দেশ বিদেশ
সিলেটে শিশু হত্যা ও পিতার গলাকাটা নিয়ে নানা রহস্য
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবারঘরটি ভেতর থেকে লক করা। ঘরের ভেতরে ছিলেন স্বামী আতিক, স্ত্রী ঝুমা ও তিন মাসের শিশু সন্তান ইনায়া। হঠাৎ ঘরের ভেতরে চিৎকার। দৌড়ে যান প্রতিবেশীরা। তখনো ঘরের ভেতর থেকে দরজা লক করা। দরজা খুলে দেন ঝুমা। ভেতরে ঢুকে দেখা যায় শিশু ইনায়ার গলাকাটা। লাশ পড়ে আছে মেঝেতে। শিশুর পিতা আতিকের গলাকাটা। জীবিত আছেন। এমন ঘটনায় হতবাক সবাই। রহস্য দানা বাঁধছে। পুলিশ বলছে, তারা রহস্যের কিনারায় পৌঁছেছেন। বক্তব্য শোনা প্রয়োজন শিশুটির পিতা আতিকের। এজন্য এখন তিনি সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায়। ঘটনাটি সিলেটের মেজরটিলার ইসলামপুরের আনসার মিয়ার কলোনিতে ঘটে গত বুধবার সন্ধ্যায়। আতিকের মূল বাড়ি দিরাইয়ে। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন কলোনির একটি বাসায়। স্ত্রী ঝুমার ভাষ্য মতে, তার স্বামী সিএনজি চালান। বুধবার দুপুরের দিকে বাসায় ফেরেন। শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন। বাসায় ফিরে তিনি গোসলের পর নামাজ পড়ে ভাত খান। এরপর তারা একসঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমের মধ্যে শিশুটি কান্না করার কারণে তিনি তাকে নিয়ে ঘুম থেকে উঠে যান। কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন। ঝুমার দাবি- বিকাল তখন ৫টা হবে। তিনি তখন ঘুমে। হঠাৎ স্বামী আতিক তাকে হাত দিয়ে ধাক্কা দেন। ঘুম ঘুম চোখে দেখেন স্বামী আতিকের গলা থেকে রক্ত ঝরছে। পাশের ঘরে গিয়ে দেখেন মেয়ের রক্তাক্ত লাশ। গলাকাটা অবস্থায় রয়েছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন আসেন। এরপর তিনি দরজা খুলে দেন। ঘটনার পর স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে হাসপাতালে আসেন। কীভাবে ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কেও ধারণা নেই ঝুমার। তবে তার ঘরের বাথরুম থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বঁটি দা উদ্ধার করা হয়েছে। ঝুমার মতে, তিনি যখন ঘুম থেকে উঠে এ দৃশ্য দেখেন তখন তার স্বামী ইশারায় হাত দিয়ে দেখাচ্ছিলেন তার মাথায় কাজ করছে না। তবে ঘটনাটি তার স্বামী ঘটিয়েছেন কি না সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানাননি ঝুমা। হাসপাতালে যখন স্বামীর গলায় অস্ত্রোপচার চলছিল তখন তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন। ঘটনায় কাতর হয়ে পড়েছেন আতিকের পরিবারের সদস্যরা। তারাও ইসলামপুরের ওই এলাকায় বসবাস করেন। আতিকের বোন বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গলাকাটা অবস্থায় আতিককে গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে রাতেই তার গলায় অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর চিকিৎসকরা তার গলায় অস্ত্রোপচার করেন। এখন অবজারভেশনে থাকলেও তার শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। এদিকে, ঘটনার পর তদন্ত শুরু করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুলিশ আতিকের কক্ষে তল্লাশি করে। এ সময় তারা খুনে ব্যবহৃত একটি দা উদ্ধার করেন। হাসপাতালে থাকা ঝুমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়েকটি ধারণা নিয়ে তারা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ধারণা- ঘটনাটি শিশুটির পিতা আতিক নিজেই ঘটিয়ে থাকতে পারেন। তিনি ক্রন্দনরত শিশুটিকে হত্যার পর নিজের গলা দা দিয়েছেন কেটেছেন। যে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা স্ত্রী ঝুমার মুখ থেকে পাওয়া গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, শিশুটিকে হত্যা করা হলেও স্ত্রী ঝুমার কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি আসলে ঘুমিয়ে ছিলেন কি না- সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে আতিক ও ঝুমার মধ্যে পারিবারিক বিরোধের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে কি না সে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে বাইরের কারও সম্পৃক্ততার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ার কারণে পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ এরই মধ্যে ঘটনার তদন্ত এগিয়ে রেখেছে। আহত আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঘটনা কি জন্য ঘটেছে, সে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।