দেশ বিদেশ
কানাইঘাটে বালু উত্তোলন নিয়ে উত্তেজনা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৯ আগস্ট ২০২২, শুক্রবারসিলেটের কানাইঘাটে সুরমায় বালু উত্তোলন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা পরপর দু’দিন বালুখেকোদের তাড়িয়ে দেয়ার পর এখন ওই চক্র ও এলাকাবাসী মুখোমুখি রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে ঝিঙ্গাবাড়ি হাফিজিয়া মাদ্রাসা, পাত্রমাটি, দলইরমাটি ও চরিগ্রামের বেশ কয়েকটি গ্রামের ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য তারা এলাকায় ইজারা ছাড়া বালু উত্তোলনে বাধা দিচ্ছেন। কানাইঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুরমা নদী। প্রতি বছর ড্রেজার দিয়ে নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একটি চক্র বালু উত্তোলন করে থাকে। ইজারা না থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা অবাধে বালু তোলে। এবারের ভয়াবহ বন্যায় কানাইঘাটের সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীর পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে অনেক এলাকা ভাঙনের মুখে পড়েছে। এতে করে এলাকার মানুষ আতঙ্কে আছেন। এই অবস্থায় গত সোমবার স্থানীয় আলমাছ, সালেহ ও ডিপজলের নেতৃত্বে একটি চক্র কানাইঘাটের ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় বালু উত্তোলন শুরু করেন। পাত্রমাটি গ্রামের পাশে ৩টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। এতে করে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। স্থানীয় পাত্রমাটি ও দলইরমাটি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ৩টি ড্রেজারের মাধ্যমে প্রতিদিন ওই এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক বড় ভলগেট কার্গো ভর্তি করে বালু লুট করা হচ্ছে। টাকার অঙ্কে দেখা গেছে প্রায় ২০ লাখ টাকার বালু। লুটপাটকালে তারা যে ড্রেজার নিয়োগ করেছে সেই ড্রেজার নদীর তলদেশ থেকে বালু তুলে ভলগেট কার্গোতে বোঝাই করে। এর ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঝিঙ্গাবাড়ি হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রথমেই পড়েছে হুমকির মুখে। এই মাদ্রাসায় এতিম ছেলেরা লেখাপড়া করে। ড্রেজারে শব্দে তারা রাতের বেলা ঘুমাতেও পারেন না। রাতে ড্রেজারের শব্দে এলাকার মানুষেরও ঘুম হারাম। এদিকে, বালু উত্তোলনের ফলে কানাইঘাট অংশের পাত্রমাটি ও দলইরমাটি এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর ভাঙনের শঙ্কা থেকে বুধবার নদীর তীরবর্তী দু’পারের বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেলা একটার দিকে বাধা দেন। দুই গ্রামের মসজিদে এ নিয়ে মাইকিং করা হলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। বুধবার এলাকার লোকজন লাটিসোটা নিয়ে নদীতীরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানালে বালুখেকো ড্রেজার ও ভলগেট নিয়ে এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দত্তগ্রামে নিয়ে যায়। গতকাল ভোররাত ৩টার দিকে ফের ড্রেজার নিয়ে এসে বালু উত্তোলন শুরু করে। সকালে স্থানীয়রা দেখেন আবার ওই এলাকা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রথমে তারা এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালেও বালুখেকো হুমকি-ধমকি দেয়। পরে এলাকার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে নৌকাযোগে নদীতে নামলে বালুখেকোরা ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দত্তগ্রামে চলে যায়। এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করলে এলাকায় ভাঙন দেখা দেবে। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মাদ্রাসা পড়েছে হুমকির মুখে। বিষয়টি তারা প্রশাসনকে অবগত করেছেন। স্থানীয় পাত্রমাটি গ্রামের বাসিন্দা এবাদুর রহমান গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘যারা বালু উত্তোলন করছে তারা জোরপূর্বকই করছে। কোনো ইজারা নেই ওই এলাকায়। বালু উত্তোলন করে তারা লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছেও। আর এসবের প্রতিবাদ করার কারণে অনেককেই ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, ‘ভয়াবহ বন্যার পর এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি এমনিতেই নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। তার উপর ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় এলাকায় বিপর্যস্ত অবস্থা দেখা দেবে। এ কারণেই স্থানীয়রা বুধবার ও বৃহস্পতিবার বাধা দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। ওখানে বাধা পেয়ে বালুখেকোরা কোনারচর এলাকায় গিয়ে অবস্থান নিয়েছে বলে জানান তিনি।’ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে কানাইঘাট থানার সাব ইন্সপেক্টর সঞ্চিত রায় জানিয়েছেন, ‘যে এলাকা থেকে তারা বালু উত্তোলন করছে সেটি হচ্ছে নদীর অপরপাড়। ওই এলাকা চর এলাকা। তবে, ওই এলাকায় বালু উত্তোলন করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীর কানাইঘাট অংশ। এ কারণে কানাইঘাটের অংশের লোকজন চান না নদীতে বালু উত্তোলন হোক।’ তিনি জানান, ‘গতকালের ঘটনায় এখনো তার কাছে এলাকার কেউ লিখিতভাবে জানাননি। তার কাছে অভিযোগ এলে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।’