বিশ্বজমিন
অবশেষে ইউক্রেনে আধুনিক ট্যাংক পাঠানোর পথে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি
মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:২০ পূর্বাহ্ন

নানা নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনকে আধুনিক ট্যাংক দিতে যাচ্ছে তার পশ্চিমা মিত্ররা। রাশিয়া যখন দনেতস্ক ও জাপোরিঝিয়াতে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে তখনই এই সুখবর পেলো কিয়েভ। এসব ট্যাংক ইউক্রেনের হাতে আসলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাবে বলে আত্মবিশ্বাসী দেশটি। প্রাথমিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অন্তত ৩০টি এম ওয়ান আব্রামস ট্যাঙ্ক পাঠাবে ইউক্রেনকে। শীগগিরই আসছে সেই ঘোষণা। অপরদিকে জার্মানিও ১৪টি লিওপার্ড-২ ট্যাংক পাঠাতে যাচ্ছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে জানানো হয়েছে, পশ্চিমাদের থেকে আধুনিক এসব ট্যাংক পেলে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা রুখে দেয়ার বিষয়ে আশাবাদী ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এসব ট্যাংক যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার কাছে হারানো এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে। ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠনোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি এতোদিন ধরে দেশের ভেতরে এবং বাইরে নানা চাপ উপেক্ষা করেছে। এছাড়া নানা অযুহাতও দেখিয়েছে দেশগুলো। ওয়াশিংটন দাবি করেছিল, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আব্রামস ট্যাংক পরিচালনার জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষন এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। অন্যদিকে বার্লিন আশংকা করছে, ট্যাংক সরবরাহের মাধ্যমে ন্যাটো রাশিয়ার বিপক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে। তবে রাশিয়ার যত বেশি ক্ষতি করা সম্ভব সে চেষ্টা করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশ দুটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম বলছে, জার্মানির তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র যদি এম ওয়ান আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠায় তাহলে জার্মানিও লিওপার্ড টু ট্যাংক পাঠাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৩০টি ট্যাংক পাঠানো হতে পারে। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এবং বাইডেনের সহযোগী ক্রিস কুনস সংবাদ মাধ্যম পলিটিকোকে বলেন, যদি জার্মানরা বলে যে, আমেরিকানরা আব্রামস পাঠালে তারা লিওপার্ড পাঠাবে তাহলে আমাদের আব্রামস পাঠানো দরকার। বৃটেন এরইমধ্যে বলেছে যে তারা ইউক্রেনে চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক পাঠাবে। পোল্যান্ড এই সপ্তাহে বলেছে যে, তারা লিওপার্ড-২ ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে পাঠাতে চায়। এসব ট্যাংক যেহেতু জার্মানিতে তৈরি, তাই বার্লিনকে তাদের রপ্তানির অনুমোদন দিতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের তথ্য অনুসারে, অন্তত ১৬টি ইউরোপীয় ও ন্যাটোভুক্ত দেশের কাছে লিওপার্ড-২ ট্যাঙ্ক রয়েছে। এদের সবাই ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠাবে না। কিন্তু জার্মানি বলছে, চাইলে যে কেউ পাঠাতে পারে, তারা আপত্তি করবে না। বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক করেসপনডেন্ট জনাথন বিয়েল বলেন, ইউক্রেন মনে করে ৩০০ আধুনিক ট্যাংক পেলে তারা যুদ্ধে জিততে পারবে। কিন্তু তাদের প্রয়োজন মতো ট্যাংক পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু যদি আধা ডজন পশ্চিমা দেশের প্রত্যেকে ১৪টি করে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করে, তাহলে এটি ট্যাঙ্কের সংখ্যা প্রায় ১০০র কাছাকাছি নিয়ে যাবে, যা যুদ্ধে পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
বৃটেনের চ্যালেঞ্জার-২, জার্মানির লিওপার্ড-২ এবং মার্কিন তৈরি আব্রামসসহ পশ্চিমা ট্যাঙ্কগুলো সোভিয়েত যুগের একই ধরণের ট্যাঙ্ক টি-৭২ এর থেকে উচ্চমানের। এই ট্যাঙ্কগুলো ইউক্রেনীয় বাহিনীর সদস্যদের আরও বেশি সুরক্ষা, গতি এবং নির্ভুলতা দেবে। কিন্তু পশ্চিমা আধুনিক প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্কগুলি নিজেরাই কোনো বিস্ময়কর অস্ত্র বা গেম-চেঞ্জার নয়। বরং সেগুলোর সাথে অন্য কী ধরণের অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতি পশ্চিমাদের সরবরাহ করা ভারী অস্ত্রে পরিবর্তন এসেছে। আরো শত শত সাঁজোয়া যান, আর্টিলারি সিস্টেম এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ট্যাংক দেয়ার খবরকে ‘সরাসরি উস্কানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।