বিশ্বজমিন
ইরানের প্রেসিডেন্টের দাবি
আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে ইসরাইল
মানবজমিন ডেস্ক
(১০ ঘন্টা আগে) ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১:২৭ অপরাহ্ন

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ইসরাইল তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। মার্কিন রক্ষণশীল সাংবাদিক এবং ফক্স নিউজের সাবেক সঞ্চালক টাকার কার্লসনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান এই দাবি করেন। সাক্ষাৎকারটি সোমবার প্রকাশিত হয়। কার্লসনের প্রশ্নে জবাব দিতে গিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন- হ্যাঁ, তারা চেষ্টা করেছিল। তারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছিল, তবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি ঘটনাটি কবে ঘটেছে। শুধু জানান, একটি বৈঠকের সময় এই হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। পেজেশকিয়ান বলেন, আমি একটি বৈঠকে ছিলাম। তারা সেই এলাকা বোমা হামলার লক্ষ্য করেছিল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন মিডল ইস্ট আই।
পেজেশকিয়ান বলেন, দেশের জন্য আত্মা উৎসর্গ করতেও ভয় পাই না। আমাদের সরকারের কোনো কর্মকর্তাই দায়িত্ব পালনের পথে প্রাণ হারানোর ভয় করেন না। কিন্তু আরও রক্তপাত, হত্যা কি সত্যিই এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনবে? সাক্ষাৎকার জুড়েই তিনি একাধিকবার বলেন, ইরান যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায় এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্র এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। কার্লসনের পারমাণবিক ইস্যুতে প্রশ্নের জবাবে পেজেশকিয়ান বলেন, আমরা অতীতে কখনও পারমাণবিক বোমা বানাতে চাইনি। এখন চাই না। ভবিষ্যতেও চাই না। কারণ এটা ভুল। এ কাজ আমাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার জারি করা ধর্মীয় আদেশের বিরোধিতা করে। তিনি আরও বলেন, পারমাণবিক বোমা তৈরি করা ইসলাম ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা সবসময়ই তা প্রমাণ করেছে।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। পর্যবেক্ষণ মেনে নিতে রাজি। পেজেশকিয়ান মনে করিয়ে দেন, ১৩ জুনে ইসরাইলের অযৌক্তিক হামলা কূটনৈতিক আলোচনার পথ বন্ধ করে দেয়। পেজেশকিয়ান জানান, ইরান আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় বসতে রাজি। তবে গত কিছু সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর পর আমেরিকার ওপর আস্থা নেই। তিনি বলেন, আলোচনায় ফেরার পথে প্রধান বাধা হলো আস্থার ঘাটতি। আমরা কীভাবে জানবো, আলোচনা চলাকালীন আবারও ইসরাইলকে আমাদের ওপর হামলা করার সুযোগ দেওয়া হবে না? আমার প্রস্তাব হলো, যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যের যুদ্ধ থেকে দূরে থাকতে হবে। এটি আমেরিকার যুদ্ধ নয়, এটি নেতানিয়াহুর যুদ্ধ। তার লক্ষ্যই হলো চিরকালীন যুদ্ধ- একটি শেষ না হওয়া যুদ্ধ।
পেজেশকিয়ান বলেন, তার মূল লক্ষ্য শান্তি। তিনি বিশ্বাস করেন ইরান-আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব সংলাপের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য। তার ভাষায়- আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে থেকেছি। এই অল্প জীবনে আমাদের উচিত শান্তি ও সম্প্রীতিতে থাকা। আমরা এই পৃথিবীতে সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় এসেছি এবং শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করাই সঠিক পথ। পেজেশকিয়ান বলেন, গত দুই শতাব্দীতে ইরান কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেনি বরং যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি ইরান-ইরাক যুদ্ধ এবং ইসরাইলের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ট্রাম্প এমন একজন নেতা যিনি বিশ্বকে এবং এই অঞ্চলকে শান্তির পথে পরিচালিত করতে পারেন। তিনি যথেষ্ট ক্ষমতাবান, ইসরাইলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। যদি তা না করেন, তাহলে এই যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়বে, যা আমেরিকার স্বার্থে নয়। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বলেছেন, আমরা আইএইএর ওপরও আস্থা হারাচ্ছি। তাদের শেষ রিপোর্টগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যা ইসরাইলকে হামলার সুযোগ করে দেয়। তারপরও আইএইএ এসব হামলার নিন্দা করেনি। পেজেশকিয়ান বলেন, ইরান সামরিকভাবে চীন বা রাশিয়ার সহযোগিতা চাইবে না। আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করি। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম।