দেশ বিদেশ
২০ দিন ধরে নিখোঁজ রনি
সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতি মায়ের
ফাহিমা আক্তার সুমি
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবারআমার সন্তানটি ২০ দিন ধরে নিখোঁজ। সে কোথায় আছে? তার কোনো সন্ধান নেই। আমার ছেলেকে খুঁজে দেন। মনে হচ্ছে সে বড় কোনো বিপদে আছে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ আমাদের। দাঁড়ানোর শক্তিটুকু পাচ্ছি না। সন্তানকে খুঁজে পেতে আকুতি জানিয়েছেন আনোয়ারা বেগম। ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ হন রায়হান ইসলাম রনি (২৬)। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে এক বছর ধরে একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।
তখন আমাকে সালাম দিয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলো। কিছুক্ষণ কথা বলে বললো আম্মা রাখো ঘরে কিছু নেই, আমি বাসার নিচে বাজার করতে যাবো। এই কথা বলে ফোন রেখে দেয়। এরপর শনিবার আমার কাছে খবর আসে সে শো-রুমে যায়নি। এরপর আমি বার বার ফোন দিতে থাকি এখন পর্যন্ত ফোন খোলা পাইনি। ছেলে আমার নিখোঁজ। আমি তো মা কীভাবে সহ্য করবো সন্তানকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট। আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি না। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার কোনো মেয়ে নেই ৩টা ছেলে নিয়ে আমার বেঁচে থাকা। তিন ছেলের মধ্যে রনি মেজো। বড় ছেলেটাও ঢাকায় একটি সরকারি চাকরি করে। ছোট ছেলে আমাদের সঙ্গে ঠাকুরগাঁও থাকে। ছেলের জন্য নামাজ পড়ে কাঁদছি। রনি শেষ কোরবানির ঈদে বাড়িতে এসেছিল। ৪-৫ দিন ছিল। যাওয়ার সময় আমি বলে দিলাম ভালোভাবে থাকার জন্য। আমার ছেলেটার পরিবারের ওপর কোনো রাগ বা অভিমান নেই। সে খুবই শান্তশিষ্ট। রনির বড় ভাই মো. আল আমিন বলেন, রনি পড়াশোনার পাশাপাশি মোহাম্মদপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানির শো-রুমে চাকরি করতো। আমার বাবা মো. দুলাল হোসেন কৃষিকাজ করেন।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে রসায়নে অনার্স শেষ করছে সে। মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ২০২১ সালের ২৫শে জানুয়ারি সে ঢাকায় আসে। এরপর আরএফএল গ্রুপের রেইনবোর শো-রুমে চাকরি শুরু করে। সেখানে ম্যানেজার পদে ছিল। ৩০ হাজার টাকা বেতন পেতো। মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া মাদ্রাসার সামনে শো-রুমটি। ওর অনেক বন্ধু ছিল কিন্তু ঢাকায় তার কোনো স্থানীয় বন্ধু ছিল কিনা জানি না। সপ্তাহে একদিন আমার বাসায় আসতো। আমরা যাদের সন্দেহ করেছিলাম তারা কেউ রনির নিখোঁজের ব্যাপারে জানে না। ওর কোম্পানির ভেতরে কোনো শত্রু আছে কিনা সেটাও কিন্তু আমরা জানবো না। ও পড়াশোনার মাঝেই এই চাকরিতে আসে। প্রথমে এসআর পদে যোগ দেয়। পাঁচ-ছয় মাস পর তার ম্যানেজার পদে প্রমোশন হয়। ওর বন্ধু-বান্ধব কোম্পানি সবদিকেই সন্দেহ হচ্ছে। তিনি বলেন, ১০ তারিখ শনিবার সকাল ৮টায় তার শো-রুম খোলার কথা ছিল। সে বাসা থেকে বের হওয়ার পর ৮:২০ মিনিটে তার মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তার এরিয়া ম্যানেজার আমাকে দুপুর ১২টায় খবর দেন। বলেন ভাই রনি তো আজ শো-রুম খোলেনি একটু দেখেন। পরে আমি সব জায়গা খোঁজ-খবর নেই। ১০ তারিখ থেকেই সে নিখোঁজ। তাকে ফোন দিয়ে বন্ধ পাই। রনি রুম থেকে বের হওয়ার আগে তার শো-রুমের একটি ছেলেকে মেসেজ করেছিল আমি সাভারে যাচ্ছি ওইখানে শো-রুমের কাজ আছে, দ্রুতই চলে আসবো।
এই মেসেজটি করার ২ মিনিট পর তার মোবাইলটি বন্ধ হয়েছে। পরের মেসেজগুলো সে আর দেখেনি। সারাদিন ভাই ফিরে আসার অপেক্ষার পর আমি বিকালে যাই। এরপর সন্দেহ হলে মোহাম্মদপুর থানায় যাই। সেখানে ২৪ ঘণ্টা পার না হলে তারা জিডি নিবে না। ২৪ ঘণ্টা পার হলে আবার যাই। ওই কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার মো. ইকরামুল হক থানায় আসেন। তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নম্বর-৯২০। তিনি আরও বলেন, পুলিশ তার মোবাইল ফোনের লোকেশন খুঁজে পায়নি। এর আগে একটি সিম তার ফোনে অ্যাক্টিভ দেখা যায় যার লোকেশন পায় সাতকানিয়া এলাকায়। এর ৪-৫ দিন পর আরেকটি রবি নম্বর অ্যাক্টিভ দেখা যায় সেখানে লোকেশন আসে কক্সবাজারের রামুতে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাদেরিয়া মাদ্রাসার পাশে ৪/৯ নম্বর তার বাসা। পেছনে শোরুম। তার সঙ্গে আরও দু’জন থাকতো। তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। সে এমন না যেকোনো হতাশায় বা কোনো ঝামেলায় ছিল। এমন কখনো মনে হয়নি আমাদের। তার রুমমেটরা বলেছে রনি সবসময় বাসার মধ্যে হাসিখুশি থাকতো। একসঙ্গে টিভি দেখতো। ঘটনার দিন রুমমেটরা ছিল না। মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ফারুকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। নিখোঁজের বিষয়টি এখনো ধোঁয়াশা। আমরা রায়হান ইসলাম রনির সন্ধানে কাজ করছি। মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মুজিব পাটোয়ারী মানবজমিনকে বলেন, রনির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।