দেশ বিদেশ
রিক্রুটিং চক্রের ফাঁদে ১৭ হাজার ৭৭৭ শ্রমিক
তদন্তে উঠে এসেছে ‘সব দায় এজেন্সির’
রাশিম মোল্লা
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবারজনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র সংগ্রহের পরও ১৭ হাজার ৭৭৭ জন মালয়েশিয়া যেতে না পারার পেছনে রিক্রুটিং এজেন্সিরই ‘সব দায়’ দেখছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি। রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ জানান, গতকাল বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, ভুক্তভোগীর পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়েছে কিনা এবং তাদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে আগামী ২৭শে আগস্ট জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
২০২৪ সালে নতুন-পুরাতন বিদেশি কর্মীদের কাজে যোগ দেয়ার জন্য ৩১শে মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিমানের টিকিট স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে ওই সময়ের মধ্যে যেতে পারেননি ১৭ হাজার ৭৭৭ জন বাংলাদেশি। এ নিয়ে সৃষ্ট সংকটের কারণ অনুসন্ধানে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
রিক্রুটিং এজেন্সিরই দায়: ক) বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ (সংশোধিত ২০২৩)-এর ধারা ১৫(ক) এবং এর তার প্রণীত বিধিমালা মোতাবেক অভিবাসী কর্মী বিএমইটি হতে বহির্গমন ছাড়পত্র সংগ্রহ করা, অভিবাসী কর্মীকে নিয়োগের ব্যবস্থা করা এবং তার কর্মপরিবেশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্পূর্ণভাবে রিক্রুটিং এজেন্সির দায়িত্ব। বিএমইটি হতে ক্লিয়ারেন্স কার্ড সংগ্রহ করার পর ১৭,৭৭৭ জন কর্মী মালয়েশিয়াতে প্রেরণ করতে না পারার ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের ওপর বর্তায়। খ) রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের পক্ষ থেকে কর্মী প্রেরণে ব্যর্থতার জন্য শেষ মুহূর্তে বিমানের টিকিট না পাওয়াকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কর্মী প্রেরণের সর্বশেষ তারিখের শেষের দিকে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নিয়োগানুমতি নেয়ার সংখ্যার চেয়ে বিএমইটি থেকে ক্লিয়ারেন্স কার্ড গ্রহণের সংখ্যা এবং প্রকৃত গমনকারীর সংখ্যা বহুগুণ বেশি। অর্থাৎ, রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ বিলম্বে মালয়েশিয়া প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় বিমানের টিকিটের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। এর টিকিট প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা দেখা দেয় ও মূল্যবৃদ্ধি পায়। গ) মালয়েশিয়া সরকার কর্মী প্রেরণের জন্য ৩১শে মে ২০২৪ সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করলেও নিয়োগকারী কোম্পানির চাহিদাপত্র প্রদান ও ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। ফলে, কর্মী প্রেরণের সময়ে শেষের দিকেও চাহিদাপত্র ইস্যু ও ভিসা প্রদান করা হয়। এতে করে অভিবাসন সংক্রান্ত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কর্মীদের গন্তব্য দেশে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল না।
সুপারিশ: ক) কর্মী প্রেরণের ব্যর্থতা এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। খ) যেসব কর্মী বিদেশে যেতে পারেননি তাদের কাছ থেকে গৃহীত অর্থ অবিলম্বে ফেরত প্রদানের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহকে নির্দেশনা প্রদান; গ) রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ ঘ) ভবিষ্যতে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করা হলে নির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চাহিদাপত্র ও ভিসা ইস্যুর তারিখ নির্ধারণ করা; ঙ) মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল ও সরাসরি মন্ত্রণালয়ে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে অভিযোগকারী কর্তৃক প্রেরিত ডকুমেন্টসহ অভিযোগের তালিকা এ মন্ত্রণালয়ের এনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রেরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।