খেলা
মাঠে ফিরতে পারবেন কি তামিম!
ইশতিয়াক পারভেজ
২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার
মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন তামিম ইকবাল। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তার জন্য প্রতিটি সেকেন্ড ছিল মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই। বিকেএসপি-৩ মাঠে টস করে সোজা চলে গিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমে। সেখানে বুকে ব্যাথা, দ্রুত হাসপতাল যাওয়া এরপর ঢাকায় আসার জন্য প্রস্তুত হয় হেলিকপ্টার। কিন্তু তার আগে গাড়িতে জ্ঞান হারান তিনি। পাওয়া যাচ্ছিল না পালস। যে কারণে আবারো সেই কেপিজি হাসপাতালে, এরপর চলে সিপিআর, ডিসি শক, হার্টে রিং পরানো। অবশেষে নতুন জীবন পান বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ওপেনার। এই বছরের শুরুতে যদিও তিনি বিদায় বলেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। খেলছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। বিপিএলের পর তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন। সোমবার শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে হার্ট অ্যাটাক হয় তার। প্রশ্ন হচ্ছে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর তিনি আর মাঠে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে আর খেলতে পারবেন নাকি সেখান থেকেও যাবেন অবসরে? এটি পুরোপুরি অবশ্য তামিমের সিদ্ধান্ত। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার মাঠে ফেরা সম্ভব। তবে অন্তত ৩ থেকে চার মাস বিশ্রামে থাকতে হবে। এরপর খেলার মতো ফিট হলে তিনি আবারো হাতে তুলে নিতে পারবেন ব্যাট-বল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, ‘ওকে (তামিম) কমপ্লিট রেস্টে থাকতে হবে লম্বা সময়। তারপর এক্সারসাইজে ফিরতে হবে, এক্সারসাইজ কিন্তু ওর ট্রিটমেন্টের একটা অংশ। এক্সারসাইজ আর খেলা দুই জিনিস। ধীরে ধীরে ইন্টেনসিটি বাড়াতে হবে এক্সারসাইজের। এখন ধরেন কেউ যদি লো ইন্টেনসিটির এক্সারসাইজ করে, তাহলে ওয়েইট গেইনের একটা ব্যাপার থাকে। তাহলে খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোলেরও ব্যাপার থাকে। ফুল রেস্ট নিতে হবে।’
অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর তামিম ইকবালকে সাভার কেপিজি হাসপাতাল থেকে ঢাকার এভারকেয়ারে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পরিবার ও চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে। দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিসিডিএম এর ভাইস চেয়ারম্যান ও মোহামেডান ক্লাবের সদস্য সচীব মাসুদুজ্জামান। তিনি জানান ইফতারের পর তামিমকে পুলিশ প্রোটোকলের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সে সড়ক পথে ঢাকায় নিয়ে আসার কথা। তিনি বলেন, ‘সাভার থেকে পারিবারিক সিদ্ধান্তই এটা যে তাকে ঢাকায় নেয়া হবে। ডাক্তারের মতামত নিয়েই করা। ইফতারের পরে গাড়িতে নিয়ে আসবে। পুলিশ প্রোটকলও পাবে। সর্বোচ্চ মহল থেকে সিদ্ধান্ত আসছে। পুরো রাস্তায় যানযট। ইফতারের পর রাস্তা ফ্রি বলেই ওই সময় বের হওয়ার সিদ্ধান্ত।’ তামিমের অবস্থা নিয়ে দেবাশিষ চৌধুরী বলেন, ‘আমি পার্সোনালি দেখে বের হলাম। কেবিনে স্থানান্তর করছে। স্ট্যান্ডার্ড কোনো সাপোর্ট লাগছে না, মানে স্যালাইন বা অক্সিজেন। সে নিজেই হেঁটে টয়লেটে যাচ্ছে। সবই তো ভালো লক্ষণ। ছাড়ার ব্যাপারটা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ ৪৮-৭২ ঘণ্টা রাখতে চায়। যদিও প্রথম ২৪ ঘণ্টা বেশি ক্রুশাল, তবে ওরা তো চাইবে ৪৮ ঘণ্টা, ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকুক। তবে পরিবারের সিদ্ধান্তটাই আসল। যদি তাকে সেখানকার চিকিৎসকরা অনুমতি দেয় তাহলে ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। রোগী চলে আসতে চাইলে নিজের রিস্ক নিয়ে চলে আসতে হবে।’
অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে রোজায় ঢাকা লীগ আয়োজনের কারণে ঝুঁকিতে পরছেন ক্রিকেটাররা। তামিমের এই ঘটনার পর বিষয়টি আবারো এসেছে বড় আলোচনায়। রোজায় খেলা নিয়ে দেবাশিষ চৌধুরী বলেন, ‘এটা একটা কমন সেন্স, তবে প্রমাণ কী? আপনার বডি যদি টু লিটার ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, তাহলে খেলায় প্রভাব পড়বে। কিন্তু কথা হচ্ছে, রোজা রাখার ডিহাইড্রেশন, অন্য কিছু নিয়ে গবেষণা আছে। তবে রোজা রাখার যে প্রভাব, সেটা তো নেই। এভিডেন্স ছাড়া তো বলা যাবে না। অন্য খেলা এক দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়, ক্রিকেট পাঁচ দিন ধরেও খেলতে হয়। ফলে এটার আসলে প্রভাব কী থাকে, ব্লাড পিকচার, হাইড্রেশন স্টাডি একটা গবেষণা তো লাগবে। আমরা কমন সেন্স থেকে বলি। এখন রোজা রেখে একজন খেলোয়াড় সেঞ্চুরি করে ফেলছে না? এটার ব্যাখ্যা কী দেবেন? সায়েন্টিফিক পেপার না পেলে কিছুই বলা যাবে না।’
অন্যদিকে গতকাল বেলা ১১টার পর হাসপাতালে আসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবু জাফর ও হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ । প্রায় আধঘণ্টা সিসিইউ-তে অবস্থান করেন তারা। তামিম ও তার মা ও স্ত্রী এবং বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন তারা। তারা জানান ২৪ ঘণ্টার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর তামিমের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। হার্টে স্টেন্ট বসানোর প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা চিকিৎসক মনিরুজ্জামান মারুফ জানান, অল্প অল্প হাঁটাচলা করেছেন তামিম। পরে সংবাদ সম্মেলনে তামিমের সার্বিক অবস্থা জানানোর এক পর্যায়ে আবু জাফর বলেন, তিন মাস পর খেলাধুলায় ফেরার অনুমতি পেতে পারেন তামিম। তিনি বলেন, ‘সামনের তিন মাস পুরোপুরি পর্যবেক্ষণে থাকবেন তামিম। তার শারীরিক অবস্থা কী, কোনো ধরনের অবনতি হচ্ছে নাকি উন্নতি হচ্ছে- এগুলো বিবেচনা করে নিশ্চয়ই একটা মেডিকেল বোর্ড তাকে অনুমতি দেবে যে, আপনি এখন খেলতে পারবেন।’
পাঠকের মতামত
হার্টে ব্লক কি শুধু একটাই, না আরো আছে? আরো থাকলে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে, না হলে অন্য ব্লকগুলো ডেভেলপ করবে।
তিনি সুস্থ হয়ে আর মাঠে ফিরতে পারবেন কি পারবেননা এই আলাপ এখন একদম জরুরী না তিনি আর কখনো মাঠে না ফিরলেও সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে পরিবারের সদস্যদের মাঝে ফিরে আসুন এই প্রার্থনাটাই এখন জরুরী।
তামীমের অবসর নেওয়ার বয়স পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই, তামীম যেখানে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে সেখানে মাঠে ফেরার খবর শিরোনাম হচ্ছে এটা কি যুক্তিযুক্ত?