বিশ্বজমিন
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আশ্বাসের মধ্যেই হামলায় নিহত আরও ৮২ ফিলিস্তিনি
মানবজমিন ডেস্ক
(১ দিন আগে) ৭ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ৪:৩১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:১৩ পূর্বাহ্ন

একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির আশা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে অব্যাহত গতিতে গাজায় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে ইসরাইল। তারা অপ্রতিরোধ্য গতিতে নিরীহ মানুষের ওপর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। রোববার শুধু একদিনে তারা হত্যা করেছে কমপক্ষে ৮২ ফিলিস্তিনিকে। এর মধ্যে শুধু গাজায় নিহত হয়েছেন ৩৯ জন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি এই সপ্তাহেই কার্যকর হতে পারে। এমন আশার বাণী কয়েক সপ্তাহ ধরেই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যে ইসরাইল যে হত্যা মিশন চালাচ্ছে তা বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। রোববার ভোররাতে গাজা শহরের শেখ রাদওয়ান এলাকায় আঘাত হানা ইসরাইলি বোমা বিস্ফোরণের পরবর্তী দৃশ্যকে ‘অ্যাপোক্যালিপ্টিক’ বা ‘প্রলয়ের মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ আল-শেইখ সালামা বলেন, রাত ২টার দিকে একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে, তারপর আরেকটি। আমরা ছুটে যাই। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়ে চারটি পরিবার। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় কেবল দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি। বাকি সবাই শহীদ হয়েছেন।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, এই হামলাগুলোর মাত্রা ও তীব্রতা যুদ্ধের শুরুর সপ্তাহগুলোর নির্মম স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে গাজা জুড়ে সাতটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। গাজা শহরের নেটজারিম করিডোরসহ বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে ইসরাইলি সেনারা গুলি চালায়। তাতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষদিক থেকে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফোর্স (জিএইচএফ) পরিচালিত সাইটগুলোতে ইসরাইলি হামলায় ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ সাইটের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সেখানে দুই আমেরিকান ঠিকাদার আহত হয়েছে দুই গ্রেনেড হামলায়। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে দায়ী করলেও, গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আমরা জোরালোভাবে অস্বীকার করছি যে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধযোদ্ধারা আমেরিকান কর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই কাতারে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়েছে। একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, এই আলোচনায় মূলত বন্দিবিনিময় ও চুক্তি বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে কথা হচ্ছে। রোববার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিশ্বাস এই সপ্তাহেই একটি চুক্তি হতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে অনেক বন্দিকে ফিরিয়ে এনেছি। আমার ধারণা, হামাসের সঙ্গে এই সপ্তাহেই একটি সমঝোতা হবে। তিনি আরও জানান, ইসরাইল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার বৈঠক রয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর আসল লক্ষ্য যুদ্ধের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন এবং নিজের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলা থেকে মুক্তি পাওয়া। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদনান হায়াজনে আল জাজিরাকে বলেন, ইসরাইল আসলে যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী নয়। গাজায় তারা চায় ‘জনবিহীন একটি ভূমি’। ফিলিস্তিনিদেরকে তারা দিচ্ছে তিনটি বিকল্প- ক্ষুধায় মরো, গুলিতে মরো, কিংবা দেশ ছেড়ে চলে যাও। কিন্তু এখনো পর্যন্ত, ফিলিস্তিনিরা প্রমাণ করেছে তারা তাদের ভূমি ছেড়ে যাবে না।