ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

‘যুদ্ধশিশুর’ প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের মেরিনা

সুজন সরকার, সিরাজগঞ্জ থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার
mzamin

১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশের উত্তরপাড়ার মৃত ফাজিল আকন্দের স্ত্রী পচি বেওয়া। স্বাধীনতার পর পিতৃপরিচয়হীন ভূমিষ্ঠ হন মেরিনা খাতুন (৫১)। এরপর থেকেই সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে দিনের পর দিন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০১৮ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে গেজেটভুক্ত হন পচি বেওয়া। এর আগে ২০০৫ সালের ১৮ই এপ্রিল তিনি মারা যান। নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পচি বেওয়ার মেয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন। তিনি হলেন, তাড়াশ উপজেলার ওয়াপদা বাঁধ এলাকার ওমর আলীর স্ত্রী মেরিনা খাতুন। গত ৯ই জানুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম রোহেলের সই করা এক পত্রের মাধ্যমে মেরিনা খাতুনকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। গতকাল সকালে মেরিনা খাতুন ও তার স্বামী ওমর আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে তাড়াশের বীরাঙ্গনা পচি বেওয়ার (মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) কন্যা মেরিনা খাতুন যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য ২০২২ সালের সেপ্টম্বর মাসের ৮ তারিখে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।

বিজ্ঞাপন
এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৮২তম সভায় মন্ত্রী বিষয়টি উত্থাপন করেন। সেখানে যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনা খাতুনকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকাররা তাড়াশের উত্তর পাড়ার মৃত ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে (বর্তমানে মৃত) বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় পাক বাহিনীর সামরিক ক্যাম্পে। তারপর সেখানে তারা ওই বীরাঙ্গনার ওপর পাশবিক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। আর পাক-হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের ফলে জন্ম হয় যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের। অবশ্য ২০১৮ সালে পচি বেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। দেশের প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে মেরিনা খাতুন বলেন, আমাকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত সম্বলিত পত্র হাতে পেয়েছি। এতে আমি আনন্দিত। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের মতো যুদ্ধশিশুদের আর্থিকভাবে সম্মানী দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি। মেরিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বড় হয়ে তার মায়ের কাছ থেকে জেনেছেন, পিতৃপরিচয়হীন আমাকে পেটে ধারণ করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন মা। আর বর্তমানে যুদ্ধশিশু হিসেবে আমিও মায়ের মতোই অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত জীবন-জীবিকা নিয়ে যুদ্ধ করছি। বর্তমানে আমার ১০ সদস্যের অভাব-অনটনের সংসারে স্বামীর একটি অটোভ্যান আর ছেলের চা বিক্রির টাকায় কোনোমতে চলেছি। তাই আমি চাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মায়ের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সুবিধা। ১৯৭১ সালের চলনবিলের যুদ্ধকালীন সংগঠন পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাড়াশের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক সাইদুর রহমান সাজু জানান, যুদ্ধশিশু মেরিনার জীবন যেন ৭১ এর যুদ্ধের গল্পের মতোই করুণ। কেন না ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকাররা পচি বেওয়াকে বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনীর সামরিক ক্যাম্পে পাশবিক নির্যাতনের ফলে জন্ম হয় যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের। এর চেয়ে আর নির্মম কি হতে পারে? পরে মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালে তাড়াশের ওমর আলীর সঙ্গে কিশোরী যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের বিয়ে হয়। বর্তমানে তিন ছেলে ও এক মেয়ের মা। তাড়াশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আরশেদুল ইসলাম জানান, যুদ্ধশিশু মেরিনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্যও আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাকে তাড়াশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status