নিহিমকে আয়নাঘরে ৪৭ দিন আটকে নির্যাতন র‌্যাবের সাবেক মুখপাত্র সোহায়েল কারাগারে

ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর থেকে গোলাম মর্তূর্জা নিহিমকে অপহরণ, আয়নাঘরে নিয়ে ৪৭ দিন আটকে রেখে নির্যাতন ও গুমের মামলায় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সোহায়েলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা গণহত্যার মামলায় সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইশতিয়াক ও এস এম মায়নুলকেও কারাগারে পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। এদিন ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, সোহায়েলের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
শুনানি শেষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রোডাকশন ওয়ারেন্টমূলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সাবেক পরিচালক সোহায়েলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সোহায়েল ২০১২ সালে ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর থেকে ছাত্রশিবিরের গোলাম মর্তূর্জা নিহিমকে অপহরণ করে আয়নাঘরে নিয়ে ৪৭ দিন আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করেন। সেই ভিকটিম নিজে এসে অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সংস্থার প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে আমরা তার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট চাই। পরে তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। 
এদিকে, জুলাই-আগস্টে রাজধানীর মিরপুরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সময় আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল সেই আবেদন মঞ্জুর করে। আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলেও আমরা আরও আগেই প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো বলে আশা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, মিরপুরের এই মামলায় সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম মায়নুল সহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার থাকলেও কিছু আসামি পলাতক।
তামিম আরও বলেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ড্রোন উড়িয়ে ছাত্র-জনতার অবস্থান নির্ণয় করে সে তথ্য র‌্যাব, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের দিতেন ইশতিয়াক আহম্মেদ। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই মামলাও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় আবেদন করলে টাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেছেন। 
তিনি বলেন, মিরপুরে জুলাই-আগস্টে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, সেখানকার তৎকালীন এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২ জনকে আজকে শোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। তারা অন্যান্য মামলায় অ্যারেস্ট আছে। এখন থেকে এই দু’জন আসামিকে মিরপুরের মামলায় ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এ সময় আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও তারা হাজির হননি। এখন রাষ্ট্র থেকে স্ট্রেট ডিফেন্স হিসেবে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করা হবে কি না জানতে চাইলে তামিম বলেন, যে মামলার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে সে মামলার ক্ষেত্রে স্ট্রেট ডিফেন্স দেয়া যাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর। তাই এ ক্ষেত্রে স্ট্রেট ডিফেন্সের বিধান না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।