দেশ বিদেশ
দুদকের মামলা বাতিল
ড. ইউনূসসহ ৭ জনের আপিল মঞ্জুর
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সাত ব্যক্তির করা আপিল মঞ্জুর করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ ড. ইউনূসসহ ৭ জনের আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেন। ড. ইউনূস বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্য ছয় আবেদনকারী হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম (বর্তমানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) ও এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
আপিলকারীদের পক্ষে শুনানি করেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানিতে ছিলেন। দুদকের আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অধ্যাপক ইউনূসসহ অন্যদের করা আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। অধ্যাপক ইউনূসসহ অন্যদের আবেদন খারিজ করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, তা বাতিল করা হয়েছে। ফলে অধ্যাপক ইউনূসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি বাতিল হলো। দুদক আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি করা একেবারেই ঠিক হয়নি। এখানে কোনো (ক্রিমিনাল লায়াবিলিটি) ফৌজদারি অপরাধের উপাদান ছিল না। এটা একজন নোবেল বিজয়ীর সাথে পুরোপুরি (আননেসেসারি হ্যারাসমেন্ট) অপ্রয়োজনীয় হয়রানি। এই পুরো কেসটাই ছিল একটা হিসাব- নিকাশের বিষয়। আর দেনা-পাওনা যেখানে কম-বেশি হয় সেটা অবশ্যই সিভিল কোর্টে নিষ্পত্তি হবে। সেজন্য কোনো মানিলন্ডারিং বা আত্মসাতের মামলা হবে না। আর এই মামলায় তো কোনো আত্মসাৎ না, কারণ দিয়েই দিছে পুরো টাকাটা। তাই এখানে কোনো ক্রিমিনাল লায়াবিলিটি থাকেই না। ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ছিল। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে তা আদালতে প্রমাণিত হলো।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৩০শে মে দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন। অপর ছয় কর্মকর্তা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এক পর্যায়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলাটির কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তৎকালীন শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা গত বছরের ৮ই জুলাই আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৪শে জুলাই হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন। হাইকোর্টের সে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে এর মধ্যেই রাষ্ট্র বা দুদকের পক্ষে পিপি মামলাটি প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। গত ১১ই আগস্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক। অন্যদিকে লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ২১শে অক্টোবর আপিল বিভাগ আদেশ দেন। সে অনুযায়ী আপিল শুনানি শেষে বুধবার রায়ের দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।