ক্ষেত্রে বন বিভাগ তার জমি ডিমারগেট করে না নিয়ে, পাবলিক হয়রানি করছে। বন বিভাগ ওই দাগের সম্পূর্ণ অংশের ভূমিতে পাবলিককে দাবড়ে বেড়াচ্ছে, একবার উঠাচ্ছে, আবার বহাল করছে, মামলা দিচ্ছে, পাবলিক সর্বস্বান্ত হচ্ছে। বন বিভাগের লোকজন তাদের চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে পাবলিকের নামে মামলা দিচ্ছে, মূলত: দুই পক্ষই হয়রানি হচ্ছে। এইভাবে পাবলিক ও বন বিভাগের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে ১৯৯২ সাল থেকে। যদি ২০ ধারার মাধ্যমে বন বিভাগের নামে ভূমি ডিমারগেট করে না দেয়া হয়, তবে বন বিভাগের কোনো পরিমাণ ভূমিই থাকবে না বলে মনে হয়, পাবলিক ও বন বিভাগের দ্বন্দ্ব নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং জনবান্ধব এই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আসপাড়া পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।