ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বিবিধ

তামাক নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব সম্মেলন: তামাকমুক্ত এক পৃথিবীর স্বপ্ন

ইকবাল মাসুদ

(২ দিন আগে) ১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ৭:৫৩ অপরাহ্ন

mzamin

বিশ্ব তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্মেলন (ডাব্লিউসিটিসি) পূর্বে পরিচিত ছিল বিশ্ব তামাক বা স্বাস্থ্য সম্মেলন (ডাব্লিউসিটিওএইচ) নামে এবং গ্রান্টি পার্টনার সভা (গ্লোবাল পার্টনার মিটিং) আগামী ২৩ থেকে ২৫ জুন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ইউনিয়ন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনেস্ট টিউবারকিউলোসিস এন্ড লাং ডিজিজ) এর উদ্যোগে এবং ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস-এর সহায়তায় অনুষ্ঠিত হবে এই আন্তর্জাতিক সম্মলেন। সম্মেলনটি তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও বিশ্বজুড়ে সক্রিয় কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মিলনমেলা। যেখানে সর্বশেষ গবেষণা, কৌশল ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে। বিশ্ব তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্মেলন (ডাব্লিউসিটিসি) বিশ্বের হাজার হাজার তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীকে একত্রিত করেছে একটি অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে তামাক ব্যবহারে বৈশ্বিক সমস্যা হ্রাস করার লক্ষ্যে।
বাংলাদেশসহ বহু উন্নয়নশীল দেশের জন্য তামাক এখনো একটি বড় জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু, রোগের বোঝা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সুতরাং, এই সম্মেলনে বাংলাদেশের মতো দেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাক ব্যবহারকারী নিম্নআয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই সম্মেলন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত কৌশল যেমন তামাক কর বৃদ্ধিকরণ, বিজ্ঞাপন নিষেধাজ্ঞা ও তামাক ব্যবহার ত্যাগ কর্মসূচি গ্রহণের সুযোগ করে দেবে। এ ছাড়াও ই-সিগারেট ও নতুন নিকোটিন পণ্যের মতো উদীমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও এটি সহায়ক হবে।
এছাড়াও সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টোব্যাকো এপিডেমিক রিপোর্ট-২০২৫ প্রকাশিত হবে। যেখানে প্রতিটি দেশের অগ্রগতি, নীতিগত ঘাটতি ও কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ থাকবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস অ্যাওয়ার্ড ফর গ্লোবাল টোব্যাকো কন্ট্রোল-এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি যা সরকার ও এনজিওদের তামাক নিয়ন্ত্রণে অবদানের জন্য প্রদান করা হয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রায়ই পর্যাপ্ত সম্পদ ও সক্ষমতার অভাবে কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়েছে। ডাব্লিউসিটিসি এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে ভূমিকা রাখতে পারে। যুব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, কর্মশালা, অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে এটি জনস্বাস্থ্যে সামাজিক ন্যায়বিচারকে গুরুত্ব দেয়। যা নারী, যুব সমাজ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর তামাকের বৈষম্যমূলক প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে।
এছাড়া এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ সংগঠন ও দাতাদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। যারা স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্প্রসারণে সহায়তা করতে পারে।
আমি নিজে বহু বছর ধরে বৈশ্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেছি। ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১২তম থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ১৭তম (শেষ সরাসরি সম্মেলন) পর্যন্ত। প্রতিবার ফিরে এসেছি নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণা নিয়ে, যেন বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগকে আরও সমর্থন করতে পারি। সরকারের নীতি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে পারি। এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালার উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।
এই সম্মেলনগুলো শুধুই একাডেমিক আলোচনা বা নীতিনির্ধারণী পর্যালোচনার ক্ষেত্র ছিল না; বরং সেগুলো ছিল একটি কার্যকর আহ্বান। যা দেশে ফিরে এসে বাস্তব পরিবর্তন আনার পথ তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহ এই সম্মেলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তামাকবিরোধী লড়াইকে আরও জোরদার করতে পারবে, স্বাস্থ্যখাতে বৈষম্য হ্রাস করতে পারবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও কল্যাণ সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারবে।
বিশ্বে তামাক ব্যবহারের দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে: নতুন ধরনের নিকোটিন পণ্যের আগমন, তামাক কোম্পানির প্রভাব ও লবিং, এবং “তামাকমুক্ত ভবিষ্যৎ” এ লক্ষ্য অর্জনে উদ্ভাবনী নীতির প্রবর্তন চলছে বিশ্বব্যাপি।
এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে ব্লুমবার্গ ইনিশিয়েটিভ, সিটিএফকে, ভাইটাল স্ট্রাটেজিকস এবং আরও অনেক সংগঠনের অবিচল সহায়তার ফলে। এরা বৈজ্ঞানিক প্রমাণভিত্তিক নীতির পক্ষে অর্থায়ন, নাগরিক সমাজকে শক্তিশালীকরণ এবং তামাক শিল্পকে জবাবদিহির মধ্যে আনার মাধ্যমে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) ও এমপিওডাব্লিউইআর কৌশল বাস্তবায়নে গতি এনেছে। তাদের এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
লেখক: ইকবাল মাসুদ
জনস্বাস্থ্যকর্মী ও পরিচালক (স্বাস্থ্য), ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন
ই-মেইল: রয়.সধংঁফ@মসধরষ.পড়স
 

বিবিধ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিবিধ সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিষদ/ সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, সাধারণ সম্পাদক এ এম শামীম নির্বাচিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status