ঢাকা, ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

কানাইঘাটে একের পর এক খুন

কানাইঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি
৪ জুন ২০২৫, বুধবার

শান্তিপ্রিয় জনপদ হিসেবে পরিচিত সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা। ইদানীং এখানে নিখোঁজ, খুন, অপহরণসহ ফৌজদারি অপরাধ অস্বাভাবিক বেড়েছে। ঘটছে একের পর এক খুন ও রহস্যজনক মৃত্যু। যেন পান থেকে চুন খসলেই খুনোখুনি ঘটছে কানাইঘাটে। সমপ্রতি, জামায়াতের শ্রমিক সংগঠনের নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিন হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে কানাইঘাটের জনগণ। গত সপ্তাহ থেকে প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করছে প্রতিবাদী জনগণ। কিন্তু শিহাব হত্যার ঘটনায় ৬ দিনেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীর হার্ডলাইনে। যেকোনো সময় কঠিন আন্দোলনের ডাক আসতে পারে বলে জানিয়েছেন কানাইঘাট উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা কামাল আহমদ। কানাইঘাটে গত ৮ মাসে ৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবগুলোই আলোচিত। কানাইঘাট থানার ওসি মো. আব্দুল আউয়াল ২০২৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর থানায় যোগদান করেন। তার যোগদানের পর গত ৮ মাসে গড়ে প্রতি মাসে একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে অনেকগুলো খুন সংঘটিত হলেও প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। থানার বর্তমান ওসি যোগদানের পর প্রথম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৭ই নভেম্বর। এদিন রেজওয়ান আহমদ নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয় সুরইঘাট এলাকার একটি পুকুর থেকে। নিহত রেজওয়ান উপজেলার ২ নম্বর লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। দীর্ঘদিন পর প্রবাস থেকে ফিরে তিনি পেশাগতভাবে সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। পাশাপাশি বিএনপি’র রাজনীতি করতেন। পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ৭ই নভেম্বরের পরের দিন ৮ই নভেম্বর আবারো ঘটে খুনের ঘটনা। এদিন ৭নং দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউপির ধলিবিল দক্ষিণ নয়াগ্রামের মসজিদের মুতাওয়াল্লি ফয়জুল হোসেনকে জবাই করে খুন করে তারই চাচাতো ভাই সুলতান আহমদ। সুলতান আহমদকে স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। রেজওয়ান আহমদ ও ফয়জুল হোসেনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন কানাইঘাটে চলছে আলোচনা তখন এই সময়ের মধ্যে ঘটে যায় আরেক ঘটনা। গত ৩রা নভেম্বর ২০২৪ বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে মুনতাহা। মুনতাহার সন্ধানে সারাদেশ ছিল তৎপর। জীবিত ও নিরাপদে যেন মুনতাহা ফিরে আসে- এমন আকুতি ছিল নেটিজেনসহ সবার। নিখোঁজের আট দিন পর ১০ই নভেম্বর উদ্ধার হয় মুনতাহার লাশ। শিশু মুনতাহার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৩ই নভেম্বর ২০২৪ শ্বশুরবাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় চতুল এলাকার জুবায়ের আহমদের লাশ। এদিন বড়চতুল ইউনিয়নের চতুল সরুফৌদ গ্রামের শ্বশুরবাড়ির গাছের ডাল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় জুবায়ের আহমদ নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জুবায়ের আহমদ পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে। ১৪ই নভেম্বর থেকে ১৮ই নভেম্বর ৫ দিন চলে এসব হত্যাকাণ্ড। এ নিয়ে নানা আলোচনা, পর্যালোচনা। এই আলোচনার মাঝেই ঘটে যায় প্রকাশ্যে দিবালোকে খুনের ঘটনা। ১৮ই নভেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যায় কানাইঘাট বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন হন পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌরসভার ধনপুর গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মোমিন। এদিন দুপুর ১২ টার দিকে পৌর শহরের আল-রিয়াদ পয়েন্টের অদূরে একটি দোকানের ভেতর থেকে আব্দুর রহমান লাল মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত লাল মিয়ার বাড়ি কানাইঘাট উপজেলার ৫নং বড়চতুল ইউনিয়নের লখাইর গ্রামে। এভাবেই চলে যায় ২০২৪ সাল। শুরু হয় নতুন বছর। নতুন বছরে মানুষের প্রত্যাশা থাকে যেন অতীতের অপরাধ আর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশা প্রতিফলন ঘটেনি। নতুন বছরের ১ম মাসের ২০শে জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সাতবাক ইউনিয়নের লোভারমুক বাজারের পাশে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক ব্যক্তি খুন হন। দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে খুন করে লাশ সুরমা নদীর পাড়ে ফেলে পালিয়ে যায়। নিহত সালিক আহমদ ১ নম্বর পূর্ব লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের আজিজুর রহমান ছেলে। ফেব্রুয়ারি খুনমুক্ত থাকলেও মার্চে ঘটে যায় আবারো সেই খুন। মার্চের ১০ই তারিখ উপজেলার ডাউকেরগুল গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী আব্দুল মতিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। বসতবাড়িতে রিংগ টিউবওয়েল বসানোকে কেন্দ্র করে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষ লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে এই সৌদি প্রবাসীকে। এ হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে ছুটিতে আসা কাতার প্রবাসী রশিদ আহমদ খুন হন। শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় ১৭ই মার্চ তিনি নিহত হন। 
তবে এ ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রশিদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাজু আহমদকে  করে পুলিশ। এ ঘটনাটি উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে খালোপাড় গ্রামে ঘটে। নিহত রশিদ আহমদ ওই গ্রামের আনা মিয়ার ছেলে। কানাইঘাট থানার ওসি মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘কানাইঘাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান ও তদন্ত কাজ চলমান।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status