বিবিধ
রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিশ্ব বাজার সম্প্রসারণে এমআইপি প্ল্যাটফর্ম এর উদ্বোধন
শিল্প খাতকে এগিয়ে নিতে কাঠামোগত দুর্বলতা মোকাবেলার তাগিদ বিশিষ্টজনদের
(২ দিন আগে) ৩১ মে ২০২৫, শনিবার, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব বাজারে পোশাক, চামড়া, জুতা, প্লাস্টিক ও প্রকৌশলসহ বিভিন্ন খাতে রপ্তানি বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে প্রযুক্তি সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ক্রেতা (Buyer)-বিক্রেতাদের (Sellers) নেটওয়ার্কিংয়ের স্বার্থে যাবতীয় তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধকরণ জরুরী। এছাড়া জোর দিতে হবে এইসব শিল্পের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের উপর। বিশ্ব বাজারে বিশেষত ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনসহ অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শিগগিরই এইসব পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার (২৯শে মে ২০২৫) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম (এমআইপি) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা এই অভিমত তুলে ধরেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান ওই দিন সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নতুন এই প্লাটফর্ম উদ্বোধন করেন।
নতুন এই ডিজিটাল প্লাটফর্মটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন। লিংক: https://exportbangladesh.org/
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ইসি৪জে (EC4J) প্রকল্পের কার্যক্রম হিসেবে এই এমআইপি’র উদ্বোধন করা হয়। এটি এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-যার মাধ্যমে রপ্তানিকারক বা বিক্রেতারা ক্রেতাদের যাবতীয় তথ্য সহজে পাবেন। বিক্রেতারাও এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ক্রেতা খুঁজে পাবেন। এতে আমদানী-রপ্তানি সহজতর হওয়ার পাশাপাশি উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের নতুন সেতুবন্ধন গড়ে উঠবে। পাশাপাশি দেশের উদ্যোক্তা, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা নতুন ক্রেতা খুঁজে পাবেন। ফলে দেশের রপ্তানিমূখী খাতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হবে। তরুণদের জন্য বাড়বে নতুন কাজের সুযোগ।
এছাড়া প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে পারবে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতার প্রোফাইল, হালনাগাদ তথ্য, নতুন বাজার সম্পর্কে ধারণা, রপ্তানিকৃত পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট ও এক্সপোর্ট কমপেটিটিভনেস ফর জব (ইসি৪জে- EC4J) প্রজেক্টের টাস্ক টিম লিডার হোসনা ফেরদৌস সুমি, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুড্স ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) এর প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ, বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিবিপিএমইএ) এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুশতাক আহমেদ তানভীর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এই সংক্রান্ত বিষয়ে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্মের প্রধান পরামর্শক ও লাইটক্যাসেল পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিজন ইসলাম।
এতে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইসি৪জে প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুর রহিম খান।
উপস্থাপনায় তিনি ইসি৪জে ও এমআইপি এর লক্ষ্য তুলে ধরে বলেন, রপ্তানিকারকদের জন্য এটি একটি ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’। যার মাধ্যমে সঠিক ও বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে প্রতিযোগিতা করার জন্যে আমাদের নিজ দেশে সক্ষমতা তৈরী করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান বলেন, মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম (এমআইপি) চালুর মাধ্যমে আমরা আমাদের রপ্তানিকারকদের বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে জড়িতদের কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিচ্ছি। এতে তারা বিশ্ব বাজারে আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
হোসনা ফেরদৌস সুমি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো-এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে রপ্তানিকারকরা অনুমান করে কোন সিদ্ধান্ত নিবে না। বরং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বাজারে তাদের নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসবে।
শামীম আহমেদ বলেন, পোশাক শিল্পের বাইরেও বেশকিছু পণ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্ভাবনা উজ্জ্বল। চামড়া, প্লাস্টিক এবং প্রকৌশলের মতো খাতগুলিকে বিকশিত করার জন্য মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে কাজ করছে। এতে আমরা অনুপ্রাণিত হচ্ছি।
পরে বাংলাদেশে রপ্তানির বৈচিত্রকরণ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি (বিআইডিএ- BIDA), বিশ্বব্যাংক, দেশের খ্যাতিমান বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন এবং বিদেশী ক্রেতা ও প্রতিনিধিরাসহ মোট ১২০ জন অংশগ্রহণ করেন।
প্যানেল আলোচনায় সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা, ডিজিটাল পদ্ধতি এবং নীতি সহায়তার মাধ্যমে দেশের রপ্তানি ভিত্তি সম্প্রসারণের কৌশলগত উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্মের স্ট্র্যাটেজিক টেকনোলজি লিড এবং শুটিং স্টার-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) দিদারুল আলম ও দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত: এমআইপি প্ল্যাটফর্মটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসেল পার্টনার্স, বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানি শুটিং স্টার লিমিটেড, এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনকে সফট কর্পোরেশন।
প্রসঙ্গত: রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও চাকরির সুযোগ তৈরিকে গুরুত্ব দিয়ে ইসি৪জে নামে এই প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি উদ্যোগ। ৮ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটি গত ২০১৭ সাল থেকে চালু হয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা, প্লাস্টিক এবং প্রকৌশল-এই চারটি ক্ষেত্রে রপ্তানি বৃদ্ধি ও কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।