দেশ বিদেশ
দিরাইয়ে সরকারি চাল বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগ
মোশাহিদ আহমদ, দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে
(১ দিন আগে) ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮:২০ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ভিডব্লিউবি’র (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) চাল বিতরণকালে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার- ৫শ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে উপকারভোগীদের কাছ থেকে এই টাকা বাধ্যতামূলক নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিতরণের দায়িত্বে থাকা রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা পরিচয় দানকারী তৌহিদুল ইসলাম দবির ও সংশ্লিষ্ট মহিলা ইউপি সদস্য ডলি রানী তালুকদার। ফলে অসহায় দুস্থ উপকারভোগীরা বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে চাল নিচ্ছেন। মঙ্গলবার (৩ জুন) ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে চাল বিতরণের সময় উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইসলাম দবির ও মহিলা সদস্য ডলি রানী তালুকদার এই টাকা গ্রহণ করেন। এ সময় উপকারভোগীরা প্রতিবাদ করলে চাল পরিবহনের খরচ বাবদ চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েলের নির্দেশে টাকা নেয়া হচ্ছে বলে জানান দায়িত্বরতরা। যারা টাকা দিতে পারেনি, তাদের চাল দেয়া হয়নি। টাকা নিয়ে এসে চাল নিতে বলা হয়। জানা যায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভিডব্লিউবি কার্যক্রমটি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। কার্যক্রমটির আগের নাম ছিল দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি)। ভিডব্লিউভি কার্যক্রমের তালিকাভুক্ত দরিদ্র নারীরা দুই বছর ধরে মাসে ৩০ কেজি চাল সহায়তা পান। গত ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হলেও সরকার ৬ মাস
বৃদ্ধি করায় জুন পর্যন্ত চাল পাচ্ছেন কার্ডধারীরা। রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই ইউনিয়নে ২৩৯ জন ভিডব্লিউবির উপকারভোগী রয়েছেন। মঙ্গলবার উপকারভোগীদের ৫ মাসের ১৫০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। বাকি ৩০ কেজি চাল ১ মাস পরে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। চাল বিতরণের সময় ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বাবরা হ্যামলিন উপস্থিত ছিলেন না। বাবরা হ্যামলিন বলেন, অফিসের জরুরি কাজ থাকায় আমি যেতে পারিনি। আমার অফিস সহকারী মোহন লাল দাস সেখানে দায়িত্বে ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে মোহন লাল দাসের মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা যুবলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থেকে কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সরজমিন ২০-৩০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কেউ ১হাজার আবার কেউ ৫শ করে টাকা দিয়ে চাল পেয়েছেন। জাগরণের চর গ্রামের দীপ্তি দাস, অনন্তপুর গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, মহিলা মেম্বার ডলি রানী তালুকদার আমাদের কাছ থেকে ১ হাজার করে টাকা নিয়েছে। পরে জানতে পারি অনেকেই ৫শ করে টাকা দিয়ে চাল নিয়েছে। এখন আমাদের ৫শ টাকা ফেরত নিতে এসে মহিলা মেম্বারকে খোঁজে পাচ্ছি না। এ সময় আরও কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ডলি রানী তালুকদার তাদের কাছ থেকেও ১ হাজার করে টাকা নিয়েছে।
জয়া, চম্পা, শম্পা, প্রিয়বাসিসহ ২০/৩০ জন ভিডব্লিউবি উপকারভোগীরা বলেন, চাল দেওয়ার আগে দবির (তৌহিদুল ইসলাম দবির) আমাদের কাছ থেকে ৫শ করে টাকা নিয়েছে। এ টাকা দিতে চাইনি বলে তারা আমাদেরকে চাল দিতে চাননি। পরে টাকা দেওয়ার পর তারা আমাদেরকে চাল দিয়েছেন।
উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইসলাম দবির বলেন, যারা চাল পেয়েছে, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫শ করে টাকা নিয়েছি। ১হাজার টাকা নেয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের ও মেম্বারদের নির্দেশে উপকারভোগীদের সবার কাছে টাকা নেওয়া হচ্ছে।
৪,৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য ডলি রানী তালুকদার ভিডব্লিউবির উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে চাল পরিবহনের খরচ বাবদ ওই টাকা নেয়া হচ্ছে। ১ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল মুঠোফোনে বলেন, টাকা নেয়ার জন্য আমি কোন নির্দেশনা দেইনি। উদ্যোক্তা দবির ও মহিলা মেম্বার ডলি উপকারভোগীদের কথামতে চাল পরিবহন বাবদ খরচ নিয়েছে। আমি জানতে পেরে তাদের বলেছি টাকা ফিরিয়ে দিতে।
দিরাই উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ইন্সট্রাক্টর লক্ষী রানী তালুকদার বলেন, রাজানগর ইউনিয়নের কার্ডধারীদের সঞ্চয়ের টাকা গ্রহণ শেষে কিছুদিন আগে উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। চাল পরিবহন বাবদ খরচের বিলও আমরা দিয়ে থাকি। কাজেই এখানে টাকা নেয়া হলে, সেটা অনিয়ম।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সনজীব সরকার বলেন, ভিডব্লিউবি উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। চাল পরিবহন বাবদ ২২ হাজার টাকা বিল সরকার থেকে দেয়া হয়। টাকা নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।