ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

গাজায় বর্বরতা, অধিবাসীদের দুর্বিষহ বেদনা

মানবজমিন ডেস্ক

(২ দিন আগে) ১৮ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:০৮ অপরাহ্ন

mzamin

দীর্ঘ পনেরো মাস পরে নিজেদের আবাস্থলে ফিরতে পেরে আনন্দে আত্মহারা গাজাবাসীর সামনে আবারো নেমে এসেছে দুর্বিষহ বেদনার সময়। ইসরাইলি বোমার আঘাতে মুহূর্তেই হারিয়ে গেছে তাদের আনন্দ। পবিত্র রমজানেও রেহাই পাচ্ছেন না তারা। একদিকে সব মানবিক ত্রাণ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। অন্যদিকে সোমবার দিবাগত রাত থেকে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে গাজাকে নরকে পরিণত করেছে তারা। এর  দুঃসহ স্মৃতি স্মরণ করে আল-জাজিরাকে ওই রাতের বর্ণনা দিয়েছেন দেইর-আল-বালার অধিবাসী মারাম হামিদ। তিনি বলেন, এটা কোনো দুঃস্বপ্ন ছিলো না। এটি বাস্তব। রাত ২টা ১০ মিনিটে বিমান হামলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় মারাম পরিবারের। মনে হলো চারপাশ কেঁপে উঠলো। ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে মারামে’র মেয়ে বানিয়াস। সে তার পিতা-মাতাকে জিজ্ঞাসা করে কী হচ্ছে? মারামের পাশেই ছিলো বানিয়াস। ভয়ে কাঁদছিলো। তবে মারাম তাকে আশ্বস্ত করতে পারেননি। তিনি বলেন, আমার মন সম্পূর্ণ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছিলো। প্রশ্ন জাগে হচ্ছেটা কী? আবার বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে? কে আমাদেরকে আক্রমণ করছে? একবার মনে হলো- ওই সব ক্ষেপণাস্ত্র কী ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে? না কি ইসরাইল থেকে? এগুলো কী আমাদেরকে উদ্দেশ্য করেই ছোড়া হচ্ছে? মারাম বলেন, তিনি তার ফোনের কাছে ছুটে যান। ওই সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি গ্রুপে স্ক্রল করতে থাকেন তিনি। সবাই জিজ্ঞাসা করছিলো কী হচ্ছে? এর কয়েক মিনিট পর খবর আসতে থাকে দেইর-আল-বালা’র একটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া হামলা চালানো হয়েছে নুসেইরাতে একটি বাড়িতে। খান ইউনিসের আল-মাওয়াইসিতে কয়েকটি তাঁবুতে জায়গা দেয়া হয় গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের। বোমার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ওই সব তাঁবু। রাফায় কামান হামলা চালানো হয়। হামলা চালানো হয় জাবালিয়ার একটি আবাসিক ভবনে। এছাড়া আল-কারামার পাশ্ববর্তী এলাকাতেও হামলা চালানো হয়। এসময় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে একটি পরিবার। মানুষ সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করতে থাকে। তারা বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলের প্রতি সাহায্যের আহ্বান জানান। এর মাঝেই অব্যাহত থাকে বোমা বর্ষণ। ছিন্নভিন্ন দেহের ছবিতে ছেয়ে যায় চারিদিক। মারাম বলেন, যে দুর্বিষহ স্মৃতি আমরা ভুলতে বসেছিলাম তারই পুনরাবৃত্তি হলো। এর কিছুক্ষণ পরেই ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে তারা যুদ্ধবিরতি বাতিল করেছে এবং গাজার বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করেছে। মারামের বোন প্রশ্ন করেন- এর মানে কী? অনেক যুদ্ধ হয়েছে। আমরা পুনরায় যুদ্ধ চাই না। বোমা হামলা চাই না। তিনি বলেন, সেই একই ভয়াল দৃশ্য, একই ভোগান্তি একই দুঃস্বপ্ন। তখনো ফোনে স্ক্রল করছিলেন মারাম। বলেন, চারিদিক ছোট বাচ্চার মৃতদেহের ছবি, জ্বলন্ত তাঁবু ও ধ্বংসস্তূপে মিশে যাওয়া ভবনের ছবিতে ছেয়ে গেছে। যুদ্ধ ঠিক যেখানে শেষ হয়েছিলো সেখান থেকেই পুনরায় শুরু হলো। মারাম বলেন, গাজা এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি আগামী দিনের পরিকল্পনা করতে পারবেন না। কারণ এখানে এক মুহূর্ত পর আপনার সঙ্গে কী হবে তা কেউ জানে না। বলেন, গত রাতে আমি আমার পিতা ও দুই বোনকে ইফতারের দাওয়াত দেই। আমি তাদেরকে আমাদের সঙ্গে থাকতে রাজি করাই। আমরা সকালে উত্তরের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। ঈদ উপলক্ষ্যে বাচ্চাদের জন্য কাপড় কেনার পরিকল্পনা করি। কিন্তু কী হলো? এক মুহূর্তেই সব ওলট-পালট হয়ে গেলো।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status