গাজার করুণ ছবি : ৫ টাকার বিস্কুট বিকোচ্ছে ২,৩০০ টাকায়

এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে গাজায়। কিন্তু সেই ত্রাণ সামগ্রী গাজার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর আগেই লুট হয়ে যাচ্ছে। যে সকল খাদ্য সামগ্রী সাধারণ মানুষের বিনামূল্যে পাওয়ার  কথা, সেসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে তাদের । আর সেই কারণেই এই মুহূর্তে ৫ টাকার বিস্কুট গাজায় বিকোচ্ছে ২৩০০ টাকায়। গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ জাওয়াদের একটি  সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার  অভাবের করুণ চিত্রটি   তুলে ধরেছে বিশ্বের সামনে। ভিডিওটিতে দেখা গেছে  তার ছোট মেয়ে রাফিফ বিস্কুটের একটি প্যাকেট ধরে আছে , যা তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে এমন অঞ্চলে বিরল একটি খাবার। জাওয়াদ জানাচ্ছেন , তিনি তাঁর ছোট্ট মেয়ের জন্য কিছু খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ত্রাণের খাবার পাননি। অবশেষে অনেক ঘুরে ২৪ ইউরো খরচ করে মেয়ের জন্য এক প্যাকেট বিস্কুট জোগাড় করতে সক্ষম হন। যদিও ভারতীয় বাজারে এই বিস্কুটটি মেলে মাত্র ৫ টাকায়। দেশের বাইরে দাম  প্রায় ১০০ টাকার মতো।জাওয়াদ লিখেছেন -'আমি অবশেষে রাফিফকে তাঁর পছন্দের বিস্কুট কিনে দিলাম। আর দাম যদিও ১.৫ ইউরো থেকে লাফিয়ে হয়ে গিয়েছে ২৪ ইউরো, কিন্তু এর পরেও রাফিফকে তাঁর পছন্দের বিস্কুটের ব্যাপারে না করতে পারলাম না'। গাজার ক্রমবর্ধমান সঙ্কটের চিত্র ফুটে উঠেছে এখানে। মৌলিক চাহিদার জিনিস, সাধারণ খাবারও সেখানে বহুমূল্য হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে দাম। এই বছরের ২ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত এই ভূখণ্ড সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ছিল। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে কয়েকটি ট্রাককে দেশের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু সাহায্য যখন আসে, তখন তা সীমিত এবং প্রায়ই অপর্যাপ্ত। আর এই অভাবের কারণে কালোবাজারি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।মোহাম্মদ জাওয়াদের  পোস্টটি দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এবং অনেক ভারতীয় নেট ব্যবহারকারী সরকারি কর্মকর্তা এবং পার্লে কোম্পানিকে গাজার মানুষকে সাহায্যের জন্য ট্যাগ করেন। জাওয়াদের কথায় , "কিছু লোক মনে করে গাজার জনগণের জন্য আসা সাহায্য সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়। কিন্তু সত্য হল দখলদাররা অনেক দালাল এবং চোর নিয়োগ করেছে এই ত্রাণ চুরি করে বাজারে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি করার জন্য। উদাহরণস্বরূপ, আটা প্রায় ৫০০ ডলারে বিক্রি হয়, এবং চিনি প্রায় ৯০ ডলারে প্রতি কেজিতে বিক্রি হয়। সমস্ত মৌলিক পণ্য চড়া দামে বিক্রি হয়। কিছু লোক, যারা কিনতে পারে না, তারা কেবল তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেতে তাদের জীবনের ঝুঁকি নেয়। অন্যদিকে, কিছু মানুষ প্রচুর পরিমাণে ত্রাণ  চুরি করে বাজারে বিক্রি করছে  বিশাল লাভের জন্য।'বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুসারে, গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির হার ফেব্রুয়ারির পর থেকে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। মে মাসের শেষের দিকে  ৫০,০০০ শিশুর প্রায়  ৫.৮ শতাংশের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি ধরা পড়ে - যা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ৪.৭ শতাংশ ছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে যখন যুদ্ধবিরতির ফলে বিনামূল্যে সাহায্য প্রবাহের সুযোগ তৈরি হয়েছিল, তখন এই সংখ্যাটি নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এক বেদনাদায়ক বিবৃতিতে, আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) বলেছে যে গাজার ডাক্তাররা এখন রোগীদের চিকিৎসার জন্য তাদের নিজস্ব রক্তদান করছেন, যেখানে খাদ্য সহায়তা পেতে গিয়ে কয়েক ডজন বেসামরিক লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা গত মাসে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে অনাহারের কারণে কমপক্ষে ২৯ জনের  মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু এবং বয়স্ক।

সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া