দেশ বিদেশ
নিরাপত্তা উদ্বেগে কলকাতা বিমানবন্দর, চারপাশে তিনশ’র বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাধা চিহ্নিত
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
১৫ জুন ২০২৫, রবিবারগুজরাটের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর ?নিরাপত্তা নিয়ে সব বিমানবন্দর এবং বিমান সংস্থা নড়েচড়ে বসেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষও নজরদারি শুরু করেছে। তবে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আগে থেকেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। ভারতের পঞ্চম ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত কলকাতা বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন ৪০০ টিরও বেশি বিমান চলাচল করে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা বিমানবন্দরের আশেপাশে তিনশ’র বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাধাকে চিহ্নিত করা রয়েছে। এগুলো কলকাতা থেকে বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করে বলে জানিয়েছেন বিমান চালনার সঙ্গে যুক্তরা। এ ছাড়া কলকাতা বিমানবন্দরের আশেপাশে লেসার লাইটের দৌরাত্ম্যও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ধারাবাহিক উদ্বেগের মধ্যে রেখেছে। পাইলটরা বিভিন্ন সময়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, হঠাৎ লেসার আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি অবজেক্ট লিমিটেশন সারফেস সংক্রান্ত এক সমীক্ষায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশে মোট ৩৭৭টি বিপজ্জনক বাধা চিহ্নিত করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার, জলের ট্যাঙ্ক, ডিশ অ্যান্টেনা, বজ্রপাত নিরোধক এবং অননুমোদিত উঁচু কাঠামো। এই ৩৭৭টির মধ্যে ৯০টি সরানো সম্ভব হলেও প্রায় ২৮৭টি এখনো বিমান চলাচলের নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে। জানা গেছে, ১১৮টি সমস্যাজনক উঁচু কাঠামো বা ভবন এখনো রয়ে গেছে।
গত ২৩শে মে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র বিভাগের প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এয়ারফিল্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে এসব উদ্বেগগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে কলকাতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক ড. পি আর বেউরিয়া, এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি, স্থানীয় সব ক’টি পৌরসভার প্রতিনিধি এবং বিমান সংস্থার অংশীদাররা উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরের কাছে লেজার রশ্মির প্রকোপ আরেকটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হিসেবে কমিটির সামনে তুলে ধরা হয়। ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তর (ডিজিসিএ) ইতিমধ্যেই এই বিপদ মোকাবিলায় নির্দেশিকা এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) জারি করেছে। জানা গেছে, স্থানীয় সব ক’টি পৌরসভা এবং পুলিশকে “লেজার বিম-মুক্ত” এবং “লেজার বিম-সংকটজনক” ফ্লাইট জোনের মধ্যে লেজারের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিমানবন্দরের চারপাশের বাধাগুলো ছয়টি পৌরসভার অধীন। এগুলো হলো- বিধাননগর পৌর করপোরেশন, নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কলকাতা পৌর করপোরেশন, মধ্যমগ্রাম পৌরসভা, নিউ ব্যারাকপুর পৌরসভা এবং উত্তর দমদম পৌরসভা।
সুনির্দিষ্টভাবে যে বাধাগুলো সমস্যা তৈরি করছে সেগুলো হলো- রাজারহাট এবং নিউ টাউনের বহুতল ভবন, মধ্যমগ্রামে ডিশ অ্যান্টেনা, নিউ টাউনে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র, বিটি কলেজ মোড়ের কাছে বড় বড় হোর্ডিং, মাইকেলনগর এবং নিউ ব্যারাকপুরে মোবাইল টাওয়ার, মাইকেলনগরে নারিকেল গাছ এবং যশোর রোডের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছে, বাধাগুলো সরানোর জন্য মালিকদের নিয়মিত নোটিশ দেয়া হচ্ছে।