ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

এক্সপ্রেসওয়ের আতঙ্ক বাইক রেসার

স্টাফ রিপোর্টার
১৮ জুন ২০২৫, বুধবার
mzamin

শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা। ভোরের আলো তখনো ভালো করে ফোটেনি। দূরপাল্লার বাসগুলো ঈদের ছুটি শেষে ঢাকা ফেরত যাত্রীদের নিয়ে ফিরছিল। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করেও কেউ কেউ ফিরছিলেন। অনেক যাত্রী তখন সিটেই ঘুমাচ্ছিলেন। আশপাশে থাকা কিছু বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বাসিন্দারা ভোরবেলার শেষ ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। ঠিক তখনই এক্সপ্রেসওয়ের মাওয়াপ্রান্ত থেকে পঞ্চাশজনের একটি বাইক রেসার টিম সাইলেন্সারের বিকট শব্দে ঢাকার পথে এগুচ্ছিলেন। প্রত্যেকের গতি ছিল ১০০ কিলোমিটারের উপরে। কারও কারও গতি আরও বেশি। বেপরোয়া গতি আর মোটা সাইলেন্সারের বিকট উদ্ভট শব্দে এক্সপ্রেসওয়ে যেন কেঁপে উঠছিল। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী ঘুমন্ত যাত্রী ও আশেপাশের বাড়ির ঘুমন্ত বাসিন্দারাও কাঁপুনি দিয়ে উঠছিলেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন যানবাহনের চালকরাও রেসারদের বেপরোয়া গতি ও বিকট শব্দে চলন্ত গাড়ি নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য দিশাহারা হয়েছিলেন। এমন দৃশ্য ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত চলাচলকারী যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে পড়ে। শুধু মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নয়। পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকাতেও রাত ১২টা থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত দেখা যায়। 
সরজমিন দেখা যায়, বাইক রেসার বেশির ভাগের বয়স ১৬ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। পায়ে কেডস, পরনে জিন্স, টি-শার্ট। অনেকের মাথার চুল ডিজাইন করে কাটা। কারও কারও চুল ব্রাউন করা। সবার কাছেই আর ওয়ান-৫ থেকে শুরু করে রেসিং করা যায় এমন সব স্পোর্টস বাইক। কেউ কেউ আবার সাধারণ বাইক মোডিফাই করে রেসিং বাইক হিসেবে তৈরি করেছেন। বেশির ভাগ বাইক রেসারদের পেছনে একজন নারী সঙ্গীও ছিলেন। অনেক রেসারের মাথায় ও পেছনের সঙ্গীর নিরাপত্তাজনিত হেলমেটও ছিল না। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই স্বাভাবিকভাবেই তারা ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতি দিয়ে রেস করছিলেন। 

স্থানীয় সূত্র বলছে, অন্তত ৮ থেকে ১০টি গ্রুপ রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে মাওয়া ফেরিঘাটে যায়। প্রতিটি গ্রুপে ১৫ জন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ জন সদস্য থাকে। সারারাত তারা মাওয়ার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে ভোরবেলা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। শুধু বেপরোয়া গতি দিয়ে যে তারা চলাচল করে এমন নয়। রেস করার সময় উড়ন্ত সেলফি ও ভিডিও নিয়ে তারা ভিডিও তৈরি করে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিরাতেই বাইক রেসারের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা। ঢাকা থেকে উচ্ছৃঙ্খল বখাটে ছেলেরা রাত গভীর হলেই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বাইক রেস শুরু করে। তাদের বেপরোয়া রেসিংয়ের কারণে মাঝেমধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে এসব বেপরোয়া রেসারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান করলে কিছুদিন নীরব থাকে। পরে আবার তারা শুরু করে। 

বৃহস্পতিবার রাতে ছুটিতে ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরিঘাটে খেতে গিয়েছিলেন ঢাকার মুগদা এলাকার দম্পতি তারেক ও আনিশা। তারেক মানবজমিনকে বলেন, দুই মাস আগেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। এতদিন আমার স্ত্রী বাড়িতেই ছিল। ঈদের তিনদিন পরে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। তাই স্ত্রীকে নিয়ে রাতে মাওয়া গিয়েছিলাম। সারারাত ওখানে থেকে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোটরসাইকেলে করে ফিরছিলাম। আমাদের বাইকের সর্বোচ্চ গতি ছিল ৭০। এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা থেকে আমরা তখন তিন কিলোমিটার দূরে। ঠিক তখনই আমাদের বাইকের ডান ও বাম পাশ দিয়ে বিকট সাইলেন্সারের শব্দে এবং অন্তত ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে যাচ্ছিলেন অন্তত ৫০ জনের মতো রেসার। পেছন থেকে আসা হঠাৎ এমন বিকট শব্দে আমি ও আমার স্ত্রী কিছুক্ষণের জন্য স্তম্ভিত হয়ে যাই। কি হচ্ছিলো তখনো বুঝতে পারিনি। অন্তত ৩০ সেকেন্ড পরে আমরা দু’জনই স্বাভাবিক হই। তারপর রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ বসে পানি মাথায় দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার পরে আবার রওয়ানা দিয়েছি। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, ঢাকা ও আশেপাশের সড়কে কি পরিমাণ রেসার বেপরোয়া রেসিং করে তার হিসাব কারও কাছে নাই। কে কোন রুট দিয়ে রেস করে তারও কোনো হিসাব নাই। উঠতি বয়সী বিভিন্ন এলাকার ছেলেরা গ্রুপ তৈরি করে রেসিং করে। তাদের আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপ আছে। গ্রুপের মাধ্যমে তারা সমস্ত তথ্য আদান-প্রদান করে। তাদের অনেকেরই আলাদা ফেসবুক পেজ আছে। যারা রেস করে তাদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত নাই। অধিকাংশ রেসাররা অভিজাত ঘরের সন্তান। চেকপোস্ট দিয়েও তাদের আটকানো যায় না। 

৩০০ ফিট সড়কে বাইক রেসিং নিয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী মানবজমিনকে বলেন, আমরা প্রায়ই অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। নীলামার্কেট থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান চালানোর কারণে এখন এই সড়কে অনেকটা কমেছে। 

হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন) ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (ডিআইজি উত্তর) মো. শফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন,  সড়কটা এত ভালো হয়ে গেছে ইচ্ছা করলে যে কেউ ১২০ এর উপরে গতি উঠায়। সেনাবাহিনী নিয়ে আমরা অভিযান করেছিলাম। তখন আমরা বেশ কিছু বাইকও আটক করেছিলাম। ঈদ উপলক্ষে হয়তো তারা আবার রেস শুরু করেছে। আমরা আবার অভিযান শুরু করবো। এই অপসংস্কৃতিটা বন্ধ করতে হবে। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেন মিঞা মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি এখনই খোঁজ নিয়ে এসপিকে বলে দিচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে রাতেই আমরা অভিযান চালাবো।

পাঠকের মতামত

দুলাল দের এসব নিয়ন্ত্রণে পুলিশর কঠোর পদক্ষেপ নেয়া করা উচিৎ, আর তা করা পুলিশের জন্য অ সম্ভব বলে মনে হয় না।

নূর মোহাম্মদ এরফান
১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৭:৫৬ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status