দেশ বিদেশ
অসময়ে যমুনার ভাঙনে দিশাহারা মানুষ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
১৭ মে ২০২৫, শনিবারসিরাজগঞ্জে অসময়ে যমুনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জেলার শাহজাদপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের ইতিমধ্যে বেশ কিছু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই ভয়াবহ ভাঙনে এ সব ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের ফসলি জমি, বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই নদীতে ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন যমুনাপাড়ের মানুষগুলো। এতে হুমকির মুখে রয়েছে মাদ্রাসা, হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুলসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
গত বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সরজমিন দেখা যায়, কৈজুরি ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া, সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, কুড়সি, বারোপাখিয়া, বড় চামতারা, বানতিয়ার, গালা ইউনিয়নের বৃ-হাতকোড়া ও মোহনপুর গ্রামে যমুনা নদীর প্রায় কয়েকশ’ মিটার এলাকা জুড়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
ধীতপুর গ্রামের কালু মোল্লা বলেন, এই চরে প্রচুর পরিমাণে পটোল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাষকালাই, বাঙ্গি, সবজি, ধনিয়াসহ সবধরনের ফসল হয়ে থাকে। ৮৮ সাল থেকে এখানে ভাঙা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ ভাঙা দিছি। পটোলসহ নানা ফসল চাষে ভালোই চলছিলাম। এখন বাড়িঘর ও ফসলি জমি সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। এ ঘরটিও ভাঙনের কবলে পড়েছে। এ ভিটা ভেঙে গেলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবো, কী খাবো তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। আব্দুর রহমান বলেন, গত এক বছরে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারোপাখিয়া পর্যন্ত ৫/৬টি গ্রামের প্রায় ৩-৪শ’ বাড়িঘর যমুনা নদীতে চলে গেছে। এই ভাঙনরোধে এখানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ভাঙনরোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ বলেন, গত ৬ বছরে এ ৩টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কমপক্ষে ২৮০ হেক্টর ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আবার এর বিপরীত পাশে ৯০ হেক্টরের বেশি জমি জেগে উঠেছে। ফলে এ ইউনিয়নে জমির পরিমাণ কমেনি। তবে যে সব ফসলি জমি নতুন করে ভেঙে যাচ্ছে, সে সব জমির মালিক তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা সরজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া ভাঙনরোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলে দ্রুত বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, শাহজাদপুরের ৩টি ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা অবজারভেশন করছি। তিন-চার মাস ধরে নদীটা সেখানে আঘাত করছে। যেখানে ক্ষতি হয়েছে, সেখানে জিওব্যাগ ফেলছি। তিনি আরও বলেন, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ চলেছে। আশা করি বাঁধ নির্মাণ শেষ হলে ভাঙন কমে যাবে।