দেশ বিদেশ
পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান, এড়িয়ে গেলেন হিনা রাব্বানি খার
কূটনৈতিক রিপোর্টার
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার
একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। গত শনিবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশের আহ্বানের জবাবে হিনা নিরুত্তর ছিলেন বলে জানান মন্ত্রী মোমেন। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) আমাকে বলেছেন, আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চান। আমরা বলেছি, আপনারা যে গণহত্যা করেছেন ১৯৭১ সালে, তার জন্য পাবলিকলি ক্ষমা চান। তবে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন, কোনো উত্তর দেননি। মোমেন বলেন, হিনা রাব্বানী বলেছেন, তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমিও বলেছি, আমাদের এখানেও সীমাবদ্ধতা আছে। পাকিস্তান ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে চায় জানিয়ে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমি বলেছিÑ আপনারা গণহত্যার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান তাহলে সব হবে। সম্পর্ক উন্নয়নে আমি আপনাদের জন্য হয়ে ওকালতি করবো। মন্ত্রীর ভাষ্যটি ছিল এমন ‘আমি বলেছি, সম্পর্ক বাড়ানোর একটি বড় মহৌষধ, আপনারা যে নৃশংসতা করেছিলেন ১৯৭১ সালে, এটার জন্য আপনারা পাবলিকলি ক্ষমা চান। এটা যদি হয় আমি আপনাদের হয়ে ওকালতি করবো, সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে।’ শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন মোমেন ও হিনা রাব্বানি খার। সেখানে ক্ষমা চাওয়ার বক্তব্যের জবাবে হিনা রাব্বানির কী প্রতিক্রিয়া ছিল জানতে চাইলে মোমেন স্বহাস্যে বলেন, কিছুটা অ্যাভয়েড করেছেন, আমি বলতে পারি। সরাসরি কোনো উত্তর দেন নাই। একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে বক্তব্যের পাশাপাশি বাণিজ্য বাড়ানো নিয়ে এ খাতের বাধা বিশেষ করে অ্যান্টি-ডাম্পিং তুলে নিতে পাকিস্তানি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন মোমেন। বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসাটা ‘একপক্ষীয় হয়ে গেছে’। বাংলাদেশ পাকিস্তানে রপ্তানি করে ১০ কোটি ডলারের নিচে; বিপরীতে পাকিস্তান থেকে আমদানি করে ৮০-৯০ কোটি ডলার। আমি বললাম যে, এটাতো ঠিক না। আপনারা আমাদের কিছু জিনিস নেন। কারণ, তারা অনেকগুলো বাধ্যবাধকতা দিয়ে রেখেছে, তারা অ্যান্টি-ডাম্পিং দিয়ে রাখছে। আমি বললাম, এগুলো উইড্রো করেন। আপনি সম্পর্ক বাড়াতে চান, প্রথম অর্থনৈতিক খাতে করতে হবে। সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে হিনা রাব্বানির বক্তব্য ‘খুবই ইতিবাচক’ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা চাচ্ছে, আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করতে। শুধু আমাদের সঙ্গে নয়, ভারতবর্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চান তারা। উনি বললেন যে, উনি যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে একটি আঁতাতও করেছিলেন যে, ফরগেট দ্য ফার্স্ট অ্যান্ড লুক ফরওয়ার্ড। কোন কোন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় পাকিস্তানÑ জানতে চাইলে মোমেন বলেন, উনি বলেছেন, প্রথম ধাপে আমরা অর্থনৈতিক সম্পর্কটা বাড়াই। তারপর সামনে এগোতে পারি। আমি বলি, আপনারাই তো ব্যবসা করছেন, আমাদের উপর অনেক অ্যান্টি ডাম্পিং দিয়ে রাখছেন। উনি বললেন, দিস ইজ এ গুড পয়েন্ট, আমরা এগোতে পারি। তারা ফরেন অফিস কনসালটেন্ট (এফওসি) চাচ্ছে। অনেকদিন ধরে এটা হয় নাই। তারা সম্পর্কটা বাড়াতে চায়। আমি বলেছি, আপনাকে প্রথম পাবলিক অ্যাপলজি চাইতে হবে। নতুবা আমার রাজনৈতিক কারণ আছে যে, ওইটা হলে পরে আমি এটার জন্য যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারবো। তাছাড়া, আমার জন্য খুব কষ্ট হবে। আমি পারবো না। এটা পিওর অ্যান্ড সিম্পল। সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে নেপালের দিক থেকে আলোচনা তোলার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, নেপাল বললো, গত আট বছর ধরে সার্কের সম্মেলন হচ্ছে না। এটা তারা চায়। আমি বলেছি, আপনারা এটা তোলেন। এটা ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আলাপ করেন, তারপরে আমাদের বলেন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই সার্কের সম্মেলন হতে। আপনাদেরকে নেতৃত্ব নিতে হবে, প্রথম পাকিস্তান-ইন্ডিয়ার সঙ্গে বলেন, তারপর আমাদের জানান। ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে পাকিস্তানি তরুণরা উদ্যোগী হবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী মোমেন।
ধারের অর্থ ফেরতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে সময় দিয়েছে বাংলাদেশ: এদিকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ধারের অর্থ দ্রুত ফেরতে শ্রীলঙ্কাকে তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে ভালো করছে। তারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আমরা আশা করছি, তারা সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের অর্থ ফেরত দিতে পারবে। আমরা সেভাবেই তাদের তাগিদ দিয়েছি। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের জন্য আরও ছয় মাস সময় দিয়েছে। তবে দ্বীপ দেশটি দীর্ঘায়িত অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ করেছিল। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০২১ সালে একটি মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থার অধীনে নগদ অর্থহীন শ্রীলঙ্কাকে ঋণ সহায়তা করেছিল।