দেশ বিদেশ
সাম্প্রতিক ঘটনা মব নয় প্রেসার: প্রেস সচিব শফিকুল আলম
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবারগণমাধ্যমের উপর সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনাকে ‘মব অ্যাকশন’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আপনারা যেগুলোকে মব বলছেন, আমি সেগুলোকে মব বলছি না, এটা প্রেসার। যারা ১৫ বছর ধরে নিপীড়িত হয়েছেন, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও আইন বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এই সভায় ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ ও ‘জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রেস সচিব বলেন, আমরা একটি ব্যতিক্রমী সময় অতিক্রম করছি। গণমাধ্যমে একক নিয়ন্ত্রণের যুগ আমরা দেখেছি। শেখ হাসিনার শাসনামলে যেভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, আমরা চাই না সেগুলো আমাদের আমলে হোক। সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে তিনটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো- প্রশাসনিক চাপ, আইনকানুন, সামাজিক চাপ ও অর্থনৈতিকভাবে। তিনি দাবি করেন, মন্ত্রী, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসি থেকে ফোন দিয়ে সাংবাদিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতো। আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করছি না, বরং ভুল সংবাদ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের জানিয়ে দিচ্ছি, বলেন তিনি। শফিকুল আলম বলেন, সিএসএ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) বাতিল করা হয়েছে। নতুন সাইবার প্রোটেকশন আইনে কোনো পক্ষের আপত্তি নেই। তিনি বলেন, অতীতে দলীয়করণের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নানা সুবিধা দেয়া হতো, যা সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শফিকুল আলম অভিযোগ করেন, বিগত সময়ে শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করা কিছু সাংবাদিকের অ্যাকাউন্টে হাজার কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। যারা ১৫ বছর ধরে অপ-সাংবাদিকতা করেছেন, তারা এখনো ক্ষমা চাননি। তারা জামায়াত-শিবির বা জঙ্গি তকমা দিয়ে মানুষকে গুমের ভিত্তি তৈরি করেছিল। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের ২৮শে জুলাই শীর্ষ কয়েকজন সাংবাদিক শেখ হাসিনাকে মানুষ হত্যায় উস্কানি দেন, পুলিশ কেন গুলি করছে না এমন কথাও তোলা হয়। এখন আবার তারা নতুন সরকারকে সামনে রেখে সেই সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় সক্রিয় হয়েছেন। গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, দলের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকতা করলে সেই সাংবাদিকতা আর বিশ্বাসযোগ্য থাকে না। গত ১০ মাসে সরকার চেষ্টা করেছে সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। সাবেক আমলে তিনটি জাতীয় নির্বাচনের সংবাদ কাভারেজ নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
ডেইলি স্টারের সামনে গরু জবাই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মব নয়, এটা প্রেসার। যারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা দেখছে, পুরনো ধারার সাংবাদিকতা এখনো চলছে। শফিকুল আলম বলেন, মানুষ এখন আর কাগজের সংবাদ পড়ে না, ভিডিও দেখে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে ভুয়া মন্তব্য ছড়াচ্ছেন। রাজনৈতিক মদদে অনেকেই গুজব ছড়াচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।