ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

জানুয়ারিতে ব্যাংকিং খাতে তারল্য কমেছে ৮ হাজার কোটি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার

 জুন মাসে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা; এরপর তা কমতে কমতে জানুয়ারিতে এসে ঠেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়। এরমধ্যে গত জানুয়ারি মাসে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ কমেছে ৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। এদিকে নামে-বেনামে ঋণ বিতরণের খবর প্রচারিত হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিয়েছে অধিকাংশ গ্রাহক। এতে ৩ মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বর শেষে দেশে কার্যরত শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ১১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বা ২.৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকাররা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাপক ডলার বিক্রি, কম আমানত রেট, ডলারের রেট ব্যাপক বৃদ্ধি ও কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি, গ্রাহকের নগদ অর্থ উত্তোলনে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য কমছে। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে। এজন্য অনেকে জমানো টাকা তুলে ব্যয় মেটাচ্ছেন। আবার আমানতের কম সুদের কারণে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য খাতে বিনিয়োগ করছেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এরপর তা কমতে কমতে জানুয়ারিতে এসে ঠেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সাল জুড়েই ব্যাংকগুলো ডলার সংকটে। এই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাপক ডলার কেনায় ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দেখা দেয়।

বিজ্ঞাপন
এ ছাড়া কিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হওয়ায় গ্রাহকের নগদ তারল্য উত্তোলন ব্যাপক বেড়েছে, যার কারণে উদ্বৃত্ত তারল্য কমেছে। 

সংবিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) এবং নগদ রিজার্ভ অনুপাত (সিআরআর) বজায় রাখার পর অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। ক্যাশ আকারে মোট আমানতের ৪% সিআরআর এবং নন-ক্যাশ আকারে ১৩% এসএলআর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রাখা ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলগুলোর জন্য একটি নিলাম ডাকে, যেখানে ইল্ড রেট ছিল ৬.৮৪%, যা জানুয়ারির ৭.৪৫% থেকে কম। ব্যাংকগুলো সেসব বিলে বিনিয়োগের জন্য নিলামে অংশ নেয়, যার মাধ্যমে সরকার বাজেটে ব্যয়ের জন্য ঋণ নেয়। 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ৫ বছরের ট্রেজারি বন্ডের ইল্ড রেট ফেব্রুয়ারিতে ৮.২০% এ নেমে এসেছে, জানুয়ারিতেও এই হার ছিল ৮.২৯%। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুন শেষে সরকারের ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সিকিউরিটিজ হিসেবে দায়ের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। এই ৬ মাসে সরকারের ব্যাংকগুলোর কাছে দায় কমেছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সিকিউরিটিজ হিসেবে দায়ের পরিমাণ কমেছে, অর্থ হচ্ছে সরকার বেশি ঋণ পরিশোধ করছে। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সরকার এই ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে আগের ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার কথা রয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো থেকে নিট ঋণ না নিয়ে উল্টো ১১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। যার অর্থ ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট থাকায় সরকার ঋণ নিচ্ছে না।

এদিকে ৩ মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বর শেষে দেশে কার্যত শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ১১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিক সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২.৭১ শতাংশ কম। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গত ডিসেম্বরে আমানত বেড়েছে ৪.২৮ শতাংশ। ব্যাংক খাতের মোট আমানতের মধ্যে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত রয়েছে ২৫.৮১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করে শরীয়াহভিত্তিক ৬টি ব্যাংক মাত্রাতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করেছে। এই ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১০৩.৪৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এফএসআইবিএল)। এ সময়ে ব্যাংকটি সীমার চেয়ে ১১.৪৫ শতাংশ বেশি ঋণ দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ৩ মাসে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ২৬.৫৫ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৬১.৭২ শতাংশ।
ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সীমার বেশি ঋণ দেয়ায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দেবে। এরফলে গ্রাহকদের জন্য বাড়তি ঝুঁকিও তৈরি হবে।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status