দেশ বিদেশ
জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে লাখ লাখ মানুষ
মানবজমিন ডিজিটাল
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু খুব সহজেই খাদ্যকে দূষিত করে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে উদ্ভূত এই সমস্যার ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ছে। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের হারোলি গ্রামের বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী সুমিত্রা সুতার। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সুমিত্রা আগের দিনের অবশিষ্ট ভাত, ডাল, তরকারি অনায়াসেই পরের দিন খেয়ে ফেলতেন। কোনোদিন কোনো সমস্যা হয়নি। দিন কয়েক আগে তার প্রবল বমি হতে শুরু করে। প্রায় ১৫ বার বমি করার পর চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে সুমিত্রা জানতে পারেন, এর জন্য দায়ী খাদ্যবাহিত ব্যাকটেরিয়া। এরা একটি বিষাক্ত পদার্থ শরীরে তৈরি করছে যা বমি, চোখের প্রদাহ এবং শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে রান্নার পর সংরক্ষণ করা খাবারে তৈরি হয়ে যাচ্ছে ব্যাসিলাস সেরিয়াস নামক একটি জীবাণু। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘরে রান্না করা ভাত এই ব্যাকটেরিয়াকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য যথেষ্ট নয়। গবেষক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, প্রচণ্ড তাপ, বন্যা এবং খরার কারণে খাদ্য সরবরাহ আরও বেশি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর জেরে খাদ্যবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচণ্ড তাপে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে খাদ্যকে সহজেই নষ্ট করে দিতে পারে। তীব্র বন্যায় পানির স্তর বৃদ্ধির ফলে পয়ঃনিষ্কাশন বা অন্যান্য অবাঞ্ছিত বর্জ্য পদার্থ ফসলকে দূষিত করে দিচ্ছে। উচ্চ আর্দ্রতা লেটুস এবং কাঁচা সবজিতে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, প্রতি বছর ৬০ কোটি মানুষ খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়, যার ফলে ৪,২০,০০০ জন মারা যায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে এবং প্রতি বছর ১,২৫,০০০ শিশু এই ধরনের রোগের কারণে প্রাণ হারায়। কৃষিকাজ পদ্ধতি এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলসহ অনেক কারণ এই সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ক্রমবর্ধমান গবেষণা তুলে ধরেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনও কীভাবে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
এই বছর বইরড়সবফরপরহব-এ প্রকাশিত একটি পর্যালোচনা গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাপমাত্রার প্রতি ১.৮ ফারেনহাইট (১ সেলসিয়াস) বৃদ্ধির সঙ্গে নন-টাইফয়েডাল সালমোনেলা এবং ক্যাম্পাইলোব্যাকটার, যা সাধারণত খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে মানুষকে অসুস্থ করে তুলতে পারে, তার ঝুঁকি ৫% বৃদ্ধি পায়। জার্নাল অব হেলথ মনিটরিং-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মিষ্টি পানির অভাব ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শোধিত বর্জ্য পানি ফসলে সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে যা সম্ভাব্যভাবে প্রাণী বা মানুষের মল থেকে রোগজীবাণু বহন করে। এটি দূষণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। জার্মান ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের খাদ্য সুরক্ষা ইউনিটের প্রধান এবং গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক মার্টিন রিখটার বলেছেন, যখন কৃষকরা সম্পূর্ণরূপে বর্জ্য পানি পুনঃব্যবহারের ওপর নির্ভর করে, তখন প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত এই পানিকে এমন একটি নিরাপদ স্তরে শোধন করা; যা মানুষের জন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি করবে না। কখনো কখনো রোগ সৃষ্টির জন্য রোগজীবাণুর একটি অনুলিপিই যথেষ্ট। তাই বর্জ্য পানি অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শোধন করতে হবে। হারোলি গ্রামের কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী পদ্মশ্রী সুতার বলেন যে, তার গ্রামের মানুষ নদীর পানি দিয়ে রান্না করা বন্ধ করে দিয়েছে এবং সম্পূর্ণরূপে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্যজনিত অসুস্থতার মধ্যে সংযোগ সম্পর্কে মানুষকে আরও বেশি সচেতন করে তুলতে হবে। পদ্মশ্রী সুতার বলছেন, প্রয়োজনীয় পরিমাণে শাকসবজি কিনে সঙ্গে সঙ্গে তা রান্না করে খাওয়াই শ্রেয়। খাদ্যব্যবস্থার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে পূর্বাভাস পেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। সেইসঙ্গে বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত গুদাম, পাত্র এবং খাদ্যপণ্য দূষণমুক্ত করার নতুন উপায় নিয়ে গবেষণা করার পক্ষেও কথা বলেন।
সূত্র : লাইভ সায়েন্স