দেশ বিদেশ
চট্টগ্রামে ক্লাব ভবন দখল করতে মসজিদে তালা
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১৭ মে ২০২২, মঙ্গলবারচট্টগ্রাম নগরীতে একটি ক্লাব ভবনে থাকা মসজিদ (ইবাদতখানা) বন্ধ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অভিযোগ উঠেছে, ক্লাব ঘরটি দখল করতে একটা প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে কয়েকজন যুবক রাতের অন্ধকারে এসে এই মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়। একইসঙ্গে সেখানে ঢুকতে চাইলে দেখে নেয়া হবে বলে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়। ফলে সাহস করে কেউ তালা ভেঙে ভেতরে না ঢোকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পারছেন না মুসল্লিরা।
চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জলসা ক্লাব। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি ওই এলাকায় চালিয়ে আসছে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে ক্লাব ঘরে তারা একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিদিন শতাধিক মুসল্ল্লি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন সেখানে। জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় গেল রমজানেও এই মসজিদে তারাবি নামাজের আয়োজন করা হয়। কিন্তু ১০ রমজানের সূরা তারাবি নামাজ শেষে ১২ই এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাতের অন্ধকারে কিছু ব্যক্তি এসে মসজিদের গেটে তালা লাগিয়ে দেন। পরে ফজরের নামাজ আদায় করতে এসে এলাকার মুসল্লিরা ইবাদতখানায় তালা মারা দেখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুসল্লি বলেন, ‘লালখান বাজার এলাকার এক জনপ্রতিনিধি দীর্ঘদিন ধরে জলসা ক্লাবের জায়গাটি দখল করে ভবন নির্মাণ করতে চাচ্ছিলেন। তবে ক্লাব ঘরে থাকা মসজিদের কারণে সেটা পারছিলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত তার অনুসারী বলে পরিচিত স্থানীয় যুবলীগ নেতা সুন্দর ফিরোজকে দিয়ে মসজিদের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। এই ফিরোজ খুব প্রভাবশালী। তার বিরুদ্ধে একটা হত্যা মামলাও আছে। যে কারণে কেউ সাহস করে কথা বলছেন না।’ জলসা ক্লাবের দারোয়ান আবুল কাশেম বলেন, ‘প্রতিদিন মসজিদে সবাই নামাজ পড়েন। ১১ রমজানের দিন সকালে এসে দেখি কে বা কারা মসজিদের দরজায় তালা মেরে দিয়েছেন। বিষয়টি আমি সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের সেক্রেটারি সাহেবকে জানিয়েছিলাম। এরপর সবাই এসে অনেক চিল্লাচিলি করেছেন। কিন্তু কেউ তালা ভেঙে আর মসজিদে ঢোকেননি। শুনেছি এলাকার এক নেতা কাজটি করেছেন। তবে আমি তার নাম বলতে পারবো না।’
এদিকে মসজিদে তালা মারার ব্যাপারে জানতে চাইলে জলসা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন হাজারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্লাব ঘরের এই মসজিদে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হতো। সেদিন রাতে কিছু সন্ত্রাসী এই মসজিদে তালা মেরে দেয়। এরপর থেকে আর সেখানে নামাজ আদায় হচ্ছে না। যতটুকু জেনেছি, ক্লাব ঘর ও মসজিদের জায়গা দখলের জন্য একটি মহল চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে এ কাজটি করেছেন। বিষয়টি আমরা খুলশি থানাকে অবহিত করেছি। তবে পুলিশ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আপনি কেন তালা ভেঙে মুসল্লিদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে আমজাদ হাজারী বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের লোকেরা আসলে ভালো হতো। কারণ মসজিদের আশপাশে কতিপয় দুর্বৃত্ত সর্বদা ঘোরাফেরা করছেন। আমরা কেউ তালা ভাঙতে গেলে যেকোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে। তাই আমি তালা ভাঙা থেকে বিরত আছি। এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা মানবজমিনকে বলেন, ‘আমরা ওইভাবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে এ বিষয়ে অবগত আছি। আর যতটুকু জেনেছি ক্লাব ঘর ও মসজিদের জায়গাটি জেলা প্রশাসনের। ওই জায়গার স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনের একটা সিদ্ধান্তও হয়েছিল। পরে হাইকোর্টের একটা স্টে অর্ডারের কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। এখন ওই সরকারি জায়গা দখল করতে বিভিন্নজন বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন।’