দেশ বিদেশ
আবাসিক হোটেলে কোরবানির গরু!
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
গরুর হাটে মানুষের জন্য থাকা ও খাবার হোটেল অহরহই আছে। কিন্তু এবার চুয়াডাঙ্গায় গরুর জন্য আবাসিক হোটেলের সূচনা হয়েছে। হাট থেকে কেনা গরুর বিশ্রাম, গোসল ও খাবারের জন্য এ হোটেল করেছেন জেলার ডুগডুগির হাট এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম। আরিফুলের গবাদিপশুর এ হোটেলের উদ্ভাবন ক্রেতা-ব্যাপারীদের মধ্যে উৎসাহের জন্ম দিয়েছে।
হাট সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোরবানির আগের ৪-৫টি হাটে দামুড়হুদার ডুগডুগির পশুরহাটে অন্তত পাঁচ হাজার করে গরুর আমদানি হয়। হাটে আসা এসব গরুর জন্য এতদিন ছিল না নির্দিষ্ট কোনো বিশ্রাম, গোসল বা খাবারের স্থান। যত্রতত্রই গরুগুলোকে গাদাগাদি করে রাখা হতো। নোংরা স্থানেই দেয়া হতো খাবার। গবাদি পশুর এ অসুবিধার কথা চিন্তা করে ডুগডুগি গ্রামের গরু খামারি আরিফুল গড়ে তুলেছেন গবাদি পশুর হোটেল কাম ওয়্যারহাউজ।
আরিফুল বলেন, কোরবানির সময় সারা দেশের ব্যাপারীরা চুয়াডাঙ্গায় আসেন গরু-ছাগল কিনতে। অনেক ব্যাপারীই এক হাটে চাহিদামতো গরু কিনতে পারেন না। ডুগডুগির হাটে যে কয়টা গরু কেনা হয় সেগুলো রাখা নিয়েও ঝামেলাই পড়তে হয় তাদের। আবার অনেকের বাড়িতে কোরবানির গরু রাখার স্থান থাকে না। তারাও অসুবিধায় পড়েন। এসব চিন্তা থেকে তিনি গবাদি পশুর হোটেল কাম ওয়্যারহাউজ করেছেন। এতে আরিফুলকে সহযোগিতা করেছে উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন। ওয়েভের আরএমটিপি প্রকল্পের অধীনে গবাদি পশুর হোটেল করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
আরিফুল বলেন, একটি গরু একদিনের জন্য হোটেলে রাখলে তার গোসল-খাওয়া থেকে সব ব্যবস্থা করা হয়। সার্বিক নিরাপত্তাও দেয়া হয়। এজন্য গরুপ্রতি খরচ হয় দিনে ৫০০ টাকা করে। চট্টগ্রামের ব্যাপারী আব্দুল জব্বার বলেন, দেশের সব গবাদি পশুর হাটেই মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গাতেই প্রথম গবাদি পশুর জন্য হোটেল কাম ওয়্যারহাউজ করা হয়েছে। যেটি দেখে দেশের অন্য এলাকাতেও উদ্যোক্তারা অনুপ্রাণিত হবেন।
সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েভ ফাউন্ডেশনের আরএমটিপি প্রকল্পের ভ্যালুচেইন ফেসিলিটেটর (নিরাপদ মাংস) শাহিনুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের আওতায় ‘নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন’- শীর্ষক ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পে চুয়াডাঙ্গা জেলার খামারিরা প্রশিক্ষণ, ভ্যাকসিন, কৃমিনাশক ও যান্ত্রিক সহায়তা পেয়ে নিরাপদ পশু উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছেন। পাশাপাশি ডুগডুগি পশুর হাটের কাছেই উদ্যোক্তা আরিফুল ইসলাম প্রাণীর আবাসিক হোটেল কাম ওয়্যারহাউজ স্থাপন করেছেন। যার ফলে দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা নিরাপদে পশু রেখে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন। দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মী আনোয়ার পারভেজ বলেন, ডুগডুগি হাটে গবাদিপশুর জন্য বিশেষভাবে হোটেল স্থাপন একটি বিশেষ উদ্যোগ। এর ফলে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা বাড়তি সুবিধা উপভোগ করবে। এজন্য এর উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টরা বিশেষ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক নির্মল দাস বলেন, তাদের সংস্থা দীর্ঘদিন থেকে কৃষি ও কৃষকের পাশে থেকে নানামুখী সহযোগিতা করে আসছে। সে ধারাবাহিকতায় ‘নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন’ শীর্ষক ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পের আওতায় আরিফুল ইসলামের গবাদি পশুর জন্য হোটেল কাম ওয়্যারহাউজ করতে সহযোগিতা করা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় কৃষক, গবাদিপশুর ক্রেতা-বিক্রেতা হাটে এসে কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এর ফলে এ হাটের ভোক্তারা নিরাপদ ও উন্নত পশুব্যবস্থা উপভোগ করতে পারবে।
পাঠকের মতামত
সুন্দর উদ্দ্যোগ দেশের অন্য এলাকার মানুষও উৎসাহিত হবে।
ধন্যবাদ