তথ্য প্রযুক্তি
স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ: মোস্তাফা জব্বার
স্টাফ রিপোর্টার
(২ বছর আগে) ২২ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৭:৩৩ অপরাহ্ন

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন,বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নানা আইন-কানুনে বস্তুগত সম্পদের মালিকানাটা নিজের রাখতে পারছি। কিন্তু মেধাস্বত্ব আমরা এখনও নিজের করে রাখার ব্যপারে যত্নশীল না। কপিরাইটের ব্যাপারে নিজেদের অনেক অনাগ্রহ লক্ষ্য করছি। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইনোভেশন ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,ইনোভেশন সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আজ গুলশান রবি আজিয়াটা প্রধান কার্যালয়ে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোটার্স’ নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এবং দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড আয়োজিত স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের গুরুত্ব শীর্ষক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রবির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, মেধাসম্পদ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের হয়রানি কমাতে এবং আগ্রহ বাড়াতে সংস্কৃতি ও শিল্প মন্ত্রণালয় নয়, একক আইপি অফিস থাকা উচিত। যেখানে একসাথে কপিরাইট ও প্যাটেন্ট সনদ নেয়া যাবে। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বই, নাটক, সিনেমা ছাড়া ১৯৯৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলো না মেধাসম্পদের। যারা মনে করছেন মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ফলে তারা কোনো সুবিধা পাবেন না- তা ঠিক নয়। যেমন- রবি এতোদিন যে পরিশ্রম করে নিজেদের ভ্যালু দাঁড় করালো, তার কোনো ট্রেডমার্ক থাকবে না, তা তো না। এই ট্রেডমার্কটা তাদের পরিচয় বহন করে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন,মনুষ্যসৃষ্ট মেধা স্বত্ব দিচ্ছি, কিন্তু আর্টিফিশিয়াল মেধার অনুমোদন নেই। এই জায়গায়ও কাজ করা জরুরি। কপিরাইট আইন এখন সংশোধন হচ্ছে, এই সময়েই আর্টিফিশিয়াল বা রোবটিক্স মেধার কপিরাইটটা কি হবে তা-ও ঠিক করে নিতে হবে। তিনি আরো বলেন,ওটিটি প্লাটফর্মসহ যেকোনো প্লাটফর্মেই যা তুলে ধরবেন, তার দায় আপনাকে নিতেই হবে। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়গুলো নিয়ে মিডিয়াকে আরো আলোচনার সুযোগ করে দিতে হবে, এক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মোস্তফা জব্বার বলেন,মানুষ এবং যন্ত্র দুটোর সমন্বয় করেই পঞ্চম শিল্প বিপ্লব সামলে নিতে হবে। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকেই অগ্রগণ্য রাখতে হবে। তবে যন্ত্রের সক্ষমতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে গ্রাহককেও বুঝতে হবে, সে কী কাজে ব্যবহার করবে। অনুষ্ঠানে রবি সিইও রাজীব শেঠী বলেন,করোনাকাল থেকে এখন পর্যন্ত ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো হলো সবচেয়ে লাভজনক খাত। তাদের আইপিআর খুব শক্ত। এ সময় টেকনোলজির ওপর গুরুত্বারোপ করে রাজীব শেঠী বলেন, কপিরাইট, প্যাটেন্ট আইনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে অন্যরা আমাদের স্বত্ব নিয়ে নিতে না পারে। রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন,শুধু কানেক্টিভিটি নিয়েই মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের কপিরাইট,ট্রেডমার্ক, প্যাটেন্টের দিকে একটু মনোযোগ দিতে হবে। টিআরএনবি এর সভাপতি রাশেদ মেহদেীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। তার বক্তব্যে উঠে আসে, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন অবস্থান করছি। সেখান থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। আমাদের প্রযুক্তিগত ও তথ্যগত ডাটা বিশ্লেষণ করে জনগণের বিশেষ করে তরুণদের জন্য সরকার যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে, সেখান থেকেই স্মার্টনেসের উদ্ভব হবে। ডাটা সংরক্ষণ, মেধাস্বত্ব, ভ্যালু এডেড সার্ভিস- ভাস গাইডলাইন, ওটিটি রেগুলেশন, নন ফাংগিবল টোকেনস-এনএফটি ইত্যাদির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। মূল বক্তব্যে আরো তুলে ধরা হয়, স্মার্ট ডায়নামিক্সের জন্য আইনী কাঠামো, বন্ধুত্বমূলক রেগুলেটরি নীতি, স্টেকহোল্ডারদের সচেতন করা, স্মার্ট মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। এরপর গোলটেবিল আলোচনায় কপিরাইট নিরীক্ষক সৈয়দা নওরীন জাহান নিশা বলেন, “গত পাঁচ বছরে ডিজিটাল কনটেন্ট রেজিস্ট্রেশন চলছে। কিন্তু যখন আর্থিক বিষয়টি আসে, তখনই দ্বন্দ্বের শুরু। বর্তমান কপিরাইট আইন দিয়ে এগুলো কাভার দেয়া সম্ভব নয়। তাই আগের আইনটি সংশোধন করে ইতোমধ্যে কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে। ই-ক্যাব এর সহসভাপতি শাহাবুদ্দিন শিপন বলেন, মেম্বারদের মেধাস্বত্ব যাতে হারিয়ে না যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন তারা। এসময় স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ই-কমার্সের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি কিছু সমস্যার আলোকপাত করেন। বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন,কপিরাইট নিয়ে কথা হলেও প্যাটেন্ট নিয়ে তেমন কথা হয়ই না। আইপিআর নিয়ে তেমন পরিস্কার কোনো ধারণা দেয়া হচ্ছে না। এসময় তিনি কিছু প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন,সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে কপিরাইট কেন নয়? কপিরাইট শুধু গান, নাটকের জন্য কেন? কেন আমার প্রোডাক্টের জন্য নয়? এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এস এম ফরহাদ বলেন, মোবাইল অপারেটরদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ গ্রাহকদের ডাটা সংরক্ষণ করা। ওটিটি ও ভাস- নিয়ে কথা হচ্ছে। এগুলো নিয়েও টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠান শেষে রবির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে টিআরএনবি সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এবং রবি’র সিইও রাজীব শেঠী ।