বিশ্বজমিন
তাহাব্বুর রানার স্বীকারোক্তি
২৬/১১ হামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ
মানবজমিন ডেস্ক
(১ দিন আগে) ৭ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ৪:২৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

২৬/১১ মুম্বাই হামলার অন্যতম মূল ষড়যন্ত্রকারী তাহাব্বুর হুসেইন রানা’কে দীর্ঘ কূটনৈতিক লড়াইয়ের পর সম্প্রতি ভারতে প্রত্যার্পন করা হয়েছে। মুম্বই পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চ সূত্র বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ৬৪ বছর বয়সী রানা ২০০৮ সালের সেই বিভীষিকাময় সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন কমপক্ষে ১৭০ জন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। রানা স্বীকার করেছে, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ডেভিড হেডলিকে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসের (সিএসটি) মতো গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল স্থানগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছিল সে। এ ছাড়া সে ভারতের দিল্লি, মুম্বই, গোয়া, পুষ্কর, পুনে ও জয়পুর শহরে হেডলির সফরের পেছনে পরোক্ষ সহায়তা করেছিল।
১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আর্মি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে রানা। এরপর কোয়েটায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন র্যাঙ্কে ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হয়। সিয়াচেন, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও ভাওয়ালপুরের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় দায়িত্ব পালন করে। সিয়াচেনে থাকাকালীন ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ার সমস্যায় পড়ে এবং পরে সেনাবাহিনীতে অনুপস্থিত থেকে ‘ডেজার্টার’ ঘোষিত হয়। সে বলেছে, হেডলি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে সন্ত্রাসী অভিযানে সহায়তা করলে তার সেনাবাহিনীর রেকর্ড ‘সাফ’ করে দেয়া হবে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আস্থাভাজন হিসেবে গালফ যুদ্ধ চলাকালে তাকে একটি গোপন মিশনে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। পরে সে জার্মানি, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে। কানাডায় স্থায়ী হয়। সেখানে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ, রিয়েল এস্টেট ও মুদি ব্যবসা শুরু করে। রানা ও হেডলি ক্যাডেট কলেজ হাসান আবদালে একসাথে পড়াশোনা করে। হেডলির পিতা ছিলেন পাকিস্তানি এবং মা আমেরিকান। হেডলি তিনটি লস্কর-ই-তৈয়বার প্রশিক্ষণ শিবিরে (২০০৩-২০০৪) অংশ নেয়।
রানা বলে, হেডলি জানিয়েছিল যে লস্কর একটি গুপ্তচর সংস্থার মতো কাজ করে, কেবল একটি মতাদর্শভিত্তিক গোষ্ঠী নয়। ভারতের বিভিন্ন শহরে ইমিগ্রান্ট ল সেন্টার নামে একটি অফিস খুলে হেডলি সেজেছল কর্পোরেট প্রতিনিধি। এই প্রতিষ্ঠানটির ধারণা ও বাস্তবায়ন ছিল রানার। এই অফিস ছিল হামলার আগে গোপন নজরদারির কেন্দ্র। ২০০৮ সালের ২০ ও ২১ নভেম্বর রানা মুম্বইয়ের একটি হোটেলে ছিল। ঠিক হামলার আগে দুবাই হয়ে বেইজিং চলে যায় সে। ২০২৩ সালের একটি ৪০৫ পাতার সম্পূরক চার্জশিটে বলা হয়েছে, জনবহুল এলাকাগুলোর তথ্য সংগ্রহে রানা হেডলিকে সহায়তা করেছিল। ১৪ জন সাক্ষী রানার জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রানার দাবি, ভারতীয় ভিসা সংক্রান্ত ভুয়া কাগজপত্রের দায়ভার ভারতের দূতাবাসের ওপর। কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে, রানা নিজেই হেডলিকে ভুয়া পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশে সাহায্য করেছিল। রানা স্বীকার করেছে, সে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং লস্করে তৈয়বার পরিকল্পনাকারী সাজিদ মির, আবদুর রহমান পাশা ও মেজর ইকবাল, এদের সবাইকে চেনে এবং তাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রেখেছে।