ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

আসছে বাজেট হবে ব্যবসা বান্ধব: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(১ মাস আগে) ২০ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:২৫ অপরাহ্ন

আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেট ব্যবসা বান্ধব হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। এ সময় শুল্ক পদ্ধতি নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীরা যেসব সম্যসায় পড়েন, আগামী বাজেটে সেগুলোয় নজর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সভায় অর্থ উপদেষ্টার পাশাপাশি অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ছিলেন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিসিআইসহ অন্যান্য চেম্বারগুলোর প্রতিনিধি ও প্রশাসকরা।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশে এখনও ডলার সংকট রয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বেশি। খেলাপি ঋণও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা নানা দিক থেকে চাপের মধ্যে রয়েছেন। আর্থিক খাতের সংকট তো রয়েছেই। নতুন কোনো বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। এরইমধ্যে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে কথাবার্তা চলছে। সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। অথচ আমাদের সামগ্রিক প্রস্তুতি দুর্বল। এজন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ার সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটা ব্যবসা-বাণিজ্য বান্ধব বাজেট দেয়ার চেষ্ট করছি। যেন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ে আমরা সে রকম উদ্যোগ নেবো। কিছু কিছু জায়গায় অনলাইন প্রক্রিয়ার ঘাটতি আছে। আমরা সেসব জায়গাতেও এড্রেস করার চেষ্টা করছি। সামগ্রিকভাবে বাজেটটাকে আমরা ব্যবসা বান্ধব করার কথাই ভাবছি।

আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব। যাতে দেশের জিডিপি ও কর্মসংস্থান বাড়ানো যায় এমনটা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছি। আমরা চাই ব্যবসা বান্ধব বাজেট। ব্যবসা উপযোগী কর নীতি। যাতে সব ধরনের বিনিয়োগ বাড়ানো যায়। জিডিপি ও কর্মসংস্থান যাতে বাড়ে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের মাধ্যমে সুপারিশ দিয়েছে। করের ব্যাপারে মতামত তুলে ধরেছে। কিছু কিছু খাতে সুবিধা কম আছে। সর্বশেষ যে বিষয়ে ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছে তা হলো কর কাঠামোর প্রক্রিয়া যেন অনলাইনে করা হয়। এছাড়া পেমেন্ট নিয়ে যে জটিলতা তা সমাধান চেয়েছে।    

বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্টাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আজ যে আলোচনা তা হলো প্রাক-বাজেট। কিন্তু যা দেখলাম তা হলো আয়কর বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্পর্কিত ইস্যুর উপর শুনতে চেয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। অন্য ইস্যুগুলো তিনি শুনতে চাচ্ছিলেন না। ব্যাংকিংসহ অন্য খাতের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তবে উপদেষ্টার কার্যক্রম খুবই ইতিবাচক মনে হয়েছে। তিনি চান দেশটা এগিয়ে যাক। কিছু কিছু জায়গায় কর যাতে আহরণ করতে পারে এনবিআর। এনবিআরের কর আদায় যাতে বাড়ে তার জন্য কঠিন ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে আমাদের জন্য যেটা চিন্তার বিষয় শিল্পে কিভাবে সক্ষমতা বাড়ানো যায়। এ বিষয় নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কথা বলা হয়নি। তিনি এসব জায়গায় আলোচনা করতে চাচ্ছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক সংক্রান্ত বিষয় ও আর্থিক সহায়তার বিষয়গুলো লিখিত আকারে চেয়েছেন উপদেষ্টা।  

বিসিআই সভাপতি বলেন, এনবিআর গ্রোস মুনাফার ভিত্তিতে কিভাবে কর অ্যাসেসমেন্ট করে। এই কর ও শুল্ক কাঠামোতে আমাদের আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণ করা উচিত। সেটা কিছু কিছু বিষয়ে একমত হয়েছে এনবিআর। বাংলাদেশের কর হিসাব যেভাবে করা হয় তা প্রক্রিয়া সঠিক নয়। দেশের পোশাক খাত ১ শতাংশ দিচ্ছে। যদিও এটা চূড়ান্ত হিসাব নিষ্পত্তি নয়। লোকসান হলেও ওই ১ শতাংশ দিচ্ছেন। দ্বৈতকরের কিছু বিষয় রয়ে গেছে। সে জায়গাগুলো এনবিআর সেটেল্ট করবে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র শিল্পকে আরও প্রতিযোগী করার জন্য এসএমই খাতের ভ্যাট আরও কমানো উচিত। ক্ষুদ্র শিল্পকে আটবছর মেয়াদী কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার উচিত আমরা মনে করি। এসব প্রস্তাব আমরা করেছি।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদা হাতেম বলেন, কর পদ্ধতি নিয়ে অনেক দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। এটার এবার একটা পরিবর্তন হবে। এনবিআরের চেয়ারম্যান এমন আশ্বাস দিয়েছেন। এই পরিবর্তন হচ্ছে-যেমন এখন ১ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নিচ্ছে। এটা চূড়ান্ত হিসাব নয়। আবার এই অর্থ পুরোপুরি সমন্বয় হচ্ছে না বা ফেরত দিচ্ছে না। এক কোটি টাকা এআইটি নিলেও ওই ব্যবসায়ী যখন ২০ লাখ টাকা করের রিটার্ন দাখিল করছে। তখন অগ্রিম আয়কর কেটে রাখলেও তা ফেরত দিচ্ছে না। এতে করের হার কত দাঁড়াচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। এটা পরিবর্তন প্রয়োজন। যে আইন দ্বারা এটা করা হয়েছে ওই আইনটি সঠিক নয়।

তিনি বলেন, আয় করব কর দেব। কিন্তু এখন যা হচ্ছে মোট বিক্রির উপর কর নেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে এটা যৌক্তিক নয়। কর এর বোঝা আর না বাড়িয়ে করজাল সম্প্রসারণ করতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, আসছে বাজেটে ⁠কর ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে হবে। ⁠কর্পোরেট কর অনলাইন করতে হবে। ⁠ইউনিফায়েড সিঙ্গেল ডিজিট ভ্যাট করতে হবে। ⁠গত ৩ বছর ধরে অর্থনীতি চাপের মধ্যে থাকায় ভালো ব্যবসায়ীরা ডিফল্ট হয়ে যাচ্ছে! এর থেকে পরিত্রাণ এর জন্য ন্যূনতম ৬ মাস এর মোরাটোরিয়াম পিরিয়ড দিতে হবে ও সহজ শর্তে ঋণ রেস্ট্রাক্টারিং করার নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হবে। 

পাঠকের মতামত

ব্যবসা বান্ধব নয় বাজেট জন বান্ধব করুন।

মিলন আজাদ
২১ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status