খেলা
তাইজুলের আলো শুষে নেয় বিজয়দের ‘কৃষ্ণগহ্বর’
ইশতিয়াক পারভেজ, কলম্বো শ্রীলঙ্কা থেকে
২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে এক অদ্ভুত বৈপরীত্য। একদিকে যখন তাইজুল ইসলামের মতো বোলাররা অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে দলকে লড়াইয়ে রাখছেন, অন্যদিকে এনামুল হক বিজয়দের মতো ব্যাটাররা নিজেদের ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছেন না, যা দলের জন্য ‘কৃষ্ণগহ্বর’ বা ব্ল্যাক হোল হিসেবে কাজ করছে। টাইগারদের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। গতকাল ১১৫/৬ সংগ্রহ নিয়ে ম্যাচের তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। চার উইকেট হাতে নিয়ে শান্তরা ৯৬ রানে পিছিয়ে। যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটাররা প্রথম ইনিংসে ২৪৭ রানে গুটিয়ে গেছে, সেখানে শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে ২৯০ রান করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উইকেটের চরিত্র বদলে গেছে। লঙ্কানরা আগের দিনই বড় সংগ্রহের হুংকার দেয়। এমন পরিস্থিতিতে আরও একবার দলের ত্রাতা হয়ে এলেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ স্পিনার তাইজুল ইসলাম। দেড়শ’ করা নিশাঙ্কাকে সাজঘরে ফিরিয়ে তার শুরু। এরপর একে একে লঙ্কান অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাসহ তুলে নিলেন আরও তিন উইকেট। তার অসাধারণ বোলিংয়ে ৪৫৮ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এটি টেস্ট ক্রিকেটে তাইজুলের ১৭তম পাঁচ উইকেট শিকার। বিদেশের মাটিতে এটি তার পঞ্চম ফাইফার। যা তাকে বসিয়েছে সাকিব আল হাসানের পাশে।
এর আগে সাকিব আল হাসানই একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার ছিলেন, যিনি বিদেশের মাটিতে টেস্টে পাঁচবার ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার সাফল্য দেখিয়েছেন। টাইগার ব্যাটারদের প্রথম ইনিংসে ব্যর্থতার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তবে লঙ্কানরা ২ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রান করলেও হাল ছাড়েননি তাইজুল, নাঈম বা নাহিদরা। সেট ব্যাটসম্যান নিশাঙ্কাকে আউট করেন ১৫৮ রানে । এরপর ধনাঞ্জয়াকে ৭ রানে দেখান সাজঘরের পথ। লোয়ার অর্ডারের থারিন্ডু রত্নায়েকে ১০ রানে তাইজুলের শিকার হন। আগের দিন এক উইকেট তুলে নেওয়া আরেক স্পিনার নাঈম এদিন শিকার করেন আরও দুই উইকেট। দুই স্পিনার মিলে লঙ্কান ৮ উইকেট তুলে নেন। এই টেস্টে প্রথম উইকেটের দেখা পান তরুণ পেসার নাহিদ রানাও। তাইজুল, মিরাজ, নাঈম, নাহিদ রানা মতো বোলাররা যখন শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, তখন দলের টপ-অর্ডারের এই ব্যর্থতা সেই প্রচেষ্টাকে ম্লান করে দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কার ২১১ রানের লিড পেরিয়ে ফলো-অন এড়ানো বা ম্যাচে ফিরে আসার জন্য ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বড় ইনিংসের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বারবার একই ভুল। দ্রুত উইকেট হারিয়ে এখন ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় শান্তরা।
ব্যাটাররা সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করছেন বারবার। অন্যদিকে, বিদেশের মাটিতে তাইজুল ‘চলে না’ এমন একটা প্রচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এখন পর্যন্ত ৫৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে বিদেশের মাটিতে সুযোগ হয়েছে ১৪ টেস্ট খেলার। সেখানে পাঁচবারই তিনি ৫ উইকেট নিয়ে নিজের মান রেখেছেন। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের মাটিতে এটি তার দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট শিকার। এর আগে ২০২১ সালে পাল্লেকেলে টেস্টে একই অর্জন ছিল তার। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর থেকেই তাইজুল ইসলাম বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বোলিংয়ে বৈচিত্র, ধৈর্য এবং উইকেট শিকারের ক্ষমতা তাকে আলাদা করেছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে পেসারদের দাপট থাকলেও তাইজুল ধীরে ধীরে নিজেকে বাংলাদেশের প্রধান স্পিন অস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। তবে তাইজুলদের এই সাফল্যের আড়ালেই চাপা পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের হতাশা। বিশেষ করে, এনামুল হক বিজয় যেন নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। এই সিরিজে তিনি ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। গতকাল শুরুতে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী মনে হলেও শেষ পর্যন্ত উইকেট খোয়ান বাজে শটেই। সিরিজে নিজের সর্বোচ্চ ১৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন বিজয়। থার আগের তিন ইনিংস ছিল ০, ৪, ০। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম অধারাবাহিক। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রান করা সাদমান কাল উইকেট খোয়ান ১২ রানে। দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায় বাংলাদেশকে শুরুতেই চাপে ফেলে দেয়। যা সামাল দিতে পারেননি প্রথম ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকানো নাজমুল হোসেন শান্ত ও সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহীমও। দুইবার জীবন পেয়ে শান্ত করেন ১৯ রান। মুশফিক আউট হন ২৬ রান করে। মুমিনুল হকও সিরিজে ধারাবাহিকভাবে ফ্লপ। সিরিজে একটিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বাংলাদেশ দলের ওয়ানডাউন ব্যাটার। মুমিনুলের সংগ্রহ ২৯, ১৪, ২১, ১৫। দিনের শেষ মুহূর্তে ১১ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজ বিদায় নিয়ে দলের চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দেন আরও।
পাঠকের মতামত
It’s the real face of BD cricket.
Tigers never shame !!