বিশ্বজমিন
এমএনএস নেতার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এতটাই মদে বুঁদ ছিল, তার মনেই ছিল না সে অর্ধনগ্ন
মানবজমিন ডেস্ক
(১১ ঘন্টা আগে) ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:২৬ অপরাহ্ন

মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-এর এক নেতার ছেলের গাড়ির ধাক্কা, গালিগালাজ ও হুমকির শিকার হয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন নেইল (নখ) আর্টিস্ট রাজশ্রী মোরে। এনডিটিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি এতটাই মাতাল ছিলেন যে, বোঝার মতো অবস্থায় ছিল না তিনি অর্ধনগ্ন। তবে পিতার রাজনৈতিক প্রভাব যে কতটা, তা খুব ভালো করেই মনে ছিল তার। তিনি বলেন, আমি এখন ভীষণ ভীত। বাইরে বের হতে ভয় পাই। আমি মনে করি আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরেকে অনুরোধ করেন যেন, দলের কর্মীরা অ-মারাঠি মানুষদের টার্গেট না করেন। মুম্বাই তার বহুত্বের জন্যই আজ এত সফল শহর।
ঘটনার দিন রাজশ্রী মোরে গোরেগাঁও থেকে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। আন্দেরিতে এসে একটি এসইউভি গাড়ি তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন এমএনএস মহারাষ্ট্রের সহসভাপতি জাভেদ শেখের ছেলে রাহিল শেখ। তিনি বলেন, প্রথমে সেটিকে দুর্ঘটনা ভেবেছিলেন। কিন্তু একইভাবে আবারও ধাক্কা দেওয়া হলে তিনি বুঝতে পারেন এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজশ্রী বলেন, আমি এক সরু গলির মধ্যে ঢুকে যাই। সেখানে একসঙ্গে শুধু একটি গাড়ি চলতে পারে। তাতে আমার গাড়িকে টার্গেট করাটা ওর পক্ষে আরও সহজ হয়। আমার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি গাড়ি লক আছে কিনা, তারপর দু’জন কনস্টেবলকে দেখতে পেয়ে সাহায্য চাই। তারা আমার গাড়িতে উঠে পড়েন। কিন্তু তখনও গাড়িটিকে আবার ধাক্কা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, পুলিশ রাহিল শেখকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি গাড়ি থামাতে রাজি হয় না। শেষ পর্যন্ত থামানো হলে, পুলিশ তার চাবি চায়। কিন্তু সে তা দিতে অস্বীকার করে। তার পরিচয়পত্র নেয়ার পর বোঝা যায় তিনি রাহিল শেখ। আমাকে দেখেই গালিগালাজ শুরু করেন। তখনই আমি ভিডিও রেকর্ডিং শুরু করি। তিনি তখন মাতাল ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিলেন। তার প্যান্ট পর্যন্ত সরে যাচ্ছিল। তিনি এটা বুঝতে পারছিলেন না যে, কী অবস্থায় আছেন। কিন্তু তার মনে ছিল তিনি এমএনএসের ছেলে। তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, আমার এই কাজের খেসারত দিতে হবে। বলেন, আমি এমএনএসের, আমার বাবা এমএনএসের। থানায় যা, বুঝতে পারবি আমি কে। ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ ঠাকরের বাড়ি থেকে নিয়ে নে।
রাজশ্রী জানান, থানায় নিয়ে যাওয়ার পরও রাহিল পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তিনি নিজের পা টেবিলের ওপর তোলেন এবং পুলিশকে বলেন, তার বাবা সবাইকে কিনে নেবেন। এর আগেও এমএনএস কর্মীদের সঙ্গে রাজশ্রীর একবার বিরোধ হয়, যখন তিনি মুম্বাইয়ে একটি দোকানি মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ করে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, ভাষা চাপিয়ে না দিয়ে বরং মারাঠিদের কঠোর পরিশ্রম করতে শেখানো উচিত। যদিও তিনি নিজেও মারাঠি, তবুও তার বক্তব্যে কিছু এমএনএস কর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। পরবর্তীতে তিনি ভিডিওটি মুছে ফেলেন। রাজশ্রী বলেন, আমি এখন খুব ভয় পাই। ডোরবেল বেজে উঠলেই আতঙ্কিত হয়ে যাই। বাইরে যাওয়ার আগে বারবার ভাবি। কারণ, একজন মারাঠি মেয়ে হয়েও আমি যদি ভিন্ন রাজ্যের মানুষের পক্ষে কথা বলি, আমাকে টার্গেট করা হয়।
তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে কিছু চাননি, তবে তার আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে তা বিবেচনা করবেন। রাজ ঠাকরেকে উদ্দেশ করে রাজশ্রী বলেন, আমি রাজনীতি করি না। আমি বিজেপি, কংগ্রেস, শিবসেনা বা এমএনএস- কারো সমর্থক নই। আমার স্টুডিওতে ৫০ জন মানুষ কাজ করেন। তার মধ্যে ৩৫ জন মারাঠি, বাকিরা অন্য রাজ্যের পরিশ্রমী মানুষ। মুম্বই আমাদের মা। সে সবাইকে খাবার দেয়, সবাইকে আশ্রয় দেয়। এখানে যারা আসেন, তারা কেবল পরিশ্রম করতে আর নিজের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে আসেন। যদি মারাঠি সমাজ নিয়ে এতই উদ্বেগ থাকে, তাহলে সেইসব মহিলাদের সাহায্য করুন, যাদের স্বামীরা মদ্যপ হয়ে গায়ে হাত তোলে বা ত্যাগ করে গেছে।
শেষে এক আবেগপূর্ণ আবেদন জানিয়ে রাজশ্রী বলেন, আমার একটি অনুরোধ- একজন মারাঠি মেয়ে হিসেবে যে হয়রানির শিকার হচ্ছি, তা বন্ধ করুন। আমার জীবন, পরিবার বা ব্যবসার যদি কিছু হয়, তাহলে যারা আমাকে টার্গেট করছে, সেই রাজনৈতিক দল দায়ী থাকবে। তিনি বলেন, তিনি আগের ভিডিওটি মুছে ফেলেছেন। কারণ এক এমএনএস নেতা তার স্টুডিও ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমি ক্ষমা চাইনি। কারণ আমি কোনো ভুল করিনি।